Advertisement
E-Paper

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য জনমত গড়ছে কীর্ণাহার

আগুন নিভে গিয়েছে বহু দিন আগে। উনুনে আজও লেগে রয়েছে পোড়া দাগ। আসলে এখন আর কীর্ণাহার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রান্না ঘরে উনুন জ্বালানোর প্রয়োজনই পড়ে না। কারণ কাগজে কলমেই ১২ ঘণ্টার বেশি পরিষেবা মেলে না ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তাই রোগীদের জন্য রান্নার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। দীর্ঘ দিনের অব্যবহারে রান্নাঘর আজ ভগ্নপ্রায়।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৯
যানজটে থমকে কীর্ণাহার।  ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

যানজটে থমকে কীর্ণাহার। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

আগুন নিভে গিয়েছে বহু দিন আগে। উনুনে আজও লেগে রয়েছে পোড়া দাগ। আসলে এখন আর কীর্ণাহার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রান্না ঘরে উনুন জ্বালানোর প্রয়োজনই পড়ে না। কারণ কাগজে কলমেই ১২ ঘণ্টার বেশি পরিষেবা মেলে না ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তাই রোগীদের জন্য রান্নার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। দীর্ঘ দিনের অব্যবহারে রান্নাঘর আজ ভগ্নপ্রায়।

শুধু রান্নাঘরই নয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধিকাংশ আবাসনেরই কার্যত ভগ্নদশা। প্রাচীর বিহীন স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে দিনের বেলায় অবাধে ঘুরে বেড়ায় গরু-ছাগল। রাতে হয়ে ওঠে অসামাজিক কাজের স্বর্গরাজ্য। অথচ এমন ছিল না দিন। বছর সাতেক আগেও ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী এবং পরিজনদের ভীড়ে সরগরম থাকত স্বাস্থ্যকেন্দ্র। গলায় টেথো ঝুলিয়ে মধ্যরাতেও ডাক্তারকে ওয়ার্ডে ঘুরতে দেখা যেত। সাদা অ্যাপ্রোন পড়া নার্সেরাও কোয়ার্টার থেকে যেতেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সহজে আলাদা করা যেত না বড় শহরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সঙ্গে।

এমন কী ২০০৬ সালে মাতৃমঙ্গল প্রকল্পে স্বাভাবিক প্রসবে রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। কীর্ণাহার ওইসময় ভারপ্রাপ্ত চিকিত্‌সক ছিলেন চন্দন ঘোষ। সেই ছবি এখন ইতিহাস। চন্দনবাবু অন্যত্র চলে যাওয়ার পর থেকেই দূরবস্থা শুরু হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ১০ শয্যার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৩ জন চিকিত্‌সক, ৭ জন নার্স, ১ জন ফার্মাসিষ্ট এবং ৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। কিন্তু চিকিত্‌সক, নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রয়েছেন যথাক্রমে ২, ৪ এবং ৪ জন। একমাত্র ফার্মাসিষ্টকে তুলে নেওয়া হয়েছে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এর ফলে কার্যত জোড়াতালি দিয়ে চলছে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সকাল ৭টায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলে। সন্ধ্যা ৭ টায় সবাই বাড়ি চলে যান। রোগী ভর্তি নেওয়া হলেও তার স্থায়িত্বের মেয়াদ ওই ১২ ঘণ্টাই। সন্ধ্যার আগে রোগী সুস্থ হলে ভাল, না হলে অন্যত্র রেফার।

এই কারণেই নিরুপায় না হলে, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী ভর্তি করাতে চান না। ৩৪ বছর ধরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গেটের মুখে খাবারের দোকান চালাচ্ছেন সদানন্দ দাস বৈরাগ্য, অলক দে’রা। তাঁরা বলেন, “আমাদেরও পড়ে পড়ে মার খেতে হচ্ছে। একসময় রোগীর পরিজনদের ভীড় লেগেই থাকত। ভাল বিক্রি হত। ১২ ঘণ্টায় রোগী ভাল হবে তার তো নিশ্চয়তা নেই। তাই অধিকাংশই সরাসরি অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।” স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিত্‌সক সুমন চৌধুরি বলেন, “উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবেই আগের মতো পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি উর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।”

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরানোর দাবিতে জনমত গড়তে সম্প্রতি পথে নেমেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি। তাঁরা এলাকায় একগুচ্ছ দাবি সম্বলিত ফ্লেক্স ছেয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে কলেজ, থানা, বাইপাস রাস্তা, পুরসভারও দাবিও তুলেছেন তাঁরা। কাছাকাছির মধ্যে কলেজ বলতে রয়েছে ১০/১৫ কিমি দূরে লাভপুর কিংবা খুজুটিপাড়া। উচ্চ শিক্ষা বিশেষ করে নারী শিক্ষার প্রসার ব্যাহত হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তাই এলাকায় একটি মহিলা কলেজ স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। কীর্ণাহার গার্লস কলেজ নামে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সম্পাদক অরুণ রায় এবং সভাপতি সুবীর মণ্ডল। তাঁরা বলেন, “কলেজ স্থাপনের জন্য ১৫ বিঘা জমি এবং ২০ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু বারবার আবেদন করেও সরকারের কোনও সাড়া মেলেনি।”

শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উদ্যোক্তারা লিখিত ভাবে আবেদন করলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।”

থানা গড়ার জন্যও প্রায় ১৮ বছর আগে ১৭ বিঘা জমি প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এলাকার মানুষ। সেই জমির একাংশে প্রশাসন একটি মার্কেট এবং পুলিশ ফাঁড়ি তৈরি করেছে। ফাঁড়িকে থানায় রূপান্তরের দাবিতে সম্প্রতি নাগরিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসনকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আশিস দে বলেন, “কীর্ণাহার, বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্ত ঘেঁষা। সম্প্রতি খাগড়াকাণ্ডের সঙ্গেও জুড়ে গিয়েছে সন্নিহিত এলাকার নাম। তাই অপবাদ প্রবণতার আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু প্রশাসন বছর তিনেক আগে থানা গড়ার প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে তা আজও কার্যকরী করেনি।”

এ সবের পরেও কীর্ণাহার নানা সমস্যায় জর্জরিত। যার একটি যানজট। সিউড়ি-কাটোয়া সড়কের সঙ্গে চৌমাথায় মিশেছে নানুর-মিরিটি রাস্তা। দিনের বেশিরভাগ সময় যানজটে থমকে থাকে এই চৌমাথা। তার উপরে গোটা শহরজুড়ে রাস্তার ধারে অস্থায়ী দোকানপাট গজিয়ে ওঠায় যানজট লেগেই রয়েছে। ওই রাস্তায় অত্যধিক যান চলাচলের জন্য ভালভাবে যাতায়াত করা যায় না। বিশেষ করে মোতিসায়র বাজারের জন্য কার্যত নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। একসময় ওই বাজার ছিল মুলত সপ্তাহে দু’দিনের আধবেলার হাট। বর্তমানে তা নিত্যবাজারের রূপ নিয়েছে।

প্রশাসন অবশ্য ওই সমস্যা দূর করার জন্য বেশ কয়েক বছর ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায় ১০টি ঘর-সহ ৩টি শেড তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু সবজি ব্যবসায়ীদের সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভবনি। বিকল্প হিসাবে বাইপাস রাস্তা নির্মাণও বাস্তবায়িত হয়নি। সংশ্লিষ্ট কীর্ণাহার ১নং পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অমরনাথ ভট্টাচার্য্য বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে কীর্ণাহারের যানজট মুক্তির অন্যতম উপায় হল বাইপাস রাস্তা নির্মাণ। কিন্তু রামকৃষ্ণপুর গেট থেকে কালিকাপুর পর্যন্ত বাইপাস রাস্তার প্রকল্প তৈরি করে জমা দেওয়া হলেও তা রূপায়িত হয়নি।

সবকিছু ছাপিয়ে জোড়ালো হয়ে উঠেছে পুরসভা গঠনের দাবি। কীর্ণাহার-১, ২ এবং দাসকলগ্রাম-কড়েয়া-১, ২ নং পঞ্চায়েত ‘আপার নানুর’ হিসাবে পরিচিত স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই ‘আপার নানুর’কে ঘিরে অনায়াসেই কীর্ণাহারকে পুরসভা গড়া যায়। নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরা বলেন, “কীর্ণাহারের উন্নয়নে আমাদের বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের দাবিগুলি খতিয়ে দেখে যর্থাথতা বিচার করে রূপায়ণের ব্যবস্থা করা হবে।”

বিডিও মৃণালকান্তি বিশ্বাস বলেন, “কীর্ণাহারের যানজটের অভিযোগ সত্য। ওই সমস্যা মোকাবিলার জন্য আমরা ইতিমধ্যে কীর্ণাহারে কর্মতীর্থ নামে একটি মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করেছি। তারই সংলগ্ন জায়গায় থানা করার জায়গা চিহ্নিত হয়েছে। থানা হলে, ওই এলাকায় বিপণন সম্ভবনা বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসায়ীরা সেক্ষেত্রে সেখানে যাওয়ার আগ্রহ দেখাবেন। ব্যবসায়ী সমিতি ও স্থানীয় বাসিন্দারা এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে প্রকল্প রূপায়ন সম্ভব হবে।”

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।

ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর বীরভূম’।

ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp

অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বীরভূম বিভাগ, জেলা দফতর

আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

kirnahar amar shohor health centre arghya ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy