Advertisement
E-Paper

হতদরিদ্রদের স্বপ্ন পূরণ করল পঞ্চায়েত

বছর শুরুর দিনটা যে এমন আনন্দে কাটবে তা স্বপ্নেও ভাবেননি ভিক্ষাজীবী দুলাল গড়াই, পরিচারিকা ভগবতী দাস কিংবা দিনমজুর বাবুলাল হেমব্রমরা। অন্য বার এই দিনটিতেই তাঁদের চোখের সামনে দিয়েই গাড়ির মাথায় হাঁড়ি-কড়াই চাপিয়ে বক্স বাজিয়ে হুস করে বেরিয়ে যেত ‘পিকনিক পার্টি’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪১
চলছে রান্না। ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

চলছে রান্না। ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

বছর শুরুর দিনটা যে এমন আনন্দে কাটবে তা স্বপ্নেও ভাবেননি ভিক্ষাজীবী দুলাল গড়াই, পরিচারিকা ভগবতী দাস কিংবা দিনমজুর বাবুলাল হেমব্রমরা। অন্য বার এই দিনটিতেই তাঁদের চোখের সামনে দিয়েই গাড়ির মাথায় হাঁড়ি-কড়াই চাপিয়ে বক্স বাজিয়ে হুস করে বেরিয়ে যেত ‘পিকনিক পার্টি’। কোথাও আবার খোলা মাঠ সরগরম হয়ে উঠত পিকনিক পার্টির হুল্লোড়ে। লজ্জার মাথা খেয়ে অনাহুতের মতো ওইসব পিকনিকে ফাই ফরমাস খেটে দিয়ে সবার শেষে জুটত অনুকম্পার খাবার। চোখ ফেটে জল এলেও পেটের জ্বালা জুড়াতে গিলতে হত হতশ্রদ্ধার ওই খাবারই। নিজেদের ওইরকম পিকনিকের সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। কিন্তু এ বারে বাবুলালদের দীর্ঘদিনের লালিত সেই পূরণ করে দিল পঞ্চায়েত।

এলাকার দুঃস্থদের নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পিকনিকে জমজমাট হয়ে উঠল কীর্ণাহার ফাঁড়ি সংলগ্ন মাঠ। সব মিলিয়ে প্রায় সাত শতাধিক মানুষ হয়েছিলেন ওই পিকনিকে। তাঁদের অধিকাংশই হতদরিদ্র। ওই পিকনিকের আয়োজন করেছেন সংশ্লিষ্ট কীর্ণাহার ১ পঞ্চায়েতের কর্মকর্তারা। দিন কয়েক আগে থেকেই পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ভিক্ষাজীবী, পরিচারিকা, রিকশাচালক, দিনমজুরদের এ দিনের পিকনিকে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। অন্যদেরও খবরটি জানিয়ে দিতে বলা হয়। সেই মতো এ দিন সকাল থেকেই ভিড় জমতে শুরু হয়। কারণ উদ্যোক্তারা বলেই দিয়েছেন, নিছক ভোজনের মতো পাত পেড়ে খেয়েদেয়ে চলে যাওয়া নয়। পিকনিকের মতো হাতে হাত মিলিয়ে নিজেদেরই সবকিছু করতে হবে। সেই মতো তুলে রাখা জামা-কাপড় পরে সকালেই হাজির হয়ে গিয়েছেন ভিক্ষাজীবী মিনি দাস, পরিচারিকা কুড়বালা মেটে, দিনমজুর বামাপদ মেটে, রিকশাচালক জয়দেব দাসরা।

এই পিকনিকের তদারকিতে ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান শিবরাম চট্টোপাধ্যায়, নানুর পঞ্চায়েত সমিতির মত্‌স্য কর্মাধ্যক্ষ প্রশান্ত দাস প্রমুখ। নিচ্ছক সস্তা প্রচারের লোভেই কি এই আয়োজন? এ প্রশ্নে তাঁরা বলেন, “বিভিন্ন সময়ে পিকনিক করতে গিয়ে অনাহুতদের দেখেছি। তখনই ঠিক করি সুযোগ এলে ওঁদেরও পিকনিকের স্বাদ দেব। প্রয়োজনে আমরা মিটিং’এ চা-টিফিন কম খাব। সেই খরচ বাঁচিয়ে প্রতি বছরই ওই আয়োজন করব।”

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, টিফিনের ঘুগনির কড়াই-এ একদিকে যখন খুন্তি নাড়ছেন মিনি দাস তখন কুড়বালা তরকারির হাঁড়িতে ফোড়ন দিচ্ছেন। আবার রান্নার কাজে গলদঘর্ম জয়দেব দাসকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিচ্ছেন ভগবতী দাস। শুধু রান্না-বান্নাই নয়, মাঝে মিনি দাস প্রধানের কাছে আবদার করলেন -‘দাদা সেই যে গো, ট্রেনে শুনেছিলাম ‘রাঙ্গা মাটির’ গানটা একবার বাজাতে বলুন না।’ সঙ্গে সঙ্গে প্রধানের নির্দেশে বক্সে বেজে উঠল মিনিদেবীর প্রিয় রবিঠাকুরের গানটি। আয়োজন সামান্যই। টিফিনে ঘুগনি, মিষ্টি, মুড়ি। দুপুরে খিচুড়ি, ফুলকপির তরকারি, ছ্যাচড়া আর টক। পরিতৃপ্তির সঙ্গে পাঁচকড়ি দাস, সাহিদা বিবিরা বলেন, “আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি এমন আয়োজনের কথা। এতদিন অন্যদের পিকনিক করা দেখেছি। ওইসব পিকনিকে ফাইফরমাস খেটে দিয়ে খেতেও পেয়েছি। কিন্তু সে খাবার ছিল অসম্মানের। আজ আমরা পঞ্চায়েতের দৌলতে নিজেদের পিকনিকের স্বাদ পেলাম।”

kirnahar poor picnic panchayat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy