কুরবান শা।
ভাইকে নেতা হিসেবে দেখতে চাননি নিহত কুরবানের দাদা আফজল শা। চেয়েছিলেন ভাই ব্যবসা নিয়েই থাকুক। রাজনীতিতে আসা নিয়ে বাবা-মা ও পরিবারের তীব্র আপত্তির কথা জানতে পেরে এক সময় বাড়ি ছাড়তে চেয়েছিলেন কুরবান। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ যে তাঁকে সব সময় টানে সে কথা পরিবারকেও জানিয়েছিলেন সদ্য মাধ্যমিক পাশ করা কুরবান।
বড়দা আফজলের সঙ্গে মুম্বইয়ে ইন্টিরিয়র ডেকরেশনের ব্যবসা করতেন কুরবান। রাজনীতিতে আসতে না দিলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন, কুরবানের এই হুমকিতে বাধ্য হয়ে তাঁকে রাজনীতিতে নামার অনুমতি দেয় পরিবার। ২০০৭ সালে যখন রাজ্য জুড়ে প্রবল বাম হাওয়া সেই সময় মুম্বই থেকে মাইশোরায় নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন কুরবান। যোগ দেন তৃণমূলে। বছর কুড়ির কুরবানের দাপটে সন্ত্রাসের শিরোনামে থাকা মাইশোরায় সিপিএম নেতার কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তৃণমূলের যুব নেতা হিসেবে অচিরেই উঠে আসে কুরবানের নাম। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মাইশোরা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হন কুরবান। হলেন যুব নেতা থেকে তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি। ২০০৯ থেকে ২০১৯ এই দশ বছরে প্রতিটি নির্বাচনে পাঁশকুড়ায় দলের অন্যতম কারিগর ছিলেন কুরবান। পাঁশকুড়ায় অধিকারী পরিবারের মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি হন ২০১৮য়। দলের নির্দেশে স্ত্রী সাইদা সাবানা বানুকে মাইশোরা পঞ্চায়েতের প্রধান করেন। অল্প বয়সে দলে দ্রুত উত্থান ঘটতে শুরু করে কুরবানের। যার জেরে দলে গোষ্ঠীকোন্দলও তৈরি হয়। তবে প্রকাশ্যে কোনওদিন দলের কোনও নেতার বিরুদ্ধে কথা বলেননি। গোষ্ঠীকোন্দলও সামনে আসতে দেননি।
রাজনীতির বাইরে নানা কাজের সূত্রে এলাকাতেও যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন কুরবান। দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে অসহায় ব্যক্তি, সাহায্যের জন্য কেউ গেলেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে কোনও দলের রং দেখতেন না। ফলে সিপিএম, সিপিআই এমনকী বিজেপির বহু নেতা-কর্মীর সঙ্গে কুররবানের সুসম্পর্ক ছিল। ২০১১ সালে রাজ্যে পালা বদলের পর পাঁশকুড়ায় সিপিআইয়ের দলীয় কার্যালয় তৃণমূল দখল করে নেয় বলে অভিযোগ। আড়াই বছর আগে সেই কার্যালয় সিপিআইকে ফিরিয়ে দেয় তৃণমূল। সে ক্ষেত্রে কুরবানের ইতিবাচক ভূমিকা ছিল বলে জানিয়েছেন সিপিআই নেতৃত্ব। শুধু তাই নয় ওই সময় সিপিআই নেতা চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুরের আবেদনে ওই দলীয় কার্যালয়ে বেশ কিছু সামগ্রী কেনার টাকা দিয়েছিলেন কুরবান। ভিন্ন রাজনীতি আদর্শ নিয়ে চললেও অন্যান্য দলের নেতাদের সাথে কুরবানের সম্পর্ক ছিল এই রকমই। তাঁর হাত ধরে পিছিয়ে পড়া মাইশোরা পঞ্চায়েতে উন্নয়নমূলক কাজের তালিকাও কম নয়। রাস্তাঘাট নির্মাণ, পথবাতি বসানো, সরকারি পরিষেবা প্রদানে এই পঞ্চায়েত পাঁশকুড়া ব্লকে অনেকটাই এগিয়ে।
শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন পাঁশকুড়ার বর্ষীয়ান সিপিআই নেতা চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর। তাঁর কথায়, ‘‘ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করলেও কুরবান কখনও আমাদের ছোট করতেন না। যে কোনও প্রয়োজনে ওর সাহায্যের হাত ছিল প্রসারিত। রাজনীতিতে এই সৌজন্যটাই থাকা উচিত। পাঁশকুড়ার এক যোগ্য নেতাকে হারাল।’’
দাদা আফজলের আক্ষেপ, ‘‘ওকে নেতা হিসেবে দেখতে চাইনি। তাই রাজনীতিতে নামতে বারণ করেছিলাম। কথা শুনলে আজ এ দিন দেখতে হত না আমাদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy