শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে গেল রাজভবনে ঘোষিত গণবিবাহের অনুষ্ঠান। সিভি আনন্দ বোসের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৩ নভেম্বর রাজভবনে এই বিশেষ কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাজভবনের পক্ষ থেকে নতুন করে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে কোথাও গণবিবাহের উল্লেখ নেই। ফলে স্বভাবতই জল্পনা তুঙ্গে— কেন হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলাল রাজভবন?
এর আগে ৮ নভেম্বর রাজভবনের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়েছিল, তিন বছর পূর্তির দিন রাজভবনে গণবিবাহের আয়োজন করা হবে। সেই সঙ্গে একটি ইমেল ঠিকানা দিয়ে আগ্রহী পাত্রপাত্রীদের আবেদন জানাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবারের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ওই দিন রাজভবনে শুধুমাত্র একটি অনুষ্ঠান হবে, তবে কী ধরনের অনুষ্ঠান তা স্পষ্ট করা হয়নি। এই নতুন বিজ্ঞপ্তিতেই স্পষ্ট, ঘোষিত গণবিবাহ আর হচ্ছে না।
রাজভবনের একটি সূত্রের দাবি, গণবিবাহে অংশগ্রহণের মতো যথেষ্ট আবেদন না মেলায় অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়ায় শেষমেশ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়েছে রাজভবনকে। তবে এ বিষয়ে রাজভবনের পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার সাঁকরাইল গার্লস স্কুলকে এক লক্ষ টাকা অনুদান দিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। স্কুলের পরিবেশ, শৃঙ্খলা এবং ছাত্রীদের আচরণে মুগ্ধ হয়ে তিনি এই অনুদান দেন। স্কুলের ছাত্রীদের সঙ্গে একসঙ্গে বসে মধ্যাহ্নভোজেও অংশ নেন তিনি।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিতর্কই এই সিদ্ধান্তের আসল কারণ। কয়েকদিন আগে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-কে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তার পরেই তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজভবনে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি আরও অভিযোগ করেছিলেন, রাজভবনে অস্ত্রশস্ত্র মজুত রেখেছেন রাজ্যপাল। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষী রেখে রাজভবনে তল্লাশি চালান এবং নাম না করে কটাক্ষ করেন কল্যাণকে। এই ঘটনার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত। ইতিমধ্যে রাজভবন কল্যাণের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেছে। পাল্টা শ্রীরামপুরের সাংসদও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ করেছেন।
এর পাশাপাশি রাজ্য সরকার ও রাজভবনের সম্পর্কও ক্রমশ তিক্ত হয়ে উঠেছে। রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, রাজনৈতিক চাপানউতর এবং অযাচিত আড়ম্বরকে ঘিরে সম্ভাব্য সমালোচনা এড়াতেই রাজ্যপাল তুলনামূলক শান্ত ও সীমিত পরিসরে এ বারের বর্ষপূর্তি পালন করতে চাইছেন।
সবমিলিয়ে, পরিকল্পিত বৃহৎ অনুষ্ঠান না করে বর্ষপূর্তি পালনের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবেই— এমনটাই মত পর্যবেক্ষকদের একাংশের। এখন দেখার, আগামী দিনে এই সিদ্ধান্ত আরও কোনও রাজনৈতিক তরঙ্গ তৈরি করে কি না।