Advertisement
E-Paper

আরজি কর পরিস্থিতি ছিল নিয়ন্ত্রণেই, তিন ভুলেই কি হাতের বাইরে যেতে বসেছে! আলোচনা তৃণমূলের অন্দরে

তৃণমূলের অনেকেই ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, প্রশাসনিক স্তরের কিছু সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল করে তুলছে। সংগঠনকে পাল্টা রাস্তায় নামার ডাক দিয়েও লাভ হয়নি বলেই অভিমত তাঁদের।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ১৬:৫৮
RG Kar Hospital incident: Three administrative blunders complicate situation, talks inside TMC

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার গোড়া থেকে জনমানসে ক্ষোভ ছিল। কিন্তু তা এমন সরকার-বিরোধী গণক্ষোভের আকার নেয়নি বলেই মত শাসকদলের প্রথম সারির নেতাদের বড় অংশের। তৃণমূলের অনেকেই ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, প্রশাসনিক স্তরের কিছু সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল করে তুলছে। সংগঠনকে পাল্টা রাস্তায় নামার ডাক দিয়েও লাভ হয়নি বলেই অভিমত তাঁদের। তৃণমূলের নেতারা একান্ত আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, তিনটি ‘ভুল’ এত মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। তাতে প্রতি দিন নতুন নতুন অংশের মানুষ যুক্ত হয়ে পড়ছেন। নির্যাতিতার বিচারের দাবির সঙ্গে তীব্র হচ্ছে সরকার-বিরোধী স্বরও। সন্তর্পণে সিপিএম এবং বিজেপি ‘আরাজনৈতিক’ মোড়কে সেই ক্ষোভকে আরও উস্কে দিচ্ছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের অনেক নেতাই।

প্রথম ভুল

ঘটনাক্রম দেখিয়ে তৃণমূল নেতারা বলছেন, আরজি করের অধ্যক্ষের পদ থেকে সন্দীপ ঘোষের ইস্তফার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকা ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছিল। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘গত ১২ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে নিহত চিকিৎসকের বাড়িতে গিয়েছিলেন। যথেষ্ট সংবেদনশীলতার সঙ্গেই বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই বিকেলেই সন্দীপকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে ফের নিয়োগ দেওয়াটাই কাল হয়েছিল।’’ এ নিয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘সন্দীপ ঘোষ দোষী না নির্দোষ, তা তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু তাঁকে নিয়োগ করার বিষয়ে তাড়াহুড়ো জনমানসে ভুল বার্তা দিয়েছে।’’ ঘটনা হল, কুণাল প্রকাশ্যে বললেও তৃণমূলের অনেক নেতা সে ভাবে খোলাখুলি বলছেন না। দলের এক যুব নেতার কথায়, ‘‘গোড়া থেকে সন্দীপের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পাহাড় জমছিল। তাঁকে নিয়োগ দিয়ে মানুষের কাছে বার্তা দেওয়া হল, সরকার তাঁর পাশে রয়েছে। পরের দিন হাই কোর্ট তার সমালোচনা করল। তাঁকে ছুটিতে পাঠাল। গাল বাড়িয়ে থাপ্পড় খাওয়ার কোনও কারণই ছিল না।’’

দ্বিতীয় ভুল

সন্দীপকে ‘পুনর্বাসন’ দেওয়ার পরের দিন আরও একটি ভুল মানুষের কাছে ভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল বলে মনে করছেন শাসকদলের নেতারা। তা হল, যেখানে চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল, সেই সেমিনার রুমের উল্টো দিকের একটি ঘরের দেওয়াল সংস্কারের নামে ভেঙে দেওয়া। যে কাজ করেছে পূর্ত দফতর। তৃণমূলের নেতাদের বক্তব্য, ওই ঘটনায় মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি করে, প্রশাসন প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করছে। কলকাতার এক তৃণমূল নেতার বক্তব্য, ‘‘গত ১০ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী নিজে সিবিআই তদন্তের কথা বলায় পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ভাল করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, ১২ অগস্টের পর থেকে আন্দোলন ক্রমশ ছড়াতে শুরু করে। ১৩ তারিখের দেওয়াল ভাঙার ঘটনা তার আরও গতি বৃদ্ধি করে।’’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতার বক্তব্য, ‘‘মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচির প্রথম পোস্টার ১০ অগস্ট প্রকাশ্যে এসেছিল। কিন্তু শুরুতে তা ওই ভাবে ছড়ায়নি। ১২ এবং ১৩ তারিখের দু’টি ঘটনার পর পাড়ায় পাড়ায় রাত দখলের কর্মসূচির প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল।’’

তৃতীয় ভুল

তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকেরই বক্তব্য, গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে হাজির হল ডুরান্ড কাপের ডার্বি বাতিল। শাসকদল সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের কাছে এক প্রাক্তন সাংসদ, এক জন প্রভাবশালী মন্ত্রী বার্তা দিয়েছিলেন, বড় ম্যাচ যাতে বাতিল না করা হয়। মাঠের গ্যালারিতে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ হলে হোক, সেটা আটকাতে বড় ম্যাচ বন্ধ করা বিচক্ষণতার পরিচায়ক হবে না। ঘটনাচক্রে, এই কথা সমাজমাধ্যমে পোস্টও করেছিলেন কুণাল। যদিও পুলিশের তরফে একাধিক অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এনে দাবি করা হয়েছে, বড় ম্যাচ হলে দুই প্রধানের সমর্থকদের একটা অংশ ‘হিংসার ছক’ কষেছিলেন। সে কারণেই বাতিল করতে হয় ডার্বি। তবে তৃণমূলের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, ম্যাচ না হলেও রবিবারের প্রতিবাদে সমর্থকদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ নতুন করে ফুটবল মহলকে খেপিয়ে তুলল। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের সঙ্গে মহমেডান সমর্থকেরাও রাস্তায় নেমে পড়লেন। কলকাতা-সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে মিছিল, বিক্ষোভের পরিসর তৈরি করে দেওয়া হল।

১৪ অগস্টের রাতদখল ছিল এক রকম। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, তত ঘটনাপ্রবাহ রাজনৈতিক মোড় নিচ্ছে। মেয়েদের রাতদখলে কোনও রাজনৈতিক স্লোগান ছিল না। কিন্তু ডার্বি বাতিলের বিক্ষোভ থেকে যে সব স্লোগান ধ্বনিত হয়েছে, তাতে সরকারের সর্বোচ্চ স্তরকে নিশানা করা হয়েছে। রবিবার রাতে হাওড়া, হুগলি, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন মিছিলে এই স্লোগানও শোনা গিয়েছে— ‘যত বার ডার্বি, স্বৈরাচারী হারবি।’ তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকেরই বক্তব্য, প্রশাসনিক স্তরের সিদ্ধান্তগুলিই পরিস্থিতিকে ক্রমশ হাতের বাইরে বার করে দিচ্ছে। যদিও শাসদকদলের নেতারা এখনও বলছেন, এই ক্ষোভ, আন্দোলন সবটাই শহর, মফস্‌সলে হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে তা পৌঁছয়নি। সেটাই একমাত্র ইতিবাচক দিক।

R G Kar Medical College And Hospital Incident Kolkata Doctor Rape-Murder Case TMC Mamata Banerjee Administrative Activity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy