Advertisement
E-Paper

আরএসএসের শতবর্ষে বাংলায় ‘অকাল’-জমায়েত মহালয়াতেই, ‘গণবেশে’ পথে সুকান্ত-শুভেন্দুও

আরএসএসের এই কর্মসূচি প্রতি বছরই বিজয়া দশমীতে আয়োজিত হয়। বিজয়া দশমীতে সরসঙ্ঘচালক (আরএসএস প্রধান) তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক ভাষণটিও দেন। কারণ ১৯২৫ সালে কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার বিজয়া দশমীতেই আরএসএস প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম বৈঠকটি করেছিলেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:৫৯
RSS organises most important gathering of centenary on Mahalaya in Bengal, Sukanta and Suvendu also seen in full uniform

নিউটাউনে ‘পথ সঞ্চলনে’ সুকান্ত মজুমদার। কাঁথিতে ‘গণবেশ’ পরিহিত শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সংগৃহীত।

বাঙালির জন্য নিয়ম শিথিল করল আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ)। দেশের অন্য সব রাজ্যে আরএসএসের শতবর্ষ উপলক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জমায়েতটি হবে বিজয়া দশমীতে। পশ্চিমবঙ্গে সে জমায়েত মহালয়াতেই সেরে নেওয়া হল। রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন স্থানে পূর্ণ গণবেশে (আরএসএসের নির্দিষ্ট পোশাক) পথে নামলেন স্বয়ংসেবক ও পদাধিকারীরা। প্রথমে আয়োজিত হল ‘শাখা’। তার পরে ‘পথ সঞ্চলনে’র (রুট মার্চ) মধ্যে দিয়ে শেষ হল শতবর্ষের ‘একত্রীকরণ’ কর্মসূচি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকেও গণবেশ পরে ‘পথ সঞ্চলনে’ অংশ নিতে দেখা গেল রবিবার। গণবেশ পরে পথে নামলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।

আরএসএসের এই কর্মসূচি প্রতি বছরই বিজয়া দশমীতে আয়োজিত হয়। বিজয়া দশমীতে সরসঙ্ঘচালক (আরএসএস প্রধান) তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক ভাষণটিও দেন। কারণ ১৯২৫ সালে কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার বিজয়া দশমীতেই আরএসএস প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম বৈঠকটি করেছিলেন। প্রতি বছর বিজয়া দশমীতে সরসঙ্ঘচালকের ভাষণে বিগত বছরের সঙ্ঘীয় গতিবিধির বিশ্লেষণ থাকে, আসন্ন সময়ে সঙ্ঘের নীতিগত দিশা কী হতে চলেছে, তারও স্পষ্ট বিবৃতি থাকে। সঙ্ঘপ্রধানের এই বাৎসরিক ভাষণকে কেন্দ্র করে গোটা দেশেই স্বয়ংসেবকদের সংগঠিত জমায়েত হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বরাবরই ওই আয়োজন কিছুটা কঠিন হত। কারণ, এ রাজ্যে স্বয়ংসেবকরাও সে সময়ে নিজের নিজের এলাকার পুজো এবং বিজয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এ বছর তাই পশ্চিমবঙ্গের স্বয়ংসেবকদের জন্য বিকল্প তারিখে একত্রীকরণের ব্যবস্থা করা হল।

আরএসএসের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের প্রচার প্রমুখ বিপ্লব রায়ের কথায়, ‘‘আমরা মহালয়ায় গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে প্রায় হাজারখানেক জায়গায় একত্রীকরণের পরিকল্পনা করেছিলাম। তার মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে প্রায় শ’তিনেক। বাকিটা মধ্যবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গে। যেখানে যেখানে একত্রীকরণের পরিকল্পনা হয়েছিল, প্রায় সব জায়গা থেকেই কর্মসূচি পালনের ছবি ও ভিডিয়ো আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে।’’ রাজ্য জুড়ে এক লক্ষেরও বেশি স্বয়ংসেবক মহালয়ার একত্রীকরণে অংশ নিয়েছেন বলে আরএসএস সূত্রে দাবি করা হয়েছে। রমাপদ পাল, জলধর মাহাতো, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, জিষ্ণু বসুদের মতো পূর্ব ভারত ক্ষেত্রের শীর্ষ আরএসএস পদাধিকারীরা রবিবার পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্তে পথ সঞ্চলনে অংশ নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত নিউটাউনে এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু কাঁথিতে রবিবার সঙ্ঘের কর্মসূচিতে অংশ নেন।

সরসঙ্ঘচালক ভাগবতের ভাষণ এ বছরও বিজয়া দশমীতেই হবে। যে হেতু শতবর্ষের ভাষণ, সে হেতু পশ্চিমবঙ্গের স্বয়ংসেবকদের সে দিনও ওই ভাষণ শোনার জন্য জড়ো হতে হবে। কিন্তু তার জন্য বড়জোর একঘণ্টা সময় দিলেই চলবে। দিনভর শতবর্ষ পালনের কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকতে হবে না। কারণ সে কর্মসূচি বাংলায় রবিবারই পালিত হয়ে গেল।

রাজ্যের নানা প্রান্তে মহালয়ায় এ ভাবেই ‘পূর্ণ গণবেশে’ জমায়েত করল আরএসএস।

রাজ্যের নানা প্রান্তে মহালয়ায় এ ভাবেই ‘পূর্ণ গণবেশে’ জমায়েত করল আরএসএস। ছবি: সংগৃহীত।

আগে কখনও পশ্চিমবঙ্গের স্বয়ংসেবকদের জন্য আরএসএস কিন্তু এ ভাবে নিয়ম শিথিল করেনি। এ বার শতবর্ষ পালনের কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও নিয়ম কেন শিথিল করা হল, তা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। আরএসএসের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত প্রচার প্রমুখ বিপ্লব বলছেন, ‘‘বাংলার বিষয়ে সঙ্ঘ নেতৃত্ব চিরকালই বিশেষ শ্রদ্ধাশীল। কারণ, ডাক্তারজি (হেডগেওয়ার) কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পড়তে এসেই স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় হয়েছিলেন। অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পুলিনবিহারী দাসের আখড়ায় প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেছিলেন।’’ বিপ্লবের কথায়, ‘‘ওই আখড়াতেই ডাক্তারজি লাঠিখেলা শেখেন। সেই লাঠিই তিনি নাগপুরে নিয়ে যান। সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকদের হাতে গোটা দেশে যে লাঠি দেখা যায়, সেটা বাংলা থেকে ডাক্তারজির নিয়ে যাওয়া ওই লাঠিরই প্রতীক।’’ সেই কারণেই বাঙালির ভাবাবেগ বা বাংলার সংস্কৃতির প্রতি সঙ্ঘ বরাবর ‘বিশেষ যত্নশীল’ বলে আরএসএস মুখপাত্রের দাবি।

পশ্চিমবঙ্গে অনেকে অবশ্য সঙ্ঘের এই সিদ্ধান্তের মধ্যে ‘রাজনৈতিক কৌশল’ দেখছেন। ২০২৬ সালে বঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি সম্পর্কে সঙ্ঘের যে ‘নিজস্ব উদ্বেগ’, তার প্রেক্ষিতে এ বারের নির্বাচনে বিজেপির পথ সুগম করতে আরএসএস সর্বশক্তি প্রয়োগ করার রাস্তায় হাঁটবে বলেই খবর। আপাতত তাই বঙ্গে সঙ্ঘের প্রতিটি কর্মসূচির রূপরেখাই সে কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে বলে সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। শতবর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জমায়েতটির ক্ষেত্রেও তাই বাঙালিকে ছাড় দেওয়া হল। বাঙালির ভাবাবেগ, উৎসব এবং সংস্কৃতিকে সঙ্ঘ পরিবার কতটা গুরুত্ব দেয়, সেই বার্তা যাতে কিছুটা চারিয়ে যায়, এটি তারই চেষ্টা বলে অনেকে মনে করছেন।

RSS Mahalaya West Bengal Politics Centenary Gathering
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy