স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন কাশ্মীরে। বুধবারই ঘরে ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু বুধবার কেন, আর কখনওই যে ঘরে ফেরা হবে না, তা জানা ছিল না পরিবারের কারও! মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা প্রাণ কেড়েছে বেহালার সখেরবাজারের বাসিন্দা সমীর গুহের। এখন স্বামীকে ছাড়াই মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় ফিরতে হচ্ছে সমীরের স্ত্রী শবরীকে।

বাবার সঙ্গে মেয়ে শুভাঙ্গীর ছবি। — নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রীয় সরকারের জুনিয়র স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন সমীর। সমীরের বাবা-মা আগেই গত হয়েছেন। ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে এক দাদা থাকেন। বেহালার জগৎ চৌধুরী রোডের বাড়িতে থাকত বাবা-মা-মেয়ের সুখী পরিবার। এ- হেন পরিবারে ভাঙনের খবর যত ক্ষণে কলকাতার বাড়িতে পৌঁছোয়, তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত প্রায় ৩টে। মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার খবর পাওয়ার পর থেকেই সমীরদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন পরিজনেরা। সকলেই খুব চিন্তিত ছিলেন। বাড়িতে চলে এসেছিলেন শ্যালক সুব্রত ঘোষও। আচমকা রাত ৩টে নাগাদ বাড়িতে একটি ফোন আসে। এক গাড়িচালকের ফোন থেকে ফোন করে দিদি শবরী জানান সমীরের মৃত্যুর খবর। সুব্রতের কথায়, ‘‘দিদি সে রকম কিছু বললই না। শুধু বলল, এক লহমায় সব শেষ হয়ে গেল!’’
সমীরদেরই আবাসনে থাকেন অর্চনা গজেন্দ্র। সকালে তাঁর সঙ্গে কথা হয় সমীরের স্ত্রী ও মেয়ের। অর্চনা জানালেন, এখনও ঘটনার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেননি তাঁরা। স্ত্রী শবরী একটানা কেঁদেই চলেছেন। মেয়ে শুভাঙ্গী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুরে তিন জন ঘুরছিলেন। তখন হঠাৎ দূরে গুলির শব্দ শুনতে পান। সমীরের স্ত্রী জানিয়েছেন, আচমকাই কয়েক জন ঘিরে ধরেছিল তাঁদের। সকলের মুখেই মাস্ক ছিল। এসেই তাঁরা সকলকে বলে, মাটিতে শুয়ে পড়তে। সকলের হাতেই ছিল বন্দুক। ভয়ে তাঁরা শুয়ে পড়েন। তখন বেছে বেছে তাঁর স্বামী-সহ কয়েক জনকে গুলি করে জঙ্গিরা।
আরও পড়ুন:
১৬ তারিখে রীতিমতো পরিকল্পনা করেই পরিবারকে নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমণে গিয়েছিলেন সমীর। বুধবারই ফেরার কথা ছিল। মাঝেমধ্যেই পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে যেতেন সমীর, তবে কাশ্মীরে এই প্রথম! সমীরের মেয়ে শুভাঙ্গী আইসিএসই বোর্ডে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন। সদ্য পরীক্ষাও দিয়েছিলেন তিনি। বাবাকে খুব ভালবাসতেন। বেহালার বাড়িতে এখনও রয়েছে গত বছর ‘ফাদার্স ডে’তে তোলা বাবা-মেয়ের ছবি। পরিবার সূত্রে জানা গেল, সমীরের স্ত্রী ও মেয়ে অক্ষতই রয়েছেন। বুধবার কলকাতায় ফিরছেন তাঁরা। অন্য দিকে, বুধবার সকালে সমীরদের বেহালার বাড়িতে গিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সমীরের পরিজনদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন ববি।
শুধু সমীর নয়, একই পরিণতি হয়েছে আরও দুই বাঙালির। কলকাতার বৈষ্ণবঘাটা পাটুলির বাসিন্দা বিতান অধিকারী এবং পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা মণীশরঞ্জন মিশ্রেরও প্রাণ গিয়েছে এই হামলায়।