নিহত তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস।
গোটা দুটো দিন পেরিয়ে গেলেও কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুনি ধরা পড়ল না। বরং ধোঁয়াশা বাড়ছে। কাছের লোকজন জড়িত বলে সন্দেহ তো ছিলই, প্রধান অভিযুক্ত অভিজিৎ পুণ্ডারীই খুন করেছে কি না, তা নিয়েও নদিয়ার পুলিশ মহলের একাংশে সংশয় তৈরি হয়েছে।
শনিবার রাতে নদিয়ার ফুলবাড়ি গ্রামে খুন হন জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সত্যজিৎ। রবিবার জানা গিয়েছিল, সিআইডি-কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে তারা দায়িত্ব নেয়নি। হাঁসখালি থানার নতুন ওসি তাপস ঘোষ মামলার তদন্তকারী অফিসার হিসেবে কাজ করছেন। আবার সিআইডি-ও খোঁজখবর নিচ্ছে।
এই অবস্থায় এলাকায় বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রথমত, সামনে কোনাকুনি, ডান দিক থেকে, সত্যজিতের চোখের নীচে গুলি করা হয়েছিল। কিন্তু অভিজিৎকে কি কেউ গুলি চালাতে দেখেছে? আগে কয়েক বার সত্যজিতের সঙ্গে তার গোলমাল হয়েছে এবং সে বিজেপির হয়ে কাজ করছিল বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। তা হলে বিধায়কের এত কাছে সে গেল কী করে?
দ্বিতীয়ত, কৃষ্ণনগর-বগুলা রাজ্য সড়ক থেকে ঢাল বেয়ে নেমে যাওয়া যে মাঠে পুজো হচ্ছিল, সেখানে তখন অনুষ্ঠান চলছিল। কিছু স্টলও হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাঠে পঞ্চাশ-ষাট জন লোক ছিল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। তাঁদের সামনে দিয়ে মাঠ দিয়ে দৌড়ে আততায়ী রাজ্য সড়কে উঠে পালাল? একটি সূত্রের দাবি, কয়েক জন আততায়ীকে রাস্তা পর্যন্ত ধাওয়া করে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তা পেরনোর সময়ে সামনে লরি এসে পড়ায় ধরতে পারেনি। লরি চলে যেতে যে সামান্য সময় লাগার কথা, তার মধ্যে খুনি মিলিয়ে গেল? কারা তাকে ধাওয়া করেছিলেন, তা-ও স্পষ্ট নয়। উল্টে কয়েক জন খুনিকে ধাওয়া করার নামে রাস্তা পার করিয়ে দিয়ে এসেছিল কি না, সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে।
তৃতীয়ত, ওয়ানশটার দিয়ে খুন করা দেখে পুলিশেরই একটি মহলের সন্দেহ, সাধারণ কেউ এই কাজ করেনি। বরং ভাড়া করা পেশাদার খুনি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আরও পড়ুন: অভিষেকের হুঁশিয়ারি
চতুর্থত, সত্যজিৎ যে তখন কার্যত ‘অরক্ষিত’ আছেন, সেই পাকা খবর খুনির কাছে ছিল। পুলিশের দেওয়া ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ছুটি নিয়েছিলেন। যে সব ঘনিষ্ঠ জনেদের বেশির ভাগ সময়ে সত্যজিতের সঙ্গে দেখা যেত, ঘটনাচক্রে, তাঁদেরও বেশির ভাগ সেখানে ছিলেন না।
এই ঘনিষ্ঠদের অন্যতম দক্ষিণপাড়া ১ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা দলের অঞ্চল সভাপতি বিজয় বিশ্বাস জানান, ঘটনার মিনিট দশেক আগে তিনি বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বার অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরেই ফিরি। কিন্তু খুব ক্লান্ত ছিলাম সে দিন। কেন যে আগে চলে গেলাম!’’ আর এক ঘনিষ্ঠ রানা সরকারও বলেন, ‘‘প্রতি বারই ওখানে থাকি। এ বার ভাবলাম, নিজের পাড়ার ক্লাবে একটু সময় দিই। তাই আর যাওয়া হয়নি।’’ সত্যজিতের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, হাঁসখালি ব্লক যুব সভাপতি তথা দক্ষিণপাড়া ২ পঞ্চায়েতের প্রধান অজয় বিশ্বাস ঘটনাস্থল ছেড়ে যান মিনিট পনেরো আগে। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁর বাইকে ঘুরি, তাঁর বাড়িতে পুজো থাকায় এক কাঠের দোকানের মালিকের বাইকে গিয়েছিলাম। খরিদ্দার আসছে বলে বারবার তাঁর দোকান থেকে ফোন আসছিল। তাই ফিরে যেতে হয়।’’
শনিবার রাতে যিনি পাঁচ জনের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন, সত্যজিতের ছায়াসঙ্গী হিসেবে পরিচিত সেই মিলন সাহা অবশ্য তাঁর পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি কি খুনিকে দেখে চিনতে পেরেছিলেন? সে-ই কি অভিজিৎ পুণ্ডারী? কারা তাকে কত দূর পর্যন্ত তাড়া করে গিয়েছিল? মিলন বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। যা বলার পুলিশ বলবে, নেতারা বলবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy