Advertisement
E-Paper

সপ্তাহে এক দিন ডিম দিতেই মাথায় হাত

প্রতিটি স্কুলের দেওয়ালে টাঙানো মিড ডে মিলের রুটিনে সপ্তাহে এক দিন ডিম দেওয়ার কথা। সপ্তাহে এক দিন ডিম কী ভাবে সম্ভব? প্রশ্ন করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪ ০৭:২৬

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

এক মাস পরে মিড ডে মিলে আস্ত একটা ডিম পাওয়া যাবে!

তর সইছে না খুদে পড়ুয়াদের। স্কুলে টিফিন হয় দেড়টায়। কখন বাজবে দেড়টা? রান্নাঘরের দরজার ওপারেই চতুর্থ শ্রেণির ক্লাসঘর। ক্লাস করতে করতে মাঝেমধ্যেই হাওড়ার আনন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েতেরচকপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (পল্লিসমাজ) পড়ুয়াদের নজর চলে যাচ্ছে রান্নাঘরের দিকে।

শুধু কি ডিম, শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, সামান্য আনাজ দিয়ে তরকারি, সয়াবিনের ঝোল, এমনকি ডাল রান্নাও এখন চ্যালেঞ্জ। প্রশ্ন উঠেছে এ বারের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য যে ভাবে ছিটেফোঁটা বরাদ্দ বাড়ল, তাতে মিড ডে মিলের হাঁড়ি চড়বে তো? ২০২২-২৩ সালের অর্থবর্ষে মিড ডে মিলের বরাদ্দ থেকেও এ বার কমে গেল বরাদ্দ। অথচ ২০২২ সালের তুলনায় এখন আনাজপাতি থেকে শুরু করে গ্যাস, তেল, মশলা, নুনের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। শিক্ষকদের প্রশ্ন, এ বারের বাজেট কি প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিকের ১ কোটি ১৮ লক্ষ পড়ুয়ার মিড ডে মিলকে প্রায় বন্ধের পথে ঠেলে দিল না?

প্রতিটি স্কুলের দেওয়ালে টাঙানো মিড ডে মিলের রুটিনে সপ্তাহে এক দিন ডিম দেওয়ার কথা। সপ্তাহে এক দিন ডিম কী ভাবে সম্ভব? প্রশ্ন করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। একটা ডিমের দাম অন্তত সাড়ে ছ’টাকা। আর প্রাথমিকে মিড ডে মিলের বরাদ্দ মাথাপিছু ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানালেন, এখন গ্যাসের দাম কমে ৮৩০ টাকা হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন তাঁরা। ১২০০ টাকা যখন গ্যাসের দাম ছিল, তখন সপ্তাহে একাধিক দিন খিচুড়ি খাওয়াতে হত। কারণ, শুধু খিচুড়ি হলে জ্বালানি সাশ্রয় হয়। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, মিড ডে মিলের আনাজ, মশলাপাতি কিনতে গিয়ে বিভিন্ন দোকানে তাঁদের ধার করতে হচ্ছে।

চকপাড়া স্কুলের শিক্ষিকা জয়িতা পাল বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের বেশ কয়েক জন পড়ুয়া না খেয়ে স্কুলে আসে। দিনের প্রথম খাবার খায় মিড ডে মিলের। অথচ সেখানেও অপুষ্টি।’’ শিক্ষকদের প্রশ্ন, ৫ টাকায় একটা বিস্কুটের প্যাকেট হয় না। সেখানে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের কী ভাবে মিড ডে মিলের বরাদ্দ মাথাপিছু ৫ টাকা ৪৫ পয়সা হয়?

বীরভূমের লাভপুরের সত্যনারায়ণ শিক্ষা নিকেতন গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মণীষা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁদের স্কুলের বেশির ভাগই প্রান্তিক পরিবার থেকে আসা ছাত্রী। মণীষা বলেন, ‘‘অনেক মেয়েকে স্কুলে প্রার্থনার লাইনে দেখেই বুঝতে পারি ওদের দুর্বল শরীর। জিজ্ঞেস করে দেখেছি, সকাল থেকে খায়নি। মিড ডে মিলেই প্রথম খাবে। প্রাথমিকে ৫ টাকা ৪৫ এবং উচ্চ প্রাথমিকে ৮ টাকা ১৭ পয়সায় কি মেয়েদের পুষ্টি সম্ভব? শিক্ষার অধিকার আইনে কিন্তু বলা আছে, পর্যাপ্ত পুষ্টি দিতে হবে। বাজেটে তার প্রতিফলন কোথায়?’’

মিড ডে মিলে সপ্তাহে এক দিন ডিম ছাড়াও দেওয়ার কথা সপ্তাহে এক দিন সয়াবিন, মরসুমি আনাজ, ডাল, খিচুড়ি দেওয়ার কথা। শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, সয়াবিন এবং তরকারি দিনে কম করে দিয়ে সামাল দেওয়া গেলেও ডিমের দিন সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, গোটা একটা ডিম দিতে হয়।

সুন্দরবন এলাকার কুলতলি থানা এলাকার ঘটিহারানিয়া হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ব্রহ্মপদ মণ্ডল জানাচ্ছেন, দাম যা বেড়েছে, তাতে মিড ডে মিলের পাতে আলুর পরিমাণ কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘‘এ বার বাজেটে যে টুকু বরাদ্দ বাড়ল, তাতে কী ভাবে সামলাব এই আগুন দাম?’’

মিড ডে মিলের খরচের ৬০ শতাংশ কেন্দ্র, ৪০ শতাংশ রাজ্য দেয়। কিন্তু কেন্দ্র বা রাজ্য কেউ কি ভাবে পড়ুয়াদের পুষ্টি নিয়ে? প্রশ্ন তুলেছেন বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মিড ডে মিলের পাতে ভাতের সঙ্গে রোজ একটা আলু আর ডিম দেওয়া যাচ্ছে না, অথচ রাজ্য সরকার দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলোতে খরচের জন্য ৮৫ হাজার টাকা দিচ্ছে কী ভাবে? এ বারের বাজেটে মিড ডে মিলের বরাদ্দ ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের বাজেটের থেকে ২১৩.৫ কোটি টাকা কমে যায় কী করে? রাজ্যই বা কেন তার বরাদ্দ বাড়ায় না?" তিনি আরও বলেন, "গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে চার মাস অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়েছিল রাজ্য। সপ্তাহে একজন পড়ুয়ার বরাদ্দ ছিল কুড়ি টাকা। পঞ্চায়েত ভোটের পর কেন তা বন্ধ হয়ে গেল?”

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু যদিও বলেন, ‘‘আমরা মিড ডে মিলে রোজ ডিম দিতেই চাইছি। এ বার বাজেটে বোঝা যাচ্ছে, কেন্দ্র আসলে মিড ডে মিল তুলে দিতে চাইছে। তাই বরাদ্দ কমাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু আগে বরাদ্দ বাড়িয়েছেন। ভবিষ্যতেও কিছু পরিকল্পনা আছে।’’

Mid Day Meal Scheme Union Budget 2024-25 Nirmala Sitharaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy