Advertisement
E-Paper

কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান কি বন্ধ হয়ে যাবে? ‘দেবতার অপমান হচ্ছে, নেপালকে বলুন’, শাহকে চিঠি সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর

কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখলেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং। তাঁর বক্তব্য, সিকিমে দেবতা হিসাবে পূজিত হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। তার শৃঙ্গে আরোহণ করা মানে দেবতার অপমান!

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৫ ১৯:০৬
মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা।

মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা। —ফাইল ছবি।

কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখলেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিংহ তামাং। তাঁর বক্তব্য, সিকিমে দেবতা হিসাবে পূজিত হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাই ওই শৃঙ্গে আরোহণ করা মানে দেবতার অপমান! তা নজরে রেখে নেপালের দিক থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেন তামাং। শাহের কাছে তাঁর অনুরোধ, নেপাল সরকারের কাছে এ ব্যাপারে অনুরোধ করা হোক। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর সেই চিঠি প্রকাশ্যে আসার পরেই ভারতের পর্বত আরোহীদের মধ্যে জল্পনা তৈরি হয়েছে, তা হলে কি কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে?

ভারত-নেপাল সীমান্তের এই কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮,৫৮৬ মিটার) বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে পবিত্র স্থান। তা নজরে রেখে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সিকিম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান নিষিদ্ধ করা হয়েছে ২০০১ সালে। এখন যাঁরাই কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে যান, তাঁরা নেপাল থেকে যাত্রা করেন। এ বার সেটিও বন্ধ করার আর্জি জানিয়েছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী।

সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশের দিরাংয়ে পর্বতারোহণকারী সংস্থা ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’ (এনআইএমএএস)-এর একটি দল নেপালের দিক দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা জয় করেছে। এর পরেই শাহকে চিঠি লেখেন তামাং। লিখেছেন, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘায় আরোহণ আইন লঙ্ঘন তো বটেই। সিকিমের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভাবাবেগের পরিপন্থীও। সিকিমবাসীর কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘার ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অপরিসীম। বৌদ্ধধর্ম প্রচারক গুরু রিনপোচে তথা গুরু পদ্মসম্ভব এই পথ ধরেই অগ্রসর হয়েছিলেন। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে সিকিমের প্রধান দেবতার আবাসভূমি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন তিনি। …এই বিশ্বাসের কারণেই সিকিম সরকার কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে স্যাকরেড প্লেসেস অব ওয়ারশিপ (স্পেশ্যাল প্রভিশনস) অ্যাক্ট, ১৯৯১-এর আওতায়।’

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, অনুরোধ করা হলেও নেপাল সরকার কি কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান বন্ধ করতে রাজি হবে? পর্বতআরোহীদের অনেকেই জানাচ্ছেন, তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। পর্বত আরোহণ শেরপাদের ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু সেই সব শেরপা গ্রামে পর্বত আরোহণ নিয়ে বেশ কিছু নিয়ম-রীতি রয়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা আরোহণ তাঁদের কাছে ‘ঈশ্বরদর্শন’ হিসাবেই বিবেচিত হয়। পর্বত আরোহণের আগে গোটা শেরপা গ্রাম নিরামিষ খায়। সমস্ত নিয়মনিষ্ঠা মেনেই শেরপারা পর্বত আরোহণের উদ্দেশে রওনা দেন। আবার শেরপাদের দেখাদেখি পর্বত আরোহীরাও নিয়মনিষ্ঠা মানেন। দু’পক্ষেই এই বোঝাপড়া রয়েছে। ফলে তাঁদের কাঞ্চনজঙ্ঘা আরোহণ নিয়ে আপত্তি করার কোনও কারণ নেই।

পরিবেশবিদ, ন্যাফের সদস্য অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘নেপালের অর্থনীতি দাঁড়িয়েই রয়েছে পর্যটন এবং পর্বত আরোহণের উপর। পর্বত আরোহণের পেশার সঙ্গে নেপালের বহু মানুষ জড়িয়ে। কত মহিলা এর সঙ্গে যুক্ত! ফলে কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান এ ভাবে দুম করে কখনওই বন্ধ হয়ে যেতে পারে না। সম্ভাবনা খুবই কম।’’

পর্বতারোহীদের কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা বরাবরই কঠিনতম চ্যালেঞ্জ বলেই বিবেচিত হয়। সে কারণে অভিযানের সংখ্যাও কম। ২০১৪ সালে এই অভিযানে গিয়ে দুই শেরপা-সহ চিরতরে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন পর্বতারোহী ছন্দা গায়েন। তার পাঁচ বছর পর কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন বাংলার দুই পর্বতারোহী বিপ্লব বৈদ্য ও কুন্তল কাঁড়ার। তবে ২০১১ সালে নেপালের দিক দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা জয় করেছিলেন বাংলার বসন্ত সিংহরায়। তাঁর মতো পর্বতারোহীদের মত, সমস্ত শৃঙ্গই খোলা থাকা জরুরি। তবে স্থানীয় মানুষের ভাবাবেগও বিবেচনায় রাখতে হবে।

Mount Kanchenjunga Amit Shah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy