দেবদীপ অধিকারী। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।
‘আমি কাঁথিতে থাকি। বাড়ি ফেরার পথে বা যে কোনও সময় মেয়েরা বিপদে পড়লেই ফোন করতে পারেন’।
হায়দরাবাদের গণধর্ষণের পরে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে এই ধরনের ‘অভয় বার্তা’ সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। মহিলার নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকেই নিজেদের এলাকার কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট করছেন ফোন নম্বর। নারী নিরাপত্তার ওই কাজে ‘নাম লিখেয়েছে’ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারীর স্কুল পড়ুয়া নাতিও।
কাঁথির করকুলির বাসিন্দা কৃশানু ভট্টাচার্য রবিবার দুপুরে ফেসবুকে নিজের ফোন নম্বর-সহ তৃণমূল নেতার নাতি দেবদীপ অধিকারী এবং আরও চারজনের নম্বর আপলোড করেছেন। তাতে তাদের বক্তব্য, কোন মহিলা বিপদে পড়লে তাদের নম্বরে ফোন করতে পারেন। কৃশানু বলেন, ‘‘হায়দরাবাদের ঘটনার কথা শুনেছি। নিজের শহর কাঁথিতে মেয়েরা কতটা নিরাপদ, তা জানি না। পুলিশের পক্ষে সর্বদা দ্রুত সব জায়গায় পৌঁছনো সম্ভব হয় না। তাই আমাদের এই পরিকল্পনা।’’
দেবদীপ শিশিরবাবুর নাতি ছাড়াও পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ভাইপো। বর্তমানে সে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তার কথায়, ‘‘সমাজের একজন নাগরিক হিসাবে মহিলাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমি আপনাদের পাশে রয়েছি। বিপদে পড়লে আমাকে ফোন করুন। আমি প্রথমে স্থানীয় থানায় জানাব। প্রয়োজন মতো নিজে এলাকায় গিয়ে সাহস জোগাব।’’
শুধু কৃশানু, দেবদীপ নয়, একই রকম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন কাঁথির সোহম মান্না, মাজনা এলাকার বাসিন্দা অভিষেক মাইতিও। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে তাঁরাও ফোন নম্বর আপলোড করেছেন। জেলাবাসীর ব্যক্তিগত এই উদ্যোগের প্রশাংসা করছে পুলিশও। পুলিশের দাবি, অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার খবর পেতে তাদের দেরি হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে কেউ উপযুক্ত তথ্য তাদের হাতে তুলে দিলে বিপদের আগে মহিলাদের উদ্ধার করা যাবে।
মহিলাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে জেলা পুলিশও তৎপর। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মহিলাদের নিরাপত্তা বা তাদের উপরে অন্যায় করা হলে, সেই সংক্রান্ত অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। প্রতি মাসে পুলিশ সুপারের দফতরে ‘ক্রাইম কনফারেন্সে’ এ ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট যাচাই করে দেখা হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালগুলিতে থাকা কোনও নিগৃহীতা মহিলার তথ্য নিয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, হলদিয়া শিল্পাঞ্চল এবং দিঘার মত পর্যটন কেন্দ্রে মহিলা নিরাপত্তায় সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন থাকে। তাছাড়া, কাঁথি, হলদিয়ায় একাধিক মহিলা থানা করা হয়েছে। পাশাপাশি, স্কুলের ছাত্রীদের সচেতন করার জন্য ‘উন্মেষ’ নামে একটি প্রকল্প চালু রয়েছে জেলায়। তাতে আত্মরক্ষার পাঠ দেওয়ার জন্য ক্যারেট শেখানো হয় স্কুল ছাত্রীদের।
কাঁথির এসডিপিও অভিষেক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সহযোগিতা করার প্রবণতা প্রশংসনীয়। সর্বস্তরের মানুষ যদি সচেতন হয়ে অপরাধের ঘটনা পুলিশকে দ্রুত জানান, তবে অনেক ক্ষেত্রে অপরাধ কমে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy