Advertisement
E-Paper

Government Home: দেখেননি বাবা-মা, হোমে থেকে পড়ে উজ্জ্বল দুই বোন

শ্রেয়া জানান, তাঁর বাবা কলের মিস্ত্রি। যা উপার্জন করেন, সবটাই ‘মদ’ খেয়ে উড়িয়ে দেন।

রাজীব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২২ ০৬:৪৪
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

পরপর তিন মেয়ে। লালনপালনের সঙ্গতি না-থাকায় তিন মেয়েকে তিন জনের কাছে দিয়ে দিয়েছিলেন মা। পরে প্রশাসন তিন নাবালিকাকে উদ্ধার করে একটি হোমে রেখেছিল। সেই হোম থেকেই বড় মেয়ে এ বছর ‘এ প্লাস’ গ্রেড পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন। হোমেথেকেই এ বার মাধ্যমিক পাশ করেছে মেজো মেয়ে। ছোটটি পড়ছে তৃতীয় শ্রেণিতে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার মহকুমার বাসিন্দা শ্রেয়া হালদার (নাম পরিবর্তিত) এ বছর ১৯ পেরিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘তিন বোন একসঙ্গে পড়াশোনা করতাম। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম হোম থেকেই। ৪২০ পেয়েছি। মাসখানেক আগে হোম থেকে বেরিয়েছি। মেজো আর ছোট বোন এখনও হোমে থাকে। আমি থাকি পিসির বাড়িতে। দুই বোনকে বড় করাই আমার লক্ষ্য।’’

বাবা-মা থাকতেও কেন এবং কী ভাবে হোমে ঠাঁই হয় তিন মেয়ের?

শ্রেয়া জানান, তাঁর বাবা কলের মিস্ত্রি। যা উপার্জন করেন, সবটাই ‘মদ’ খেয়ে উড়িয়ে দেন। মায়ের পক্ষে তিন মেয়ের দেখাশোনা করা কঠিন হয়ে পড়ছিল। ২০১২ সালে সুভাষগ্রামে এক ব্যক্তির কাছে তাঁকে দিয়ে দেন তাঁর মা। শ্রেয়ার বয়স তখন ন’বছর। ওই তরুণীর কথায়, ‘‘শুনেছি, এর জন্য দু’-একশো টাকাও নিয়েছিল মা। তার পরে সাত বছরের মেজো বোনকে ডায়মন্ড হারবারে এক ব্যক্তির কাছে দিয়ে দেয় মা। তিন বছরের ছোট বোনকে অন্য একটি লোকের কাছে দেওয়ার পরে পুরো বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। চাইল্ড লাইন ও প্রশাসন আমাদের উদ্ধার করে।’’

প্রথমে তিন বোনকে রাখা হয়েছিল লক্ষ্মীকান্তপুরের একটি হোমে। সেখানে পাঁচ বছর থাকার পরে তারা পাথরপ্রতিমার হোমে ঠাঁই পায়। স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়েছিল তিন জনকেই। শ্রেয়া বলেন, “শুধু হোমের আঙ্কল-আন্টিরা ছিলেন বলে পড়াশোনা করতে পেরেছি। হোম থেকে ফিরে পিসির বাড়ি আছি। এখন দরকার একটা ঘর। মায়ের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে। মাকে সে-কথা জানিয়েছি। কিন্তু মা তো এখন অন্য জায়গায় থাকে।’’

ইতিহাসের স্নাতক হতে চান শ্রেয়া। ওই বিষয়ে সব চেয়ে বেশি নম্বর (৭৩) পেয়েছেন তিনি। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি বোনেদের বড় করার জন্য টাকা রোজগারেরও তাড়া আছে তাঁর। তাই স্নাতক স্তরে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিতে চান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের জন্য নয়, টাকার প্রয়োজন বোনেদের জন্য। মেজো বোন এ বছর ৩৭১ পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে। পড়াশোনায় বেশ ভাল। আমি ‘কন্যাশ্রী’র (কে-২) টাকাটা এখনও পাইনি। পেলে ভাল হয়। কোর্টের অর্ডার নিয়ে এখন হোমে যাই। দুই বোনকে পড়াই।’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায় টামটা বলেন, ‘‘শ্রেয়া মেধাবী মেয়ে। কঠিন পরিস্থিতিতেও ভাল ফল করেছে উচ্চ মাধ্যমিকে। সকলের কাছে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা।ওর পাশে আছি। সব রকম সাহায্য করব। ও যাতে দ্রুত কন্যাশ্রীর টাকা পায়, তার জন্য সমাজকল্যাণ দফতরকে বলেছি।’’ শ্রেয়ার হোমের এক কর্মীর কথায়, ‘‘মেয়ের মতো করেই আমরা বড় করেছি তিন বোনকে। শ্রেয়ার মতো মেয়ে যেন সব ঘরে জন্মায়।’’

Government home History
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy