Advertisement
০৪ মে ২০২৪
দান খয়রাত বনাম পুজোয় বাড়তি রোজগার
Durga Puja Donation

পুজো অনুদান প্রায় ১১ কোটি, তরজা

অনেক পুজো কমিটিই অনুদান নিতে ইচ্ছুক নয়। কিন্তু তা প্রত্যাখানের সাহসও তাঁরা পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

প্রতিমার চক্ষুদানে মগ্ন শিল্পী।

প্রতিমার চক্ষুদানে মগ্ন শিল্পী। ছবি : পার্থপ্রতিম দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:১২
Share: Save:

পুরুলিয়ার পুজো কমিটিগুলিকে অনুদান দিতে রাজ্যের খরচ হচ্ছে সাড়ে চার কোটি টাকার বেশি। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, এ বছরে অনুদান পাচ্ছে জেলার মোট ৬৫৫টি পুজো কমিটি। বাঁকুড়া জেলাতেও ৮৮৫টি পুজো কমিটি এ বারে অনুদান হিসাবে পাচ্ছে ৬ কোটিরও বেশি টাকা। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে দু’জেলায় বেশ কিছু পুজো উদ্বোধনের পরে পুজো কমিটিগুলিকে অনুদানের ৭০ হাজার টাকার চেক দেওয়া শুরু হয়েছে। গত বছরের তুলনায় অনুদান আরও দশ হাজার টাকা বাড়িয়ে পুজো কমিটিগুলির পাশে থাকার বার্তা আরও স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, মত সংশ্লিষ্ট মহলের। পাল্টা একে নিছক দান খয়রাতি বলে বিঁধতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা।

বিজেপির পুরুলিয়া তথা রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুজোয় রাজ্য সরকার অনুদান দিতেই পারে। তবে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন বন্ধ। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। স্বাস্থ্য পরিষেবাও বেহাল। আগে সেই দিকে নজর দেওয়া উচিত রাজ্যের।” সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ও মনে করাচ্ছেন, অতীতে সরকারি অনুদান ছাড়াই জেলায় জৌলুসের সঙ্গে দুর্গাপুজো হয়েছে। কোথাও তো কোনও ঘাটতি ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘আসলে অনুদান দেওয়ার মাধ্যমে সুচারু ভাবে শারদোৎসবে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে তৃণমূল।” তাঁর দাবি, অনেক পুজো কমিটিই অনুদান নিতে ইচ্ছুক নয়। কিন্তু তা প্রত্যাখানের সাহসও তাঁরা পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এ দিকে, একশো দিনের কাজের মজুরি বকেয়া থাকায় বহু শ্রমিক পরিবারই সমস্যায় রয়েছে জানিয়ে সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “কোটি কোটি টাকা এ ভাবে ব্যয় না করে পুজোয় গরিব মানুষের উন্নয়নমূলক কোনও প্রকল্পে বরাদ্দ করা হলে অনেকের মুখে হাসি ফুটত।” বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অমরনাথ শাখার আবার অভিযোগ, “এই দান খয়রাতি কেবল ভোটের স্বার্থে। দলের লোকজনকে পরোক্ষে সুবিধা করে দিতে দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এর বদলে পুজোর আগে ওই অর্থ দিয়ে বর্ষায় নষ্ট হয়ে যাওয়া রাস্তাঘাট সারাই করা হলে মানুষের মঙ্গল হত।”

যদিও বিরোধীদের বক্তব্য পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে দাবি শাসকদলের। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘গ্রামাঞ্চলের বহু পুজো আর্থিক কারণে ধুঁকছিল বা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আর্থিক অনুদান দিয়ে সেই পুজোগুলিকে বাঁচিয়ে তুলছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী আদতে বাঙালির শারদোৎসবের পুনরুজ্জীবন ঘটাচ্ছেন। সেই কারণে ইউনেস্কোর স্বীকৃতিও মিলেছে।” দলীয় তরফেও দাবি, আর্থিক কারণে সমস্ত পুজোকে অনুদান দেওয়া রাজ্যের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তালিকার বাইরে থাকা বহু পুজো কমিটিই ফি বছর অনুদান পেতে বিভিন্ন মহলে তদ্বির করছে।

তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র জানান, দুর্গাপুজোর সঙ্গে মৃৎশিল্পী থেকে ডেকরেটার্স ব্যবসায়ী, অনেকেই যুক্ত থাকেন। বহু মানুষ পুজোয় বাড়তি কাজ পান। তাঁর দাবি, “রাজ্য সরকারের অনুদান মিললে কমিটিগুলোর পুজোয় খরচের পরিমাণ বাড়বে। তাতে ঘুরপথে অনুদানের টাকা গরিব মানুষের হাতেই পৌঁছবে।”

অনুদান মেলায় পুজো পরিচালনায় অনেকটা সুরাহা হচ্ছে, জানাচ্ছে গ্রামাঞ্চলের অনেক পুজো কমিটি। বান্দোয়ানের ধাদকা সর্বজনীনের লাল্টু দাস বলেন, ‘‘পুজোর বাজেট ২ লক্ষ। কিন্তু গ্রামের পুজোয় সেই টাকা জোগাড় করাই বেশ মুশকিল। অনুদানের টাকা পাওয়ায় সুরাহা হচ্ছে।” নিতুড়িয়ার নবগ্রাম সর্বজনীনের প্রকাশ খাওয়াসও জানান, এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দা শ্রমিক। তাঁদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে দুর্গাপুজোর মতো বড় পুজোর খরচ বহন করা সহজ নয়।
রাজ্যের আর্থিক সাহায্য অনেকটাই সুবিধা দিচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purulia bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE