আলবার্ট আইনস্টাইনের আগেই পদার্থ এবং শক্তির তুল্যতার প্রমাণ আমাদের সংস্কৃতিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের এমন দাবিকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হল। দুর্গাপুরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এনআইটি) এক বক্তৃতায় এমন মন্তব্য করেন বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ। যা শুনে বিরোধীরা শিক্ষায় গৈরিকীকরণের অভিযোগ তুলেছে।
সম্প্রতি এনআইটি-র একটি অনুষ্ঠানে সুভাষ শিক্ষায় গৈরিকীকরণ নিয়ে বিরোধীদের তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলেন। সে প্রসঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, “আমাদের সংস্কৃতিতে যে বিজ্ঞান আছে, সেটা মানুষকে জানতে হবে। এটা সত্যি কথা। যেমন, আইনস্টাইন বলেছেন, E=mc²। আমরা বহু আগেই পদার্থ ও শক্তির সমন্বয়ের কথা বলেছি। আমরা বলেছি, ‘সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম’। এটা গৈরিকীকরণ নয়। ‘শূন্য’ ভারতবর্ষ দিয়েছে। তা হলে গৈরিকীকরণ করছে বলে শূন্যকে ত্যাগ করে দাও না! পারবে?”
সুভাষের এমন কথার সমালোচনা করেছেন পদার্থবিদ্যা জগতের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক, গবেষকদের একাংশ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “যাঁরা মহাভারতের কর্ণের জন্মের মধ্যে স্টেম সেলের গবেষণা বা গণেশের মাথার মধ্যে প্লাস্টিক সার্জারির প্রমাণ পান, তাঁরা পদার্থ ও শক্তির তুল্যতার প্রমাণ আইনস্টাইনের আগেই জানবেন, এটাই স্বাভাবিক। এ বার হয়তো দেখা যাবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা কোয়ান্টাম কম্পিউটিংও এঁরা অনেক আগেই জানতেন।” এ ধরনের প্রবণতাকে আদতে বিজ্ঞানকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হিসেবেই দেখছেন অধ্যাপক রায়।
ঘটনা হল, আইনস্টাইন নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের মন্তব্য এই প্রথম নয়। বছর কয়েক আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল দাবি করেছিলেন, মাধ্যাকর্ষণের আবিষ্কর্তা হলেন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। পরে অবশ্য তিনি বিষয়টি ভুল করে বলেছিলেন বলে স্বীকার করেন। বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্কও তৈরি হয়েছিল।
তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের (দাশু) প্রতিক্রিয়া, “উনি আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এটি আসলে আরএসএসের নিজস্ব তত্ত্ব জনমানসে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। ইতিহাস, বিজ্ঞান-সহ সব জায়গায় গৈরিকীকরণের প্রবণতার উদাহরণ এই মন্তব্য।” সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “কী ভাবে এটা উনি বললেন! আসলে যাঁরা নির্বোধ এবং অশিক্ষিত, তাঁরাই শিক্ষার সঙ্গে ধর্মকে যুক্ত করার চেষ্টা করেন।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)