ডিএ আন্দোলনের পাশে শুভেন্দু। ফাইল চিত্র।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র দাবিতে আন্দোলন করা সরকারি কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে শহিদ মিনারের অবস্থান মঞ্চে গেলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আন্দোলনরত কর্মীদের আশ্বস্ত করে তিনি আবারও জানালেন, রাজ্যের বিরোধী দল হিসাবে এই আন্দোলনের পাশে থাকবে বিজেপি। আন্দোলনকারীরা যাতে নিজেদের দাবি থেকে না সরেন, সেই বার্তা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ধার করে শুভেন্দু বলেন, “পথই পথ দেখাবে। তাই আপনারা পথ ছাড়বেন না। আন্দোলন চালিয়ে যান।”
শুভেন্দুর অভিযোগ, রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের পরামর্শে প্রায় ৬ লক্ষ সরকারি পদ ‘অবলুপ্ত’ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কাজ সামলাতে ৬০ হাজার পদে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, এই সমস্ত অস্থায়ী পদে তৃণমূলের লোকজনকে বসানো হয়েছে। সিভিকদের দিয়ে রাজ্য চলছে বলেও তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করেন তিনি। সরকারি কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “সরকার যদি বলে ডিএ দেওয়ার মতো পয়সা নেই, তবে বলুন পয়সা জোগানোর দায়িত্ব আমাদের নয়।” রাজ্য সরকার ‘দেউলিয়া’ হয়ে গিয়েছে বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। আন্দোলনকারীদের উজ্জীবিত করতে শুভেন্দু বলেন, “এই রাজ্যের এক জন জনপ্রতিনিধি হিসাবে বলছি, আপনারা ট্রাইব্যুনালে যেমন পেয়েছেন, যেমন হাই কোর্টে জয় পেয়েছেন, তেমনই নিশ্চিত ভাবেই সুপ্রিম কোর্টেও জয় পাবেন।” তিনি এই মন্তব্য করার পরেই করতালি দিয়ে তাঁকে অভিবাদন জানান যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের সদস্যেরা।
বামেদের পাশাপাশি তাঁরাও যে এই আন্দোলনের পাশে আছেন, তা বোঝাতে শুভেন্দু বলেন, “এই আন্দোলনের পাশে যেমন বিকাশবাবুরা আছেন, তেমন আমরাও আছি। আপনারা যাতে জিততে পারেন, তার জন্য ভাল ভাল আইনজীবী দিয়েছি। আরও ভাল আইনজীবী দেব। আপনাদের জয় নিশ্চিত। আপনারা নিজেদের দাবি থেকে সরবেন না।” বৃহস্পতিবার শহিদ মিনারের অবস্থান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এবং মহম্মদ সেলিম। আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের পাশে দাঁড়াতে কংগ্রেস নেতা কৌস্তুভ বাগচীও উপস্থিত ছিলেন ওই মঞ্চে। কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ না দিতে পারার জন্য তো বটেই, বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর ডিএ আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য নিয়েও সরব হন তাঁরা। মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে কৌস্তুভ বলেন, “এই রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও রকম সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ করা যাবে না। লাগাতার অসহযোগ আন্দোলন করতে হবে। যত দিন না দাবি আদায় হয়, তত দিন এই আন্দোলন চলবে।” বিরোধী দলনেতার বক্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র বিশ্বজিৎ দেব বলেন, “বিরোধী দলনেতা আইনটাই বোঝেন না। ডিএ কোনও অধিকার নয়। কোথাও লেখা নেই যে, কেন্দ্রীয় হারে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দিতে হবে। শুভেন্দু রাজনৈতিক কারণে আন্দোলনকারীদের উস্কানি দিতে গিয়েছেন।”
বকেয়া ডিএ-র দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরেই আন্দোলন করছে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ। মূলত এই সংগঠনের উদ্যোগেই বৃহস্পতিবার শহিদ মিনার ময়দানে মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছিল। শহিদ মিনারমুখী দু’টি মিছিল থেকেই সরকার বিরোধী স্লোগান ওঠে। কখনও স্লোগান তুলে বলা হয়, “ডিএ দিতে না পারা সরকার, আর নেই দরকার”, কখনও বা পুলিশের কাছে গিয়ে সমস্বরে বলা হয়, “পুলিশ তোমার ডিএ বাকি, এই মিছিলে হাঁটবে নাকি?”
যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে তাপস চক্রবর্তী বলেন, “আমরা তিনটি দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাব। এআইসিপিআই অনুযায়ী কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ দ্রুত মিটিয়ে দিতে হবে। সমস্ত শূন্যপদে দ্রুত এবং স্থায়ী নিয়োগ করতে হবে এবং সরকারি বিভিন্ন পদে যোগ্য এবং অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী পদে নিযুক্ত করতে হবে।” মুখ্যমন্ত্রীর চোর-ডাকাত মন্তব্য নিয়েও সরব হন তিনি। গত বুধবারই ধর্নামঞ্চ থেকে ডিএ-র দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ‘চোর-ডাকাত’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে দাঁড়িয়েই বললেন, ‘‘এরা সব চিরকুটে চাকরি পেয়েছিল, সেই চোর-ডাকাতগুলোই গিয়ে বসে আছে ডিএ-র মঞ্চে।’’ এই প্রসঙ্গে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের বক্তব্য, “আমরা দাবি আদায়ের জন্য লড়াই করছি। অথচ মুখ্যমন্ত্রী আমাদের চোর-ডাকাত বলে দেগে দিচ্ছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy