বিহারের পরে বাংলাতেও ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) নামে ‘বৈধ’ ভোটারের নাম কাটা যাবে, এই আশঙ্কায় টানা আন্দোলন করছে তৃণমূল কংগ্রেস, বাম, কংগ্রেস। তার মোকাবিলায় অনুপ্রবেশ-তত্ত্বে সুর সপ্তমে নিয়ে যাচ্ছে বিজেপি! বাংলায় অনুপ্রবেশকারী-মুক্ত ভোটার তালিকার দাবির পাশাপাশিই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, কলকাতার কাছে নানা এলাকা ‘বাংলাদেশি মুসলমানদের ডেরা’ হয়ে গিয়েছে। এসআইআর-কে সামনে রেখেই বিজেপি-কমিশনের ‘আঁতাঁতে’র অভিযোগে পাল্টা সরব হয়েছে তৃণমূল-সহ অন্য দলগুলি।
নন্দীগ্রামে রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শুভেন্দু দাবি করেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি মুসলমান-মুক্ত ভোটার তালিকা চাই। সমাজমাধ্যমে পরিচয় করে বহু বাংলাদেশি মুসলমান বাবার নাম পরিবর্তন করে এই দেশে ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ড তৈরি করেছেন। এই রকম তালিকা প্রায় এক লক্ষ।” এর সঙ্গেই এক্স হ্যান্ড্লে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে বিরোধী নেতার দাবি, “বাগুইআটির উপকণ্ঠে নিউ টাউন, রাজারহাট অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমানদের ডেরা। এঁদের পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে প্রশাসনের সহযোগিতায় জাল ভারতীয় পরিচয় ও নথি তৈরি করে দিচ্ছে তৃণমূল। এঁদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে। অবৈধ বাংলাদেশিদের আস্তানা কলকাতার চৌহদ্দি ছুঁয়েছে। এর পরে কলকাতার মধ্যে অবস্থান করবে।” এই ‘অনুপ্রবেশকারী’দের বাংলাদেশে ফেরত পাঠালে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটব্যাঙ্ক ও তৃণমূলের অস্ত্বিত্ব সঙ্কটের মুখে পড়বে বলে দাবি করেছেন তিনি। ভোটের দিকে তাকিয়েই মমতা ‘অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের স্বার্থে’ কর্মসূচি নিচ্ছেন দাবি করে, তার বিপরীতে বিহার সরকারের ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁর মন্তব্য, “বিহার সরকার কমিশনকে সহযোগিতা করেছে। বিহারে ৪০৩ জন বিএলও-র নামে এফআইআর, ৫৩ জন বিএলও-কে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
বিশেষ নিবিড় সমীক্ষার (এসআইআর) নামে ভোটাধিকার খর্ব করার প্রতিবাদে কংগ্রেসের বিক্ষোভ। দক্ষিণ কলকাতায়। —নিজস্ব চিত্র।
কমিশন ও শুভেন্দু তথা বিজেপির ‘সংযোগ’ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে বাংলার শাসক দল। তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, “শুভেন্দু নির্বাচন কমিশনে যোগ দিয়েছেন, না কি বিজেপিই এখন নির্বাচন কমিশনের কাজ পরিচালনা করছে? বিজেপি নেতারা মানুষের কাছে গেলে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারবেন।” তাঁর আরও দাবি, “অর্থহীন কথা না-বলে বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষীদের উপরে যে নির্যাতন চলছে, ওঁরা সে দিকে নজর দিন।”
এসআইআর বাতিল চেয়ে এবং কমিশন-বিজেপির ‘আঁতাঁতে’র অভিযোগ তুলে দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের ডাকে নেতা-কর্মীরা এ দিন যদুবাবুর বাজার মোড়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। জেলা সভাপতি প্রদীপ প্রসাদের দাবি, “বিহারে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ যেতে পারে। বিজেপি-বিরোধী ভোটারদের বেছে বেছে নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর কমিশনকে প্রশ্ন করলে বিজেপি নেতারা উত্তর দিচ্ছেন!” এর পাশাপাশি, রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্যে রোহিঙ্গার সংখ্যা যেখানে ১৪ লক্ষ বলা হয়েছে, সেখানে বাংলায় এক কোটি ২৫ লক্ষ রোহিঙ্গার কথা বিজেপি নেতারা কী ভাবে বলছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, “গল্পের গরু গাছে উঠছে! রোহিঙ্গাদের বিষয়টা কয়েক বছর হল এসেছে। মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ হয়ে থাকলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতর ঘেরাও করতে হবে! বিজেপি নেতারা সেটা করবেন?” রাজারহাট-নিউ টাউনের জনবিন্যাস বদল প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতার দাবির প্রেক্ষিতে সুজনের বক্তব্য, “ভাঙড়, রাজারহাটের পুরনো বাসিন্দারা যেখানে থাকতেন, সেখানেই নিউটাউন প্রসারিত হয়েছে ও হচ্ছে। পুরনো বাসিন্দাদের অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দেওয়া বিজেপির রাজনীতির অঙ্গ।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)