Advertisement
E-Paper

টেস্টে মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতিতে উদ্বিগ্ন শিক্ষকমহল

শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলের টেস্টে ব্যাপক অনুপস্থিতির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে করোনার কথা বলছেন। তবে সেই সঙ্গে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণের কথা উঠে আসছে।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২২ ০৮:৪৫
সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতেই অনেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আর টেস্টে বসছে না, এই ধরনের অভিযোগও বিস্তর।

সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতেই অনেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আর টেস্টে বসছে না, এই ধরনের অভিযোগও বিস্তর। ফাইল চিত্র।

অতিমারির পরাক্রমে ২০২০ আর ২০২১ সালে বোর্ড পরীক্ষা তো দূরের কথা, স্কুলের টেস্টও হয়নি। এ বার দশম ও দ্বাদশের চূড়ান্তে পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তার আগে ওই জোড়া পরীক্ষার আগে টেস্টের গুরুত্ব বেড়েছে। কারণ, করোনার জন্য দেড়-দু’বছর শ্রেণিকক্ষের পাঠ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কে কতটা বোর্ড পরীক্ষার জন্য তৈরি হতে পেরেছে, তার একটা খতিয়ান পেতে টেস্ট দরকার। অথচ কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ১৭ নভেম্বর শুরু হওয়া সেই যাচাই পরীক্ষায় রাজ্যের বহু স্কুলে মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর উপস্থিতির হার অন্যান্য বারের থেকে অনেক কম! এতে স্কুলশিক্ষা নিয়েই উদ্বেগ বাড়ছে।

শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলের টেস্টে ব্যাপক অনুপস্থিতির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে করোনার কথা বলছেন। তবে সেই সঙ্গে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণের কথা উঠে আসছে। যেমন আর্থিক দুরবস্থা, যেমন চাকরি না-থাকার হতাশা। রাজ্যে চাকরির দাবিতে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী পদের প্রার্থীদের লাগাতার আন্দোলন কি তা হলে জনমানসে এতটাই প্রভাব বিস্তার করছে, উঠছে সেই প্রশ্নও।

নিছক সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতেই অনেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আর টেস্টে বসছে না, এই ধরনের অভিযোগও বিস্তর। এই ধরনের পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে ট্যাব কেনার টাকা ঢুকে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঝাঁপবেড়িয়া হাইস্কুলের শিক্ষক অনিমেষ হালদার বলেন, “মাধ্যমিকের টেস্টে এত বেশি অনুপস্থিতি দেখে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, করোনার সময় পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় এবং স্কুল বন্ধ থাকায় বেশ কিছু পড়ুয়া কাজ নিয়ে চলে গিয়েছে ভিন্‌ রাজ্যে। তারা আর ফেরেনি। কিছু ছাত্রীর আবার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।” পরিবারের আর্থিক অসঙ্গতিই এর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি এবং হাওড়ার বাঁকড়া বাদামতলা গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিনু পালের মতে, উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে বদলি নিয়ে গ্রামগঞ্জ থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা শহরে চলে যাওয়ায় গ্রামীণ এলাকার অনেক স্কুলেই শিক্ষকের সংখ্যা কমে গিয়েছে। অনেক জায়গাতেই নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। ফলে স্কুলে যাওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে পড়ুয়ারা।

মোক্ষম প্রশ্ন তুলেছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবকদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, পড়াশোনা করে চাকরি পাবে কি? সেই তো রাস্তায় বসে আন্দোলন করতে হবে! তার থেকে হাতে-কলমে কাজ শিখলে অনেক আগে থেকে রোজগার করতে পারবে।

স্কুলপ্রধানদের অনেকেই টেস্টে গরহাজিরার কারণ হিসেবে পাঠগত দুর্বলতার কথা বলছেন। লাভপুরের সত্যনারায়ণ শিক্ষা নিকেতন গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মনীষা প্রধান বলেন, “এ বার যারা উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট দিচ্ছে, তারা ২০২১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল। সে-বার করোনায় সকলেই পাশ করে গিয়েছিল। অথচ তাদের সকলেই পাশের যোগ্য ছিল না। তার পরে একাদশ থেকে দ্বাদশেও সবাই উঠে গিয়েছিল। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে তো আর সবাই পাশ করবে না।’’ মনীষার মতে, এ কথা সেই সব পড়ুয়া বা তাদের পরিবার বিলক্ষণ বুঝেছে। তাই যারা একাদশেও পড়াশোনা করেনি, তারা আর টেস্টে বসছে না।

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ, দ্বাদশে উঠলেই পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা দিয়ে দেওয়ারও প্রভাব রয়েছে এতে। যারা টেস্টে বসেনি, তাদের অ্যাকাউন্টেও ওই টাকা ঢুকে গিয়েছে। অথচ রাজ্য সরকারের বক্তব্য, ট্যাব দেওয়া হচ্ছে উচ্চশিক্ষায় ব্যবহার করার জন্য। অভিযোগ, অনেকে শুধু উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পর্যন্ত স্কুলে যাতায়াত করেছে ওই টাকাটার দিকে তাকিয়ে। টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকতেই তাদের আর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।

Students Higher Secondary Secondary Examination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy