Advertisement
০২ মে ২০২৪
Abhishek Banerjee At Thakurnagar

ঠাকুরবাড়ির গোষ্ঠীকলহে শান্তনুই বেশি শক্তিমান! অভিষেককে মূল মন্দিরে ঢোকাতে ব্যর্থ মমতাবালা

ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে মূল মন্দিরে ঢুকতে পারলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে রবিবার দিনভর সরগরম রইল রাজ্য রাজনীতি। শান্তনু ঠাকুরকে হুঁশিয়ারি দিলেন অভিষেক। পাল্টা সরব শান্তনুও।

photo of Shantanu Thakur, Abhishek Banerjee and Mamatabala Thakur

শান্তনু ঠাকুর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতাবালা ঠাকুর। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ঠাকুরনগর শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ ২২:৩৪
Share: Save:

ঠাকুরনগরে গিয়ে মূল মন্দিরে পুজো দিতে পারলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মন্দিরে ঢোকা আটকে দিতে মুখ্য ভূমিকা নিলেন স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। শুধু এই পরিচয়ই নয়, শান্তনুর আরও একটি পরিচয় হল তিনি, মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি। ফলে শান্তনুর জয় শুধু বিজেপি সাংসদ হিসাবে তৃণমূল সাংসদ অভিষেককে আটকে দেওয়াতেই নয়, সেই সঙ্গে ঠাকুর পরিবারের অন্দরের লড়াইতেও এগিয়ে থাকা। কারণ, ঠাকুরনগরের ঠাকুর পরিবার রাজনৈতিক ভাবেই দু’ভাগ। এক ভাগে শান্তনু এবং তাঁর ভাই তথা গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর। অন্য ভাগে রয়েছেন, তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। দলের নেতা অভিষেককে নিয়ে মমতাবালাই ঢুকতে গিয়েছিলেন নিজেদের মন্দিরে। কিন্তু পারলেন না। ফলে ঠাকুরনগরের বাসিন্দারা বলছেন, ঠাকুরবাড়ির লড়াইয়ে মমতাবালাকে পিছনে রেখে এগিয়ে গেলেন শান্তনু। তবে রাজনৈতিক লড়াইটা হয়েছে সমানে সমানে। যা সকালে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়িয়েছে।

ঠাকুরনগরে অভিষেকের এই সফর ঘিরে রবিবার দিনভর তেতে রইল রাজ্য রাজনীতি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মতুয়াদের নিয়ে তৃণমূল বনাম বিজেপি উত্তাপ নতুন মাত্রা পেল। শান্তনুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রতি ৩ মাস অন্তর ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার কথা জানিয়েছেন অভিষেক। আবার অভিষেককে ‘শিশু’ বলে কটাক্ষ করেছেন শান্তনু। এই পর্বে ঠাকুরবাড়ির অন্দরের রাজনৈতিক সংঘাতও তীব্র হয়েছে। শান্তনুকে ‘বংশের কুলাঙ্গার’ বলে আক্রমণ করেছেন মমতাবালা ঠাকুর।

কী ঘটল ঠাকুরবাড়িতে

রবিবার ঠাকুরবাড়িতে পুজো দিতে গিয়েছিলেন অভিষেক। এই কর্মসূচি ঘিরে রবিবার সকাল থেকেই বনগাঁর ঠাকুরনগরে প্রশাসনিক ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। বিজেপির বিক্ষোভ ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কায় পুলিশের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যস্ততাও ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, বিধানসভার মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষ, দলের বিধায়ক তাপস রায়েরা উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে ৪টে নাগাদ ঠাকুরনগরে পৌঁছয় অভিষেকের কনভয়। ঠাকুরবাড়ির সামনেই অনুগামীদের নিয়ে হাজির ছিলেন শান্তনু। সঙ্গে ছিলেন বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া। ২ দলের সমর্থকদের মধ্যে বাদানুবাদের মধ্যেই মূল মন্দিরে ঢুকে পড়েন শান্তনু। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। ফলে মূল মন্দিরে আর প্রবেশ করা হয়নি অভিষেকের। অপেক্ষার পরে পাশেই অন্য ১টি মন্দিরে পুজো দেন অভিষেক। তৃণমূল সাংসদের উদ্দেশে ‘চোর চোর’ স্লোগান দেওয়া হয়।

অভিষেকের চ্যালেঞ্জ

মূল মন্দিরে ঢুকতে না পেরে সরব হন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আমার কোনও কর্মসূচি ঠাকুরনগরে ছিল না। ছিল ২০ কিলোমিটার দূরে হাবড়ায়। কিন্তু আমি এখানে এসেছিলাম পুজো দিতে। দরজা বন্ধ করে আমাকে পুজো দিতে দেওয়া হল না। বিজেপি এবং শান্তনু ঠাকুর মিলে এই কাজ করেছে। আমি তার জবাব দেওয়ার দায়িত্ব এখানকার জনগণকে দিয়ে রাখলাম।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ঠাকুরবাড়ি কারও একার সম্পত্তি নয়।’’ এর পরেই চ্যালেঞ্জের সুরে অভিষেক বলেন, ‘‘চাইলে ভিড় ভেঙে ঢুকতে ৫ মিনিট লাগবে। এখানে বিজেপির ২৫০ কর্মী থাকলে আমাদের ৫ হাজার কর্মী রয়েছে। কিন্তু আমি অশান্তি চাই না।’’ প্রতি ৩ মাস অন্তর ঠাকুরবাড়িতে যাওয়ার কথা জানান অভিষেক। ঠাকুরনগরে তৃণমূল উন্নয়নমূলক কাজ করার প্রসঙ্গ টানেন অভিষেক। প্রয়াত বড়মা বীণাপাণীদেবীর চিকিৎসাও যে তৃণমূল করেছিল, সে কথাও তুলে ধরেন তিনি।

অভিষেককে পাল্টা শান্তনুর

অভিষেকের চ্যালেঞ্জের পাল্টা সরব হয়েছেন শান্তনু ঠাকুর। এক টিভি চ্যানেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘উনি (অভিষেক) ঢুকতে পারেননি এটা বড় কথা। ৫ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করে আসতে হয়েছে। আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তবুও আমার সঙ্গে এত পুলিশ থাকে না। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গরম দেখানো যায়। একা পুজো দিতে আসুন। দেখব কত দম আছে।’’ অভিষেককে ‘শিশু’ বলেও কটাক্ষ করেন শান্তনু। বলেন, ‘‘ও শিশু। বাংলা সম্পর্কে এখনও অনেক জানতে হবে। ওঁর চ্যালেঞ্জ অনেক দেখেছি। ওঁর চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি না।’’ অভিষেকের মন্দিরে পুজো দেওয়ার প্রসঙ্গে শান্তনু বলেন, ‘‘ভোট (পঞ্চায়েত) ঘোষণা হতে এখন পুজো দিতে এসেছেন কেন? এত দিন কোথায় ছিলেন!’’ অভিষেকের সফরের পরে মন্দির-সহ গোটা ঠাকুরবাড়িকে গোবরজল দিয়ে ধুয়ে পবিত্র করার কথা বলেন শান্তনু।

ঠাকুরবাড়ি সরগরম

অভিষেকের সফর এবং তাঁকে মূল মন্দিরে ঢুকতে না দেওয়া— এই উত্তাপের আঁচ ছড়াল ঠাকুরবাড়ির অন্দরেও। রাজনৈতিক দিক থেকে ঠাকুরবাড়ি ২ ভাগে বিভক্ত। এক দিকে, তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। অপর দিকে, বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। মমতাবালা সম্পর্কে শান্তনুর জেঠিমা হন। মমতাবালা বনাম শান্তনু দ্বৈরথের কথা সর্বজনবিদিত। ২০১৫ সালে লোকসভা উপনির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন মমতাবালা। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে মমতাবালাকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন বিজেপির শান্তনু। তার পর বিভিন্ন সময়ে ঠাকুরবাড়ির দুই বিবদমান গোষ্ঠীর লড়াই প্রকাশ্যে এসেছে। রবিবারের ঘটনায় সেই সংঘাত নতুন মাত্রা পেল। শান্তনুকে ‘বংশের কুলাঙ্গার’ বলে আক্রমণ করেছেন মমতাবালা। বলেছেন, ‘‘কুলাঙ্গার হলে যা হয়। কেউ যদি ঠাকুরবাড়িতে পুজো দিতে আসেন, তাঁর সঙ্গে যদি এমন ব্যবহার করা হয়, তা হলে সে বংশের কুলাঙ্গার। নোংরামি করেছে।’’ মমতাবালার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ করেছেন শান্তনুও। বলেছেন, ‘‘মমতাবালা ঠাকুরবাড়িতে পরগাছা। তা লোকে প্রমাণ করে দিয়েছে।’’

তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ

অভিষেক ঠাকুরনগর ছাড়ার পরই তৃণমূল এবং বিজেপির সংঘর্ষ শুরু হয়। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজনের মারে তাদের বেশ কয়েক জন আহত হন। তৃণমূলও হামলার অভিযোগ করেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। আহতদের আলাদা আলাদা ভাবে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের রাজনৈতিক সতীর্থরা। সেখানেও দুই দলের সমর্থকরা হাতাহাতিতে জড়ান। তাঁদের মারধর করা হয়েছে বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন শান্তনু এবং বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া। হাসপাতালে মারামারির সময় বেশ কয়েক জনকে আটক করেছে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মীও আহত হন। সব মিলিয়ে সকাল থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক উত্তেজনা সন্ধ্যাতেও বহাল মতুয়া অধ্যুষিত ঠাকুরনগরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee Matua Shantanu Thakur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE