রবিবার হয়ে গেল দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দির পুজো কমিটির খুঁটিপুজো। নিজস্ব চিত্র।
সোমবার রথযাত্রা। রীতি অনুযায়ী এই দিন থেকেই দুর্গা প্রতিমার কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করেন পটুয়ারা। আবার কলকাতার বারোয়ারি পুজো উদ্যোক্তারা অনেকেই এই দিনটিতে খুঁটি পুজোর অনুষ্ঠান করে থাকেন। কিন্তু গত বছর থেকে শুরু হওয়া করোনা অতিমারির ধাক্কায় সব কিছু ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। তাই ২০২১ সালের শারদোৎসব কী ভাবে হবে, তা নিয়ে এখনই ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছে কলকাতার পুজো কমিটিগুলি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত খুঁটি পুজো শুরু হত পয়লা বৈশাখ থেকে। কিন্তু এ বছর এখনও পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি পুজো কমিটি খুঁটি পুজো করলেও, বেশির ভাগই তা বাতিল করে দিয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম বড় পুজো হল চেতলা অগ্রণী-র। পরিবহণ মন্ত্রী ‘ফিরহাদ হাকিমের পুজো’ বলেই খ্যাতি এই জমকালো পুজোটির। ফিরহাদ জানিয়েছেন, এ বার আর খুঁটি পুজো হবে না। সরাসরি পুজোই হবে, তাও ছোট করে।
দক্ষিণ কলকাতার আর একটি বড় পুজো কমিটি হল শিবমন্দির। রবিবার তাদের খুঁটি পুজো হল জৌলুসহীন ভাবেই। শিবমন্দির পুজো কমিটির সদস্য পার্থ ঘোষ বললেন, ‘‘কোনও রকমে খুঁটি পুজো করা হল। কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ দেখে আমরা পুজো নিয়ে দু‘তিন ধরনের পরিকল্পনা রেখেছি। কোভি্ডের তৃতীয় ঢে়উ এলে এক রকম ভাবনা, দ্বিতীয় ঢেউ বহাল থাকলে আরও এক রকমের ভাবনা রয়েছে। তবে পুজো এ বার হবে খুবই ছোট পরিসরে।’’ উত্তর কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো কমিটি গত বছর সর্বপ্রথম নিজেদের মণ্ডপের দরজা সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছিল। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আবারও সেই পথে হাঁটতে পারেন কর্মকর্তারা। পুজো কমিটির সম্পাদক সজল ঘোষ বলেছেন, ‘‘বড় পুজো করা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। আমাদের খুঁটি পুজো হবে জন্মষ্টামীর দিন। আর ছোট পুজো করলেও কোভিড সংক্রমণ ও তা নিয়ে গত বছর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মাথায় রাখতে হয়েছে। তবে প্রয়োজন হলে, গত বারের মতো আবারও আমরা পুজোর দরজা সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ করে দেব।’’ হাতিবাগান নবীন পল্লির পুজোর কর্তা শৌভিক ভড় বলছেন, ‘‘করোনা সংক্রমণে আমাদের পুজোর অনেক বরিষ্ঠ কর্মকর্তা মারা গিয়েছেন। তাই এ বার খুঁটিপুজোর আয়োজন হচ্ছে না। পুজোও হবে খুবই ছোট করে।’’ টালাপার্ক প্রত্যয় আবার মে মাসেই নিজেদের পুজোর তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। তবে খুঁটি পুজো নয়, কোভিড সংক্রমণে এলাকার মানুষকে সহায়তা দিতে একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে তারা। তাদের কর্মকর্তা শুভাশিস সোম বলেছেন, ‘‘খুঁটি পুজো নয়, এবার আমরা সামাজিক দায়িত্ব পালনের মধ্যে দিয়েই পুজোর সূচনা করেছি।’’
রাজডাঙা নবোদয় সংঘের পুজোকর্তা তথা কলকাতা পুরসভার ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর সুশান্ত ঘোষ বলেছেন, ‘‘খুঁটি পুজো এ বার হবে না। আগে পুজোয় ১০০ টাকা খরচ হলে, এ বার পুজো করতে হবে ৩০ টাকায়।’’ খিদিরপুর ২৫ পল্লির কর্মকর্তা কালী সাহা বলেছেন, ‘‘খুঁটি পুজো হয়তো হবে। কিন্তু আকারে তা অনেকটাই ছোট হয়ে যাবে। পুজো করার ক্ষেত্রে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের বিষয়টিকে মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছুটা সময় লাগছে।’’ আবার বেহালা দেবদারু ফটকের কর্মকর্তা অতনু ঘোষ বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছে এখন প্রথম লক্ষ্য এমনভাবে পুজো করা। যাতে কেউ সেখান থেকে সংক্রমিত না হয়ে পড়েন। তাই আমরা স্থির করেছি, মণ্ডপ নির্মাণ থেকে বিদ্যুৎকর্মী, সকলকেই কোভিডের টিকা নিয়েই আমাদের পুজোয় যুক্ত হতে পারবেন।’’ করোনা সংক্রমণের কারণে যে আর্থিক বিপর্যয় নেমে এসেছে তাতে কর্পোরেট সংস্থাগুলিও পুজোয় বিনিয়োগে আর আগের মতো এগিয়ে আসছে না। তাই এ বার বেশির ভাগ পুজোর আয়োজন ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy