Advertisement
E-Paper

রাজ্যের দুর্গাপুজোতেও এ বার নজর আয়করের, ৪০টি প্রধান পুজো কমিটিকে তলব

আগামী সোম ও মঙ্গলবার ওই পুজো কমিটিগুলির কর্তাদের গত বছরের পুজোর সবিস্তার হিসেব নিয়ে আয়কর ভবনে দেখা করতে বলা হয়েছে। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

এ রাজ্যের দুর্গাপুজোয় খরচ হয় কয়েক হাজার কোটি টাকা। প্রতিমাশিল্পী থেকে আলোর কারিগর, মণ্ডপ পরিকল্পক থেকে ডেকরেটর— সকলকে টাকা মেটায় পুজো কমিটি। অথচ সে বাবদ উৎসমূলে কর কেটে (ট্যাক্স ডিডাকটেড অ্যাট সোর্স বা টিডিএস) তা আয়কর দফতরের কাছে জমা করে না তাদের প্রায় কেউই। এ বার সে দিকে নজর দিয়ে কলকাতার ৪০টি প্রধান পুজো কমিটিকে তলব করল আয়কর দফতর। আগামী সোম ও মঙ্গলবার ওই পুজো কমিটিগুলির কর্তাদের গত বছরের পুজোর সবিস্তার হিসেব নিয়ে আয়কর ভবনে দেখা করতে বলা হয়েছে।

আয়কর দফতরের হিসেব, ২০১৮ সালে রাজ্যে দুর্গাপুজোয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘হয়তো দু’-একটি কমিটি টিডিএস কেটে জমা দিচ্ছেন। কিন্তু, বেশির ভাগই যে দিচ্ছে না সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত।’’ অথচ, ১৯৬১ সালের আয়কর আইন অনুযায়ী কাউকে তাঁর কাজের বিনিময়ে কোনও টাকা দেওয়া হলে টিডিএস কাটতে হবে এবং তা আয়কর দফতরে জমা করতে হবে। এক আয়কর কর্তার কথায়, ‘‘এখন তো থিম পুজোর রমরমা। তা করা হচ্ছে পেশাদারদের সাহায্য নিয়ে। সে ক্ষেত্রে খরচের ১০ শতাংশ আয়কর দফতরের পাওয়ার কথা।’’

কিন্তু হঠাৎ দুর্গাপুজোর দিকে নজর পড়ল কেন? আয়কর দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, এ রাজ্য থেকে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের পরিমাণ আশানুরূপ নয়। ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে যেখানে সারা ভারতে কর আদায় ১৩.৫% বেড়েছে, পশ্চিমবঙ্গে বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র ৭.৫%। তাই, এ রাজ্য থেকে কর আদায়ের উপরে জোর দিতে বলা হয়েছে। তাতেই চোখ পড়েছে এত দিন উপেক্ষিত এই ক্ষেত্রে। কারণ, পুজোর খরচ ৫ হাজার কোটি টাকা হলে কর বাবদ আয়কর দফতরের পাওনা হবে ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

আরও পড়ুন: সাগরের স্কুলে নিয়োগ করা হবে স্থায়ী শিক্ষিকা

আয়কর দফতরের চিঠি পেয়ে ধন্দে পড়েছে পুজো কমিটিগুলি। প্রথমত ২০১৮ সালে খরচের উপরে এখন টিডিএস কাটা হবে, নাকি ২০১৯ সাল থেকে কাটা হবে, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নয়। জানা গিয়েছে, বড়িশার মতো কয়েকটি ক্লাব শুধু শিল্পীদের টাকা দেওয়ার সময়ে গত কয়েক বছর টিডিএস কেটে আয়কর দফতরে জমা দিয়েছে। আবার হিন্দুস্তান পার্কের মতো পুজো কখনই টিডিএস কাটেনি।

আরও পড়ুন: কর্মীদের হাজিরার নির্দেশ, ধর্মঘট রুখতে তৈরি প্রশাসন

হিন্দুস্তান পার্ক পুজোর উদ্যোক্তা সুতপা দাস বলেন, ‘‘শিল্পী থেকে ঢাকি — কেউ তো আর টাকা কম নেবেন না। ফলে, টিডিএস-এর টাকা আমাদের উপরেই বর্তাবে। বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’’ কোনও কোনও পুজো-কর্তার আবার বক্তব্য, এ বছর পুজো কমিটিগুলিকে রাজ্য সরকার যে অনুদান দিয়েছে, এটা ঘুরপথে তা কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র হতে পারে।

কাশী বোস লেন পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা সোমেন দত্তের কথায়, ‘‘শুধু শিল্পীদের ক্ষেত্রে টিডিএস কাটা সম্ভব। বাকি তো গ্রাম থেকে গরিব কারিগরেরা এসে কাজ করেন। তাঁদের বেশির ভাগেরই প্যান কার্ড নেই। তা ছাড়া এত হিসেব কে রাখবে? পুজো করব, না এ সব করব?’’

শুধু এ রাজ্যের পুজোয় কেন নজর দিল আয়কর দফতর, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। তাঁদের মতে, মুম্বইয়ের গণেশপুজোয় তো এর থেকে অনেক বেশি জাঁকজমক হয়। সেখান থেকে কি কর চাওয়া হচ্ছে? কেউ কেউ আবার এর পিছনে ভোটের বছরে রাজনীতির অঙ্কও দেখছেন। কারণ, কলকাতার প্রধান পুজোগুলির বেশির ভাগেরই উদ্যোক্তা হয় রাজ্যের মন্ত্রী, নয়তো তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা। তাঁদের চাপে রাখতেও আয়কর দফতর এমন পদক্ষেপ করে থাকতে পারে বলে গুঞ্জন।

Income Tax department Kolkata Durag Puja Committee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy