Advertisement
০২ মে ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

বাকি বাহিনী আসবে না ধরে নিয়েই তৈরি হচ্ছেন রাজীব, সোমে শুনানি হাই কোর্টে, তাকিয়ে সব পক্ষ

কেন্দ্রের কাছে ৮২২ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে আবেদন করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এখনও পর্যন্ত ৩৩৭ কোম্পানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। ভোটের ছয় দিন আগে বাহিনী সমস্যা উঠতে পারে হাই কোর্টে।

Image of rajib Sinha.

রাজীব সিংহ। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৩ ২১:৪২
Share: Save:

রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে বাকি ৪৮৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে না এটা ধরেই প্রস্তুতি শুরু করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। নবান্নের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে তাদের। কমিশন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘাটতি মেটাতে পুলিশকে কাজে লাগানো হতে পারে। বাকি কেন্দ্রীয় বাহিনী না এলে বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে ব্যবহার করা হতে পারে পুলিশকেই। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি কমিশন। তাদের নজর কলকাতা হাই কোর্টের দিকে। সোমবার উচ্চ আদালতে পঞ্চায়েত মামলার শুনানি রয়েছে। সেখানে কী হয় তার উপর নির্ভর করবে পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ।

রবিবার সকালে ভোটের নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং এডিজি-র সঙ্গে বৈঠক করেন নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ। ভোটের ছ’দিন আগে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে এই বৈঠক করে কমিশন। কমিশন সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশকে কী ভাবে ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়। অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ আনা নিয়েও ওই বৈঠকে কথা হয় কমিশনারের সঙ্গে নবান্নের আধিকারিকদের। কিন্তু দিনের শেষে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা কমিশনের। তাদের স্বস্তির বিষয় হল এ বার বল রয়েছে ‘কেন্দ্রের কোর্টে’। কমিশনের দাবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে বার বার কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য আবেদন করেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তা নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে সোমবার তা হাই কোর্টে কাটতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

সোমবার উচ্চ আদালতে রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে একাধিক জনস্বার্থ এবং আদালত অবমাননা মামলার শুনানি রয়েছে। ভোটের দফা বৃদ্ধি নিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। ওই মামলাটিরও শুনানি রয়েছে। এই মামলাগুলিতে আদালত কোনও নির্দেশ দিলে বা আদালতের কোনও দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে সেই অনুযায়ী বাকি পদক্ষেপ করা হতে পারে বলে কমিশনের মত। ফলে কেন্দ্রের কাছ থেকে বাহিনী না পেয়ে কমিশনও এখন হাই কোর্টের শুনানির দিকে তাকিয়ে। মামলাকারীদের পাশাপাশি সোমবার হাই কোর্টের শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। এর আগের শুনানিতে তারা জানিয়েছিল, ২০১৩ সালের মডেলে পঞ্চায়েত ভোট হলে বাহিনী দিতে কোনও অসুবিধা হবে না। তখন পাঁচ দফায় ভোট হয়েছিল। সব মিলিয়ে মোতায়েন করা জওয়ান ৮২ হাজার হয়েছিল। এ বার এক দফার ভোটেই ওই বাহিনী দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এই অবস্থায় হাই কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীর সওয়াল থেকে অনেকের অনুমান, বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী কেন্দ্র হয়তো আর দিতে পারবে না। ৩৩৭ কোম্পানি দিয়েই পঞ্চায়েত ভোট করাতে হবে। কমিশনও সেই আন্দাজ করে ফেলেছে। তারা দফা না বাড়িয়ে পুলিশকর্মী বাড়িয়ে ভোট করাতে পারে। অন্য দিকে, কেন্দ্রের তরফে সোমবার হাই কোর্টে কী জানানো হয় তা-ও দেখার।

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যের এক দফা পঞ্চায়েত ভোটে মোট ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসার কথা। প্রথমে ২২ কোম্পানি এবং দ্বিতীয় ক্ষেপে ৩১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার কথা নির্বাচন কমিশন। এই বাহিনী ইতিমধ্যে রাজ্যে ঢুকতে শুরু করেছে। বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই ভোট রয়েছে। তার আগে ওই বাহিনী আসবে কি না কমিশন বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কোনও পক্ষই চূড়ান্ত কিছু জানায়নি। হাই কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীর সওয়াল থেকে অনেকের অনুমান, বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী কেন্দ্র হয়তো আর দিতে পারবে না। ৩৩৭ কোম্পানি দিয়েই পঞ্চায়েত ভোট করাতে হবে। কমিশনও সেই আন্দাজ করে ফেলেছে। তারা জানিয়েছে, কেন্দ্রকে বাকি বাহিনী চেয়ে একাধিক বার চিঠি দিলেও, উত্তর পাওয়া যায়নি। তাই বিকল্প হিসাবে পুলিশ ব্যবহার নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে কমিশন।

কমিশন সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোটে ৬১, ৬৩৬ ভোটকেন্দ্রের জন্য প্রায় এক লক্ষ ৩০ হাজার জন নিরাপত্তারক্ষী প্রয়োজন। এখনও পর্যন্ত ৩৭ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে। অর্থাৎ, প্রতি বুথে একজন করেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা যাবে না। অন্য দিকে, ভোটের জন্য আরও প্রায় এক লক্ষ নিরাপত্তাকর্মী প্রয়োজন। রাজ্যের কাছে আবার ওই সংখ্যক বাহিনী নেই। এই অবস্থায় ভোটগ্রহণের কয়েক দিন আগে নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় কমিশন। পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবারের বৈঠকে কোথায়, কত পুলিশ ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘাটতি মেটাতে পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড এবং বিহার থেকে পুলিশ নিয়ে আসার পরিকল্পনাও হয়েছে। অন্য একটি সূত্রের মতে, এ নিয়ে পদক্ষেপও শুরু করে দিয়েছে নবান্ন।

প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে কি না এ নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা কমিশনের থেকে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে চূড়ান্ত কিছু না জানা গেলেও দু’রকম মত পাওয়া যাচ্ছে কমিশনের তরফে। একটি সূত্র জানাচ্ছে, বাকি কেন্দ্রীয় বাহিনী আর আসবে না ধরে নিয়েই পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। যদি না আসে তবে বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে পুলিশ। এলাকা টহলদারি, উপদ্রব হতে পারে এমন এলাকায় নজরদারি-সহ আইনশৃঙ্খলার কাজে কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হবে। অন্য সূত্রে বলছে, বাকি বাহিনী না এলে প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া যাবে না এটা তো জলের মতো পরিষ্কার। তবে স্পর্শকাতর বা অতি স্পর্শকাতর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের ব্যবহার করার বিষয়টি মাথায় রয়েছে কমিশনের। তবে সোমবারই হয়তো বাকি বাহিনী নিয়ে উত্তর জানা যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE