(বাঁ দিক থেকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
১২ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের চিঠি-রহস্যের কোনও সমাধান হয়নি এখনও। রাজভবন, নবান্ন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল— সবাই চুপ। মুখে কুলুপ এঁটেছেন নেতামন্ত্রীরাও। উল্টে তৃণমূল এবং বিজেপির তরফে একে অপরকে কাব্য করে কটাক্ষ শুরু হয়েছে।
শনিবার মধ্যরাতে ‘অ্যাকশন’ কাকে বলে, তা দেখাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল বোস। সেই অনুযায়ী, মধ্যরাতের কিছু আগে রাত ১১টা ৪২ মিনিটে রাজভবনের তরফে জানানো হয়, রাজ্যপাল একটি বার্তা পাঠিয়েছেন নবান্নে। সেই বার্তা গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও। মুখবন্ধ খামে গোপনীয় বার্তা পাঠিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাতে কী রয়েছে, তার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি।
রাজ্যপালের এই গোপন চিঠিকে ঘিরে নানা জল্পনা তৈরি হয় রাতেই। কী এমন বার্তা মধ্যরাতে নবান্নে পাঠালেন তিনি? কেনই বা তা গেল দিল্লিতেও? রাজভবন থেকে সকালেও কোনও উত্তর মেলেনি। আপাতত রাজভবন, রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কিছু না জানানো পর্যন্ত জল্পনাই ভরসা। তবে এটা ঠিক যে, রাজ্যপাল এমন কিছুই জানিয়েছেন, যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় উঠতে পারে। সেই কারণেই এত গোপনীয়তা।
রাজ্যের শাসকদলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘রাজ্যপাল তো রাত জাগতে চাইছেন। নিশাচরীয় পদক্ষেপ করছেন। যা স্বাভাবিক নয়। কবি বলে গিয়েছেন, ‘জাগরণে যায় বিভাবরী, আঁখি হতে ঘুম নিল হরি’। অর্থাৎ, ব্রাত্য ওঁর ঘুম কেড়ে নিয়েছেন।’’
রাজ্যপালের চিঠি-রহস্য নিয়ে কাব্য করেছেন বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যও। তাঁর কথায়, ‘‘আমি রাজভবনের মুখপাত্র নই। আমাদের সাংবিধানিক প্রধান গভীর রাতে কাকে কী অনুরাগের ছোঁয়া দিয়েছেন, আমার জানা নেই। কিন্তু আমাদের এখানে মধ্যরাতের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা লাভও মধ্যরাতেই।’’ এর পরেই শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে স্মরণ করে শমীক বলেন, ‘‘রাতে যখন ‘দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া’, তখন ব্রাত্যের দুয়ারে কে কড়া নাড়ছেন?’’
সম্প্রতি যাদবপুর-সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বদলের জন্য মধ্যরাতকেই বেছে নিয়েছিলেন রাজ্যপাল। রাজ্যপাল কেন রাতেই বড় বড় সিদ্ধান্ত নেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শনিবার সকালে রাজ্যপাল ‘মধ্যরাতের অ্যাকশনের’ কথা বলার পর তাঁকে কটাক্ষ করে একটি টুইট করেছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেখানে নাম না করে রাজ্যপালকে তিনি ‘রাতের রক্তচোষা’ বলে উল্লেখ করেন। তাঁর হাত থেকে রক্ষা পেতে শহরবাসীকে সতর্কও করে দেন। জানান, ভারতীয় পুরাণ অনুযায়ী ‘রাক্ষস প্রহরের’ জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। সম্প্রতি যা আরও বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একের পর এক অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল বোস। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে বসানো হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন বুদ্ধদেব সাউ। বারাসত স্টেট ইউনিভার্সিটির দায়িত্ব পেয়েছেন রাজকুমার কোঠারী। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও নতুন উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পরে আবার শুভ্রকমলকে রবীন্দ্রভারতীর সঙ্গে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে, গত মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি হুঁশিয়ারির সুরেই জানিয়েছিলেন, কোনও বিশ্ববিদ্যালয় রাজভবনের কথা মতো চললে অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করে দেবে রাজ্য। সেই হুঁশিয়ারিতেও অবশ্য তেমন লাভ হয়নি। সে দিন রাতেই কৃষ্ণনগরের কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য হিসাবে অধ্যাপক কাজল দে-কে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। সে ক্ষেত্রেও রাজ্যের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করেননি বলে অভিযোগ।
রাজ্য-রাজভবন এই দ্বন্দ্বের আবহে রাজ্যপালের ‘অ্যাকশন’ রহস্য নিয়ে জল্পনা কাটতে চাইছে না। সরকারপক্ষ তো বটেই, রাজনৈতিক নেতারাও সকলে আশ্চর্যরকম চুপ। তাঁদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, তাঁরাও কেউ আন্দাজ করতে পারছেন না, রাজ্যপাল ঠিক কী করে থাকতে পারেন। তবে প্রকাশ্যে না বললেও, সকলেই একটা বিষয়ে একমত যে, উচ্চশিক্ষার স্বার্থে রাজ্যপালের উচিত, বিতর্ক মিটিয়ে নেওয়া। এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতাও প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy