তিনতলার ঘরে বসে সবাই গল্প করছিলাম। হঠাৎ নাকে একটা পোড়া পোড়া গন্ধ পাই। প্রথমে অতটা গুরুত্ব দিইনি। ভেবেছিলাম, বাইরে হয়তো কেউ কিছু পোড়াচ্ছে। কিন্তু সন্দেহ হয় কিছুক্ষণ পরে। মনে হচ্ছিল শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
ঘড়িতে তখন সকাল সওয়া এগারোটা। ঘরের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসি। দেখি, ঘন কালো ধোঁয়ায় সিঁড়ি ঢেকে গিয়েছে। তার মধ্যেই কয়েকজন পর্যটক সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামার চেষ্টা করছেন।
বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে আমাদের হোটেলেই আগুন লেগেছে। আমাদের এক সঙ্গী, ক্যারাটে প্রশিক্ষক বিশ্বনাথ রায় তখন স্নান করছিলেন। তাঁকে ডেকে দ্রুত শৌচাগার থেকে বাইরে আনি। তারপরে সকলে মিলে একবার সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি। ফের ঘরে ফিরে এসে জানলা দিয়ে নামব কি না ভাবছিলাম। তখনই নজরে আসে, ওই জানলার পাশ দিয়ে একটা পাইপ নীচ পর্যন্ত নেমে গেছে।
ব্যস, আর ভাবিনি আমরা। একপ্রকার জীবনের ঝুঁকি নিয়েই একে একে ওই পাইপ বেয়ে নীচে নামতে শুরু করি। নেমে দেখলাম এক মহিলা হোটেলের কার্নিসে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁকে সাহায্য করে আমরাই নীচে নামালাম। হোটেলের ভিতরের পরিস্থিতি অবশ্য তখনও জানি না। তবে অনুমান, আগুন লাগার সময়ে হোটেলে কমপক্ষে ২০-২২ জন ছিলেন।
আগুনের কবলে পড়া এই হোটেলেই আগামী এপ্রিল মাসে একটি কিক বক্সিং শিবির হওয়ার কথা। হোটেলের হলঘরে তার আয়োজন করা হবে। অন্তত ২০০ জনের অংশ নেওয়ার কথা সেই শিবিরে। তারই প্রস্তুতির জন্য শিলিগুড়ি, বর্ধমান-সহ নানা জায়গা থেকে প্রতিনিধি এবং কর্মকর্তা মিলিয়ে আমার পাঁচ জন দিঘায় এসেছিলাম বৃহস্পতিবারই। কিন্তু সেই কর্মযজ্ঞ শুরুর আগেই হোটেলে অগ্নিকাণ্ড! সারা জীবন মনে থেকে যাবে দিনটা।