কলকাতা লাগোয়া শহরতলি ছাড়াও হাওড়া, বারাসত ও শিলিগুড়ি-সহ রাজ্যের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টোটোর অনিয়ন্ত্রিত চলাচল যানজট ছাড়াও দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে টোটো নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করছে পরিবহণ দফতর। আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করে, এমন সমস্ত টোটোকে পরিবহণ দফতরের বিশেষ পোর্টালে নথিভুক্ত করাতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই নথিভুক্তির কাজ যাঁদের সম্পূর্ণ হবে না, তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্য প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে খবর।
টিটিইএন (টেম্পোরারি টোটো এনরোলমেন্ট নাম্বার) নামের পোর্টালে প্রয়োজনীয় নথি-সহ টোটো নথিভুক্ত করার পরে টোটোর মালিক একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাবেন। সেই সঙ্গে একটি কিউআর কোডে সেই টোটোর প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে। ওই নম্বর টোটোচালক ব্যবহার করতে পারবেন। টোটোর নথিভুক্তির জন্য মালিককে দিতে হবে এক হাজার টাকা। নথিভুক্তির পরের ছ’মাস আর কোনও টাকা লাগবে না। তার পরে প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে দিতে হবে প্রতিটি টোটোর জন্য।
এর পরের ধাপে কোন এলাকায়, কী ভাবে, কত সংখ্যক টোটো চলবে, সে ব্যাপারে আঞ্চলিক প্রশাসন (পুরসভা, পঞ্চায়েত, পুলিশ) মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। যার ভিত্তিতে আঞ্চলিক প্রশাসন প্রয়োজনীয় অনুশাসনও তৈরি করতে পারবে। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় যে সব টোটো চলাচল করে, সেগুলির বেশির ভাগই বেআইনি। এই সমস্ত যান ১৯৮৯ সালের পরিবহণ আইন অনুযায়ী স্বীকৃতও নয়।
যাত্রীদের নিরাপত্তা ছাড়াও সরকারি কোষাগারের অপ্রাপ্তি এড়াতে সমস্ত টোটোকে আগামী দু’বছরের মধ্যে সরকার অনুমোদিত ই-রিকশায় উন্নীত করতে বলা হবে। টোটোচালকদের পরীক্ষা নিয়ে তাঁদের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টিও সরকারের বিবেচনাধীন বলে শুক্রবার জানান পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। এর পাশাপাশি, রাজ্যে বেআইনি টোটোর উৎপাদন বন্ধে জেলা প্রশাসনগুলির সঙ্গে কোমর বেঁধে নামছে রাজ্য। বিভিন্ন জেলায় যে সব সংস্থা সরকারি অনুমোদন ছাড়াই টোটো তৈরি করছে, তাদের নোটিস দেওয়া হবে এবং ওই সব সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে। প্রয়োজনে সংস্থা বন্ধও করা হতে পারে।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ওই সমস্ত কারখানায় অনিয়ন্ত্রিত ভাবে টোটো উৎপাদনের ফলে সরকারের রাজস্বের ক্ষতি হওয়া ছাড়াও যানজট বাড়ছে। টোটো মোটরযান আইনের আওতায় না থাকায় এত দিন সেগুলি থেকে পথকর বাবদ কোনও টাকাও সরকারের কাছে আসেনি। সরকারি বিধি মেনে টোটো ই-রিকশায় উন্নীত হলে তা পরিবহণ-বিধির আওতায় আসবে। অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য টোটোকে পরিবহণ দফতর সাময়িক ভাবে নথিভুক্ত করে প্রয়োজনীয় নথি দেবে। রাজ্যে ঠিক কত টোটো আছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়াও পরিবহণ দফতরের উদ্দেশ্য বলে জানান মন্ত্রী।
সামগ্রিক ভাবে রাজ্যে অন্তত ১০ লক্ষ টোটো রয়েছে বলে প্রশাসনের অনুমান। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। নতুন ব্যবস্থায় ওই সব টোটো পরিবহণ দফতরের কর কাঠামোর আওতায় আসবে। এতে সরকারের কোষাগারে এক-দেড়শো কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আসতে পারে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)