Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Madhyamik

মাধ্যমিক কি আদৌ সম্ভব, বাড়ছে সংশয়

মাধ্যমিকে এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ১২ লক্ষ। ছাত্রছাত্রীরা যখন পরীক্ষা দিতে যায়, অনেক অভিভাবকই তাদের সঙ্গে থাকেন

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২১ ০৬:০৭
Share: Save:

মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানিয়ে দিয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষা জুনে হবে না। কবে পরীক্ষা হবে, পর্ষদ পরবর্তী কালে তা জানাবে এবং প্রস্তুতির জন্য পরীক্ষার্থীরা যথেষ্ট সময় পাবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, করোনার দাপটের মধ্যে অদূর ভবিষ্যতে আদৌ এই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে কি? পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তার নিশ্চয়তা কেউই তো দিতে পারছেন না। সেই নিশ্চয়তা ছাড়া পরীক্ষা নেওয়া কী ভাবে সম্ভব?

মাধ্যমিকে এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ১২ লক্ষ। ছাত্রছাত্রীরা যখন পরীক্ষা দিতে যায়, অনেক অভিভাবকই তাদের সঙ্গে থাকেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকেন অজস্র শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। সেই পরীক্ষাকে ঘিরে কোভিড সংক্রমণ বাড়লে তার দায় কে নেবে, উঠছে সেই প্রশ্নও। আচমকা পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় মুষড়ে পড়েছে অনেক পরীক্ষার্থী। আবার পরিস্থিতির উন্নতি হলে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সওয়ালও করে চলেছেন কেউ কেউ।

পর্ণশ্রী এলাকার দশম শ্রেণির ছাত্রী দেবলীনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে, “দেড় বছর ধরে এই সিলেবাসের উপরে পড়াশোনা করে যাচ্ছি। এর পরে যদি কোনও মূল্যায়ন না-হয়, তা হলে খুবই মন খারাপ হবে। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। পরিস্থিতি ভাল হলে জুলাইয়েই পরীক্ষা নেওয়া হোক।” দেবলীনার প্রশ্ন, ২০১৯ সালে ডিসেম্বরে নবম থেকে দশম শ্রেণিতে ওঠার পরীক্ষা দিয়েছিল সে। তার ভিত্তিতে কি মাধ্যমিকের মূল্যায়ন সম্ভব?

দরকার হলে পিপিই কিট বা বর্মবস্ত্র পরেই পরীক্ষা দিতে চায় বারুইপুরের পড়ুয়া স্নেহাশিস বৈরাগী। সে বলছে, “পরিস্থিতি একটু ভাল হলে হোম সেন্টারে আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হোক। পরীক্ষার্থীদের জন্য স্পেশাল বাস আর ট্রেন চালানো হোক। পিপিই কিট পরে পরীক্ষা দিতে যাব আমরা। নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় আমার প্রস্তুতি ভাল ছিল না। তার ভিত্তিতে মূল্যায়ন আমি কোনও মতেই মেনে নিতে পারব না।”

আইসিএসই, সিবিএসই বোর্ডের দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা একাদশ শ্রেণির পড়া শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীন স্কুলের পড়ুয়ারা এখনও মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে তারা সর্বভারতীয় পরীক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কিঞ্জল চৌধুরী। তাই তার মতে, মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে এখনই একাদশ শ্রেণির পড়াশোনা শুরু করে দেওয়া উচিত। কিঞ্জল বলে, “পরীক্ষা যত দেরিতে হবে, উচ্চশিক্ষার ও সর্বভারতীয় পরীক্ষার ক্ষেত্রে ততই আমরা পিছিয়ে পড়ব। আইসিএসই ও সিবিএসই বোর্ডের পড়ুয়াদের সঙ্গেই তো আমরা সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেব। ওদের সঙ্গে সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে হলে আমাদের এখনই একাদশ শ্রেণির পড়া শুরু করে দেওয়া উচিত।” উত্তরপাড়ার দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী গৌরব ভট্টাচার্য ও রৌনক ভট্টাচার্যের বাবা গৌতম ভট্টাচার্য মনে করেন, এখন যা পরিস্থিতি, তাতে কোনও ভাবেই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। গৌতমবাবু বলেন, “আমার দুই যমজ ছেলে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। দেড় বছর ধরে একই সিলেবাসে পড়াশোনা করতে করতে তাতে আর মন বসাতে পারছে না ওরা। ওদের যে-সব বন্ধু অন্য বোর্ডে পড়ে, তারা একাদশ শ্রেণির পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছে। ওরা চায়, পরীক্ষা বাতিল হোক। আর কত পিছোবে? অগস্টের আগে কি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে?”

বেশির ভাগ শিক্ষক সংগঠনের শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকেরা অবশ্য চাইছেন, পডুয়াদের মূল্যায়নের জন্য ছোট পরিসরে হলেও মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হোক। একই মত উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যুক্ত অনেকের। যাদবপুর বিশ্ববদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক স্যমন্তক দাস বলেন, “পরীক্ষার প্রশ্নপত্র স্কুলই তৈরি করুক। স্কুলের শিক্ষকেরাই খাতা দেখুন। একটা মূল্যায়ন জরুরি। নবম শ্রেণির পরীক্ষার মূল্যায়নে কি পরীক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হবে?” প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অব আর্টস প্রদীপ বসু বলছেন, “এখন যা পরিস্থিতি, তাতে পরীক্ষার কথা ভাবা যায় না। পরিস্থিতি কবে ভাল হবে, কেউ তা জানে না। তাই নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ভিত্তিতে মূল্যায়ন হোক। তবে যে-সব পরীক্ষার্থী মনে করছে, তাদের নবম শ্রেণির পরীক্ষা খুব খারাপ হয়েছে, তারা যদি চায়, তাদের জন্য স্কুল আলাদা ভাবে একটা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Board Of Secondary Education Madhyamik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE