জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় গিয়ে সম্প্রতি আক্রান্ত হয়েছেন মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। খগেনের সঙ্গে ছিলেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তাঁর উপরও হামলার ঘটনা ঘটে। তার আগে গত ৫ অগস্ট সেই উত্তরবঙ্গের কোচবিহার সফরে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ ছিল, শাসক দল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা শুভেন্দুর উপর প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছেন। নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে যার পর বিজেপির নিচু তলার কর্মী-সমর্থকদের সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এ নিয়ে প্রকাশ্যেই তাঁরা ক্ষোভ উগরে দেন। ঘটনাচক্রে, এর পরই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর নিরাপত্তা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। দিল্লির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে এমনটাই খবর।
২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত ধরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন শুভেন্দু। তার পর থেকেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পান তিনি। নন্দীগ্রাম থেকে জিতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হন তিনি। প্রথমে ওয়াই প্লাস নিরাপত্তা পেলেও, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তার উপর হামলার ঘটনায় পরে তাঁকে জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের যে কোনও প্রান্তে বড়সড় হামলার মুখে পড়তে পারেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অন্যতম মুখ শুভেন্দু। তাই দেশ জুড়ে যাতে তিনি জ়েড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ করতে চলেছে শাহের মন্ত্রক। কারণ, বিজেপিতে যোগদানের পর পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লির মতো রাজ্যে গিয়ে বিজেপির নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, এ বছর ৫ অগস্ট কোচবিহার সফরে যান বিরোধী দলনেতা। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ ছিল, শাসকদল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা শুভেন্দুর উপর প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছেন। সেই হামলার পর নন্দীগ্রাম বিধায়ক জানিয়েছিলেন, সে দিন বুলেটপ্রুফ গাড়িতে না থাকলে শাসকদলের আক্রমণে তিনি মারা যেতে পারতেন। ওই দিন শুভেন্দুর উপর হামলা হয়েছে জেনে দিল্লি থেকে কোচবিহারের প্রাক্তন সাংসদ নিশীথ প্রামাণিককে ফোন করে ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সঙ্গে নর্থ ব্লকের শীর্ষ কর্তাদের শুভেন্দুর সঙ্গে কথা বলে তার নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে ঢেলে সাজার নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতার সঙ্গে কথা বলে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ শোনার পাশাপাশি তাঁর নিরাপত্তা ঢেলে সাজার বন্দোবস্ত করেছিলেন বলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর। তবে এই সংক্রান্ত বিষয় তিনি কিছু জানেন না বলেই জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু।
তবে কোচবিহারে তাঁর উপর হামলার পরেই শুভেন্দুর নিরাপত্তা নতুন করে সাজানোর বিষয়ে মনস্থির করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এ বার থেকে দেশের যে কোনও প্রান্তে গেলে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতাকে জ়েড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এত দিন পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া ঝাড়খণ্ড এবং মণিপুরে গেলে তিনি জ়েড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পেতেন, অন্য কোনও রাজ্যে গেলে পেতেন ওয়াই প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা। আগামী দীপাবলির আগেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে শুভেন্দু নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।