E-Paper

কলেজকে দানও নিতে হবে রাজ্যের পোর্টালে

বেশ কয়েক জন অধ্যক্ষের বক্তব্য, রাজ্যের বেশ কিছু প্রথম সারির কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত তাদের প্রাক্তনীরা আর্থিক সাহায্য করেন। তা হলে সব কলেজের তথ্য দেওয়ার কী প্রয়োজন?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৩ ০৬:৩৪

প্রতীকী ছবি।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুদান চেয়ে প্রায়শই প্রাক্তনীদের দ্বারস্থ হয় এবং কমবেশি এই ভাবে অর্থও সংগৃহীত হয়। রাজ্যের কলেজগুলিতে সরাসরি অর্থসাহায্যের পথ কার্যত বন্ধ হতে চলেছে রাজ্য সরকারের একটি সিদ্ধান্তে। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কোনও কলেজের প্রাক্তনী বা অন্য কেউ আর্থিক দান করতে চাইলে তা করতে হবে ওই দফতরের কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে কলেজগুলির প্রধানদের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-সহ সব তথ্য নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে এবং তার সঙ্গে মিশে গিয়েছে কিছু আশঙ্কাও।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দাতাদের তালিকা এবং উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে এক জন নোডাল অফিসারও ঠিক করে দিতে হয়েছে কলেজগুলিকে। কলেজগুলি এ-পর্যন্ত যদি বিভিন্ন খাতে কোনও বেসরকারি অনুদান পেয়ে থাকে, তার সবিস্তার তথ্যও জমা দিতে বলা হয়েছিল। সোমবারেই কলেজগুলিকে নির্দিষ্ট লিঙ্কে সব তথ্য জমা দিতে হয়েছে। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, প্রাক্তনী-সহ কেউ কোনও নির্দিষ্ট কলেজকে আর্থিক সাহায্য করতে চাইলে এই নির্দিষ্ট পোর্টালের মাধ্যমে তা করতে পারবেন।

পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ওয়েবকুটা) সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্তের আশঙ্কা, ‘‘এই সরকারি পদক্ষেপ বেসরকারিকরণের দিকেই নিয়ে যাবে। আর্থিক দানের তথ্য জেনে সরকার হয়তো এই ধরনের দানের ব্যাপারেই কলেজগুলিকে বেশি উৎসাহিত করবে। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও এমন ইঙ্গিত রয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, রাজ্য সরকার এই ভাবে কলেজগুলির দায় ধীরে ধীরে ঝেড়ে ফেলবে।’’

জাতীয় শিক্ষানীতির সূচনা পর্ব থেকেই অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে তার বিরোধিতায় স্বর মিলিয়েছে বাংলা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি দেবাশিস সরকারেরও আশঙ্কা, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষানীতির পথেই এগোচ্ছে রাজ্য সরকার। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার এত বড় একটি সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। কিন্তু সেই বিষয়ে কোনও লিখিত সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। যেটির প্রয়োজন ছিল। দেবাশিস বলেন, ‘‘সরকারি পোর্টালের মাধ্যমে যখন বেসরকারি অনুদান নেওয়া হবে, তা সব সময় ‘সাদা’ হবে, এমন ধরে নেওয়া ঠিক নয়। অনুদান হিসেবে ‘কালো’ টাকা আসার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।’’

বেশ কয়েক জন অধ্যক্ষের বক্তব্য, রাজ্যের বেশ কিছু প্রথম সারির কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত তাদের প্রাক্তনীরা আর্থিক সাহায্য করেন। তা হলে সব কলেজের তথ্য দেওয়ার কী প্রয়োজন? কিছু কলেজ সোমবার পর্যন্ত উচ্চশিক্ষা দফতরের পাঠানো লিঙ্কে তথ্য আপলোড করেনি বলেও শিক্ষা শিবির সূত্রের খবর।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বক্তব্য, সরকার এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করবে। কাজেই বিপদের সম্ভাবনা নেই। প্রাক্তনীরা তাঁদের স্কুল বা কলেজের উন্নতির জন্য টাকা দিলে অসুবিধে হওয়ারও কথা নয়। অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাহায্য করলে তাদের নির্দিষ্ট সরকারি শর্তাবলি মেনেই অনুদান দিতে হবে, এর সঙ্গে বেসরকারিকরণের সম্পর্ক নেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Education Department Nabanna Bratya Basu

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy