ধর্ষণ, খুন-সহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধের মামলায় ডিএনএ প্রমাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই তদন্তকারীরা যথাযথ ভাবে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ। তার ফলে তদন্তে এবং অপরাধ প্রমাণে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে মেনে নিচ্ছে পুলিশেরই একাংশ। এই পরিস্থিতিতে প্রাথমিক তদন্তের সময় অপরাধস্থল থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের আদর্শ কার্যবিধি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর বা এসওপি) তৈরি করেছে রাজ্য ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (এসএফএসএল)। তা সিআইডির পাশাপাশি রাজ্যের সব এসপি ও পুলিশ কমিশনারদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।
রাজ্য পুলিশের একাধিক সূত্রের দাবি, বিভিন্ন মামলার ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহে ত্রুটি দেখা যাচ্ছিল। সেই ভুলভ্রান্তি ঠেকাতে কোনও এসওপি ছিল না। তাই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। ত্রুটির উদাহরণ হিসেবে সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের একটি থানার ঘটনাও উল্লেখ করেছেন পুলিশকর্তাদের অনেকে। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই থানার এক অফিসার নমুনা সংগ্রহে ভুল করেছিলেন। যদিও পরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা সেই ত্রুটি শুধরে নেন।
পুলিশ সূত্রের দাবি, অপরাধস্থলে থাকা কোনও জিনিস থেকে কী ভাবে নমুনা সংগ্রহ করতে হবে, তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে এসওপি-তে। রক্তের নমুনার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, সেই নমুনা পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার পরেই তা প্যাকেটবন্দি করতে হবে। কী ভাবে নমুনা প্যাকেটবন্দি করতে হবে, তা-ও নির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়েছে। প্যাকেটের উপরে মামলার নম্বর, তারিখ, সময় লিখতে হবে। স্বাক্ষরও করতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, নমুনা প্যাকেটবন্দি করার ক্ষেত্রে কোনও ভাবেই প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা যাবে না। আবার নমুনা যাতে নষ্ট না-হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, অপরাধে ব্যবহৃত অস্ত্র, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া কিংবা নির্যাতিতের চুল, রক্ত এবং রক্তের দাগ, যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে বীর্য, লালা এবং হাড় ও দাঁতের ক্ষেত্রে কী ভাবে নমুনা সংগ্রহ করতে হবে তা ওই কার্যবিধিতে পরিষ্কার ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। এক পুলিশকর্তা জানান, ওই কার্যবিধিতে যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে ডিএনএ বা বায়োলজিক্যাল নমুনা কী ভাবে সংগ্রহ করতে হবে তার জন্য সাত দফা নির্দেশ হয়েছে। তাতে পোশাক, দেহের বিভিন্ন নমুনা, কামড়ের দাগ, লালা কী ভাবে সংগ্রহ করা হবে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ওই নমুনা সংগ্রহের পরে কী ভাবে তা ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে এবং পাঠানোর আগে কী ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে সেই বিষয়েও বলা হয়েছে।
রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশের একাধিক থানা সূত্রের খবর, তদন্তকারী অফিসারদের নমুনা সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করলেও বিশেষ ক্ষেত্রে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরাই ওই নমুনা সংগ্রহ করেন। তার পরেও ভুলভ্রান্তি হচ্ছিল। তাই উপরমহলের নির্দেশ মেনে নতুন আদর্শ কার্যবিধি মেনে চলার কাজ শুরু হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)