নির্বাচন কমিশনের নির্দেশমতো চার আধিকারিককে সাসপেন্ড করা হয়নি। তা নিয়ে বিতর্কের আবহে বাংলার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে দিল্লিতে তলব করেছিল কমিশন। বুধবার কমিশনের সেই তলবে সাড়া দিলেন মুখ্যসচিব। গেলেন দিল্লিতে কমিশনের সদর দফতরে।
বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে নির্বাচন সদনে সশরীরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল পন্থকে। সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তিনি নির্বাচন সদনে প্রবেশ করেন। সেখানে ঘণ্টাখানেক ছিলেন মনোজ। বেরোন বিকেল সাড়ে ৫টার পরে। ভিতরে পন্থ এবং কমিশনের কর্তাদের মধ্যে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে পন্থ নিজে কিছু প্রকাশ্যে বলেননি। কমিশনের তরফেও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
ভোটার তালিকায় গরমিলের অভিযোগে রাজ্যের চার আধিকারিককে সাসপেন্ড করতে বলেছিল কমিশন। তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের বিভাগীয় তদন্ত শুরুর পাশাপাশি, এফআইআর-ও দায়ের করতে বলা হয়েছিল। একজন ডেটা-এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধেও দায়ের করতে বলা হয়েছিল এফআইআর। সোমবার বিকেল ৩টের মধ্যে এই পদক্ষেপ করতে হত রাজ্যকে। তবে নবান্ন তার বদলে এক জন সহকারী ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার এবং ডেটা-এন্ট্রি-অপারেটরকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। ওই দিনই বাকিদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী অনুসন্ধান করে সেই রিপোর্ট পাঠানো হবে বলে কমিশনকে জানিয়েছিলেন মুখ্যসচিব। তার পরেই পন্থকে তলব করে কমিশন।
কমিশনের যুক্তি, তাদের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। পাল্টা এই প্রশ্নও উঠছে যে, এখনও রাজ্যে ভোট ঘোষণা হয়নি। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কি কমিশন এ বার কোনও রাজ্য সরকারি কর্মীকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিতে পারে? অনেকের মত, চার আধিকারিককের সাসপেনশন সংক্রান্ত কমিশনের নির্দেশ ঘিরে যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে, হয়তো সমঝোতার মাধ্যমেই তার মীমাংসা সম্ভব।
প্রসঙ্গত, গত ৫ অগস্ট কমিশন প্রথম শাস্তি-বার্তা দেওয়ার পরেই একটি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করবে না সরকার। বরং দেওয়া হবে সর্বোচ্চ সুরক্ষা। এর পর ৮ অগস্ট আবার রাজ্যকে চিঠি পাঠায় কমিশন। দ্বিতীয় চিঠিতে রাজ্যকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলেছিল কমিশন। সেইমতো সোমবার, ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই কমিশনকে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দেয় রাজ্য সরকার।
সোমবার কমিশনকে চিঠি পাঠিয়ে মুখ্যসচিব জানিয়েছিলেন, আপাতত পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের ‘সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক’ (এইআরও) সুদীপ্ত দাস এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ডেটা এন্ট্রি অপারেটর’ সুরজিৎ হালদারকে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের বিরুদ্ধে এখনই কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলেও কমিশনকে জানিয়ে দেয় নবান্ন।
কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যসচিব লিখেছিলেন, সরকারি আধিকারিকদের কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হয়। তার উপর নির্বাচন সংক্রান্ত কাজের দায়িত্বও থাকে, যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হয়। এ অবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই সরল বিশ্বাসে অধস্তনদের উপর কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁরা ধারাবাহিক ভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে আসছেন। এমন ক্ষেত্রে বিস্তারিত অনুসন্ধান ছাড়াই কোনও সিদ্ধান্ত নিলে, তা তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ হয়ে যেতে পারে। এমন সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ওই আধিকারিকদের ক্ষেত্রেই নয়, সার্বিক ভাবে সরকারি আধিকারিকদের হতাশ করতে পারে। তাই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে, এক এইআরও এবং এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হচ্ছে বলে কমিশনকে জানিয়েছে রাজ্য।