Advertisement
১৬ মে ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

‘আমরা দিল্লিতে মহাজোট করছি, বাংলায় বিজেপির সঙ্গে ঘোঁট করছে কংগ্রেস, সিপিএম’, খোঁচা মমতার

মমতার বক্তৃতায় পঞ্চায়েতের পাশাপাশি এসেছে লোকসভা নির্বাচনও। সেই নির্বাচনে সম্ভাব্য সমীকরণের প্রসঙ্গ তুলে তাঁর অভিযোগ, বাংলায় পদ্ম-শিবিরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেস।

West Bengal CM Mamata Banerjee attacks BJP, left and Congress from Cooch Behar rally for WB Panchayat Election 2023

বিজেপির পাশাপাশি মমতার নিশানায় কংগ্রেস এবং সিপিএম। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩ ২২:০৬
Share: Save:

পটনায় শুক্রবার রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে, সীতারাম ইয়েচুরিদের উপস্থিতিতে পরবর্তী লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু সোমবার রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেস এবং সিপিএমকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কোচবিহারের চান্দামারি প্রাণনাথ হাই স্কুল ময়দানে নির্বাচনী জনসভায় মমতা বলেন, ‘‘আমরা দিল্লিতে বিজেপির বিরুদ্ধে মহাজোটের চেষ্টা করছি। আর এখানে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপির মহাঘোঁট হয়েছে। এই মহাঘোঁট ভেঙে দেব, দিল্লিতে মহাজোটই হবে। সিপিএম অনেক অত্যাচার করেছে, সিপিএমকে আর ফেরাবেন না। কংগ্রেস বিজেপির দোসর, ওদের ভোট দেবেন না।’’ মমতার সোমবারের বক্তৃতার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, ২০২৪ সালে জাতীয় স্তরে যে সমীকরণই হোক না কেন, রাজ্যে যে তিনি কংগ্রেস এবং সিপিএমকে একচুলও ‘রাজনৈতিক পরিসর’ দেবেন না, সোমবার তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

কোচবিহারে তৃণমূলের সভা শেষে প্রশ্ন উঠেছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পাশাপাশি এ বার কি আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সুরও বেঁধে দিলেন মমতা? যে সমীকরণে, বাংলায় বিজেপির সহযোগী হিসাবেই কংগ্রেস-সিপিএমকে দেখতে চায় তৃণমূল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সোমবার মমতার বক্তৃতায় পঞ্চায়েত ভোটের পাশাপাশি একাধিক বার উঠে এসেছে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গও। যেখানে বিজেপিকে হারানোই যে তাঁর মূল উদ্দেশ্য, তা স্পষ্ট করেছেন তিনি।

শিমলায় বিজেপি বিরোধী দলগুলির পরবর্তী বৈঠক হতে পারে ১২ জুলাই। তার আগেই কংগ্রেসের উপর তৃণমূল ‘চাপ’ তৈরি করা শুরু করে দিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কোচবিহারে মমতার বক্তৃতার পরে। বিজেপিকে হারাতে মমতার বাতলে-দেওয়া ‘জোটতত্ত্বের’ (যে দল যেখানে ‘শক্তিশালী’, সেখানে তাকে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। অর্থাৎ, বাংলায় আসনরফা বা সমঝোতা বা জোটের ক্ষেত্রে শেষ কথা বলবে তৃণমূলই) কথা বলে রবিবারই কংগ্রেস এবং সিপিএমকে খোঁচা দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। এ বার মমতা স্বয়ং বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএমকে বিরোধিতার এক সারিতে দাঁড় করিয়ে লোকসভা ভোটে বাংলায় ‘জমি’ না ছাড়ার বার্তা দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

কোচবিহারের সভায় মমতা তাঁর বক্তৃতা শুরুর পরই মঞ্চে ডেকে নেন বিএসএফের গুলিতে নিহতদের পরিজনদের। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘খবর আছে বর্ডারে গিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাবে বিএসএফ। বিএসএফ ভয় দেখালে ভয় পাবেন না। আমাদের এসে জানান। কোচবিহারে বিএসএফ-এর গুলি করে মারা যেন অধিকারের মধ্যে পড়ে গেছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘বিএসএফ ভয় দেখালে অভিযোগ জানাবেন। ভয়ে ঘরে বসে থাকবেন না। মনে রাখবেন যে শহিদ পরিবার আজকে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে তার বদলা নিতে পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে ভোট দিতে হবে। আপনার পরিবার যাতে কোনও দিন খালি না হয়ে যায় তার জন্য আপনাকেই লক্ষ রাখতে হবে।’’

আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিএসএফ-কে বিজেপি রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে পারে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিশ্চয় প্রশাসনকে বলব নজর রাখতে। ১৫ কিলোমিটার যেটা ছিল সেটা গায়ের জোরে একতরফা ভাবে ৫০ কিলোমিটার করেছে। আমার কাছে খবর আছে, নির্বাচনের সময় বর্ডারে বর্ডারে গিয়ে আপনাদের তারা ভয় দেখাবে। বলবে তুলে নেব। সিবিআই লাগাব, ইডি লাগাব। আমি বলি কিছু করতে পারবে না। আইনত আইন-শৃঙ্খলা রাজ্য সরকারের আওতায় পড়ে। কেন্দ্র সরকারের আওতায় পড়ে না।’’

কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককেও নাম না-করে নিশানা করেন মমতা। বলেন, ‘‘একজন গুন্ডাকে মন্ত্রী করেছে। তা-ও আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই মন্ত্রী আফ্রিকা ঘুরে এসে নিজের কনভয় নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভোটের সময় কি এটা করা যায়? আমরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাব।’’

মোদী সরকারকে আক্রমণ করতে গিয়ে পাওনা টাকার প্রসঙ্গেও সরব হন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের থেকে এই টাকা (১০০ দিনের কাজের) আদায় করে ছাড়ব। বাংলার বাড়ির টাকাও ওরা বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলার টাকা না দিলে আগামীতে বিজেপিকে রাজনৈতিক ভাবে পরাজিত করব। নতুন সরকার আসতে দিন। আমরাও দিল্লি থেকে টাকা নিয়ে আসব। আমরা বাংলার বাড়ি করে দেব। শুধু একটু ধৈর্য ধরুন।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বলছে ডাবল ইঞ্জিন সরকার কাজ করবে। একটা ইঞ্জিন আগেই ফুটো হয়ে গিয়েছে। আমি বলব, একটা পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিয়ে আরও বিকল করে দিন। আর একটা ইঞ্জিন আগামী বছর লোকসভা ভোটে ভোট দিয়ে বিকল করে দেবেন।’’

রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের ‘সাফল্য’ তুলে ধরার পাশাপাশি সোমবার মমতা আশ্বাস দেন, পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতি রুখতেও এ বার তিনি সক্রিয় হবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এ বার থেকে পঞ্চায়েত আমরা নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করব। কাউকে চুরি করতে দেবেন না। কেউ টাকা চাইলে ছবি তুলে রাখবেন। তার পর আমাকে পাঠিয়ে দেবেন।” তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগে অভিষেক, ওর টিম গোটা রাজ্যে ঘুরেছে। যুব সংগঠনও এই কাজে ছিল। ৯৯ শতাংশ আসনে প্রার্থী বাছাই হয়তো ঠিক হয়েছে। এক শতাংশ কেউ কেউ আছে, যারা চুরিও করবে আবার টিকিটও চাইবে। সেটা আমরা দিচ্ছি না।”

(সোমবার কোচবিহারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনে প্রথম যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল, তার শিরোনাম ছিল ‘বাম-কংগ্রেসে নীরব মমতা, প্রথম নির্বাচনী জনসভায় লক্ষ্য শুধু মোদী সরকার’। এই খবরটি লেখা হয়েছিল সম্পূর্ণ ভুল তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে। এটা ঘটনা যে, মমতা তাঁর প্রায় পুরো বক্তৃতাতেই নিশানা করেছিলেন বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে। কিন্তু বাম বা কংগ্রেস সম্পর্কে তিনি নীরব ছিলেন, এই তথ্য ঠিক নয়। বক্তৃতার একটি অংশে তিনি এই দুই দল এবং তাদের জোট নিয়ে সরাসরি নাম করেই কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ওই অংশটি আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। গোচরে আসা মাত্রই সংবাদটি প্রত্যাহার করে সংশোধিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত ওই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এব‌ং ক্ষমাপ্রার্থী।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE