Advertisement
০৬ মে ২০২৪
West Bengal Police

রূপান্তরকামীদের সংরক্ষণ পুলিশে

পুলিশের চাকরিতে মহিলাদের জন্য যে সংরক্ষণ থাকছে তার মধ্যে এক শতাংশ থাকবে রূপান্তরকামীদের জন্য সংরক্ষিত। নতুন যে নিয়োগ শুরু হবে তাতে ওই সংরক্ষণ ঘোষণা করা হবে।

রাজ্যের পুলিশ বাহিনীতে রূপান্তরকামীদের জন্য বিশেষ সংরক্ষণ করা হবে।

রাজ্যের পুলিশ বাহিনীতে রূপান্তরকামীদের জন্য বিশেষ সংরক্ষণ করা হবে। প্রতীকী ছবি।

শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৩৮
Share: Save:

পুলিশে রূপান্তরকামীদের চাকরিতে সুযোগের বিশেষ ব্যবস্থা করতে চলেছে রাজ্য। এই প্রথম রাজ্যের পুলিশ বাহিনীতে রূপান্তরকামীদের জন্য বিশেষ সংরক্ষণ করা হবে। এর জন্য ২০১৯ এর কেন্দ্রীয় ট্রান্সজেন্ডার অধিকার সুরক্ষা আইন অনুযায়ী বিশেষ বিধি তৈরি করেছে রাজ্য।

রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, পুলিশের চাকরিতে মহিলাদের জন্য যে সংরক্ষণ থাকছে তার মধ্যে এক শতাংশ থাকবে রূপান্তরকামীদের জন্য সংরক্ষিত। নতুন যে নিয়োগ শুরু হবে তাতে ওই সংরক্ষণ ঘোষণা করা হবে। সাধারণ ভাবে পুলিশের চাকরিতে যে শারীরিক সক্ষমতা চাওয়া হয়, রূপান্তরকামীদের ক্ষেত্রে তা মহিলা এবং পুরুষদের থেকে পৃথক হবে। ঠিক হয়েছে উচ্চতা কিংবা অন্যান্য শারীরিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে পুরুষদের থেকে কম এবং মহিলাদের থেকে বেশি হবে রূপান্তরকামীদের জন্য। তবে পুলিশে চাকরি করতে গেলে ন্যূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন। অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সামান্য স্কুলে যাওয়ার সুযোগটুকুও পান না রূপান্তরকামীরা। ফলে তাঁদের শিক্ষাগত ক্ষেত্রে ছাড় থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পুলিশের এক কর্তা জানান, নীতিগত ভাবে সরকার তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত তথা রূপান্তরকামীদের জন্য পুলিশের চাকরিতে সংরক্ষণে রাজি হয়েছে। আশা করা যায় নতুন বছরের শুরুতেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করা হবে। তবে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী না সাধারণ বাহিনী— কোথায় তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষদের প্রথম অন্তর্ভূক্ত করা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি বলে সূত্রের খবর।

২০১৪ সালে ঐতিহাসিক নালসা রায় দিয়েছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। রূপান্তরকামীদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ বলে তখনই মর্যাদা দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ আদালত বলে, সংবিধানে নাগরিকদের জন্য যে মৌলিক অধিকারের উল্লেখ রয়েছে, তা তৃতীয় লিঙ্গের জন্যও সুনিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষজনের মতো তৃতীয় লিঙ্গের জন্য শিক্ষা এবং চাকরিতে সংরক্ষণের কথাও তখনই বলে শীর্ষ আদালত। ইতিমধ্যে কর্নাটক সরকার পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। মহারাষ্ট্রের আদালত সেই নির্দেশ দিয়েছে। তবে এখনও সেখানে তা চালু হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গে রূপান্তরকামীদের পুলিশ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াসটিকে স্বাগতই জানাচ্ছেন রাজ্যের রূপান্তরকামীদের একাংশ। তবে তাঁদের কিছু প্রশ্নও রয়েছে। অনুপ্রভা নামে এক রূপান্তরকামী নারী তথা সমাজকর্মী বলেন, ‘‘পুলিশের চাকরিতে কিন্তু রূপান্তরকামী মহিলা ও রূপান্তরকামী পুরুষ তাঁদের জন্য শারীরিক সক্ষমতার মাপকাঠি এক হওয়া উচিত নয়। এ ছাড়া, এ রাজ্যে এখনও হাসপাতালে রূপান্তরকামীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের বন্দোবস্তই করা যায়নি। সমাজ জীবনে রূপান্তরকামীদের নানা ক্ষেত্রে নিভৃতির পরিসরটুকুও জরুরি। পুলিশের মতো চাকরিতে রূপান্তরকামীদের জন্য সংবেদনশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই উদ্যোগটি সফল হবে।’’এ রাজ্যে রূপান্তরকামীদের পরিচয়ের শংসাপত্র বিলিতেও যথেষ্টখামতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী, জেলা শাসক মারফত এই শংসাপত্র দেওয়ার কথা। শংসাপত্র বিলির প্রক্রিয়াটিও জোরদার হওয়া উচিত, মনে করছেন রূপান্তরকামীদের অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Police Transgender
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE