Advertisement
E-Paper

জয়প্রকাশকে এ বার ‘প্রভাবশালী’ তকমা দিলেন সরকারি কৌঁসুলি

প্রতারণার অভিযোগে ধৃত বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারকে ‘প্রভাবশালী’ বলে চিহ্নিত করলেন সরকারি কৌঁসুলি। সারদা থেকে রোজ ভ্যালি— গত দু’বছরে একের পর এক দুর্নীতি মামলায় তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতার জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে আদালতে বারেবারে এই ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্বই তুলে ধরেছে সিবিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৩
বিধাননগর উত্তর থানায় জয়প্রকাশ মজুমদার। রবিবারের নিজস্ব চিত্র।

বিধাননগর উত্তর থানায় জয়প্রকাশ মজুমদার। রবিবারের নিজস্ব চিত্র।

প্রতারণার অভিযোগে ধৃত বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারকে ‘প্রভাবশালী’ বলে চিহ্নিত করলেন সরকারি কৌঁসুলি। সারদা থেকে রোজ ভ্যালি— গত দু’বছরে একের পর এক দুর্নীতি মামলায় তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতার জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে আদালতে বারেবারে এই ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্বই তুলে ধরেছে সিবিআই। এ দিন সরকারি কৌঁসুলি সাবির আলি বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতিকে ‘প্রভাবশালী’ বলায় স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নতুন মোড় নিয়েছে।

রোজ ভ্যালি কাণ্ডে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস পাল গ্রেফতারের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, নোট বাতিলের প্রতিবাদ করায় মোদী সরকার তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চালাচ্ছে। জয়প্রকাশের গ্রেফতারের পরে বিজেপি নেতারা বলতে শুরু করেন, মমতা পাল্টা প্রতিহিংসা দেখাচ্ছেন। এ দিন সরকারি আইনজীবীর বক্তব্যের পরে তাঁদের সেই সুর আরও চড়া হল। জয়প্রকাশবাবুকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা, তৃণমূল সরকার এ বারে তাঁদের একাধিক নেতাকে ‘ফাঁসানো’র চেষ্টা করবে। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা তথা বিধায়ক এবং দলের এক কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষককে ‘সবক’ শেখাতে রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশ বিশেষ ভাবে তৎপর হয়েছে। এ রাজ্য থেকে নির্বাচিত এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং দলের সম্পাদক পদমর্যাদার এক নেত্রীর দিকেও নজর রয়েছে প্রশাসনের। যে কারণে খড়গপুরে রেল-মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুর হত্যার প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ দিন বলেন, ‘‘শুনছি, তৃণমূল সরকার আমাদের রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে। তারা যেন মনে রাখে, দিলীপ ঘোষ একা নন। তাঁর সঙ্গে গোটা দেশের বিজেপি রয়েছে। দিলীপবাবুর গায়ে হাত দিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার খেসারত দিতে হবে!’’

বিজেপির বক্তব্য উড়িয়ে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা বলেন, ‘‘প্রতারণার মামলায় এক জনকে ধরা হয়েছে। বাকিটা আদালতের বিচার্য। এই নিয়ে রাজ্যকে অশান্ত করার চেষ্টা হলে বরদাস্ত করা হবে না।’’

গত বছর অগস্টে কিছু টেট পরীক্ষার্থী থানায় অভিযোগ করেন, সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জয়প্রকাশবাবু তাঁদের থেকে ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু সেই মামলা তিনি করেননি, টাকাও ফেরত দেননি। ওই অভিযোগের পাঁচ মাস পরে শনিবার জয়প্রকাশবাবুকে গ্রেফতার করে বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশ।

এ দিন আদালতে ঢোকার মুখে জয়প্রকাশবাবু বলেন, ‘‘আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। অভিযোগকারী এক জন প্রতারক! কোনও টেট পরীক্ষার্থী নয়।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমার টাকা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। অভিযোগটাই মিথ্যা। এটা দিদির কীর্তি!’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুও আসানসোলে বলেন, ‘‘গ্রেফতারির পিছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করছে। তবে এখনই আমরা কোনও আন্দোলনের পথে যাচ্ছি না।’’

জয়প্রকাশের অভিযোগকেই প্রকারান্তরে সমর্থন করেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। একটি আলোচনাসভায় সেলিম বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস পাল গ্রেফতার হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন ভারসাম্য রাখার জন্য এমন গ্রেফতারি করেনি, এটা বলা যাবে কী করে?’’ আদালতের বাইরে জয়প্রকাশবাবুর মেয়ে, আইনজীবী মৃণালিনী মজুমদারও বলেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরেই এই গ্রেফতারি।’’

আদালতে জয়প্রকাশের আইনজীবী তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, অভিযোগকারী একটি সংগঠনের সদস্য। তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তারা মামলার জন্য কাদের টাকা দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হোক। বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি সন্দীপ ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘পুলিশের জেরায় জয়প্রকাশ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।’’ অভিযোগকারীর পক্ষে আইনজীবী জয়দেব দাস বলেন, ‘‘জয়প্রকাশ আইনজীবী নন। অথচ মামলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই ষড়যন্ত্রের ধারা যুক্ত করা হোক।’’

Jay Prakash Majumdar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy