Advertisement
E-Paper

‘ফ’-এ ফিশফ্রাই, ‘ফ’-এ ফুচকা, দেড় দশকে বঙ্গ রাজনীতির পাতে নানা স্বাদের পঞ্চব্যঞ্জন চেখে দেখেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা

গত প্রায় দেড় দশকের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য রাজনীতির পাতে পড়েছে পঞ্চব্যঞ্জন। যা চেখে দেখেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। ঘটনাচক্রে, যার শুরু হয়েছিল নবান্নের ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘর থেকে।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ১১:০৬
পুজোয় ফুচকা খাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুভেন্দু অধিকারী!

পুজোয় ফুচকা খাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুভেন্দু অধিকারী! — ফাইল চিত্র।

খানিকটা রেওয়াজ ভেঙেই দুগ্গাপুজোয় এ বার অষ্টমী এবং নবমীতে কন্যা আজানিয়াকে নিয়ে একাধিক মণ্ডপ পরিক্রমা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকাও খেয়েছেন। তার অব্যবহিত পরেই সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের পুজোর বিসর্জনে হাজির ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনিও ফুচকা খেয়েছেন! তবে শুকনো। জলভরা নয়। আশ্চর্য নয় যে, শুভেন্দুর ফুচকা ভক্ষণকে অভিষেকের ‘নকল’ বলে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে তৃণমূল।

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে মূল আলোচ্য হয়ে উঠেছে নিছকই নিরীহ ফুচকা। কিন্তু গত প্রায় দেড় দশকের দিকে নজর ঘোরালে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য রাজনীতির পাতে পড়েছে পঞ্চব্যঞ্জন। যা চেখে দেখেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। ঘটনাচক্রে, যার শুরু হয়েছিল নবান্নের ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘর থেকে।

ঘটনাচক্র এ-ও যে, সোমবার লক্ষ্মীপুজো। যার সঙ্গে পঞ্চব্যঞ্জনের একটি অনুষঙ্গ রয়েছে। ‘শ্রীশ্রী লক্ষ্মী পূজা পদ্ধতি’র লেখক করুণানন্দ ঠাকুর চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘লক্ষ্মীর আরাধনায় সাধারণ ভাবে সকলেই দেবীকে উজাড় করে দেন। তাঁর প্রতি অর্পিত ভোগে নানা রকমের পদ থাকে। তাকেই আমরা পঞ্চব্যঞ্জন বলি।’’ পাশাপাশিই তিনি জানাচ্ছেন, এই পঞ্চব্যঞ্জনের সঙ্গে ‘৫’ সংখ্যার সম্পর্ক নেই। কেউ দেবীর উদ্দেশে একরকম ভাজা, ভাত, ডাল অর্পণ করতে পারেন। আবার কেউ ১০ রকম পদও দিতে পারেন তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী। সামগ্রিক ভাবে সবই ‘পঞ্চব্যঞ্জন’। ব্যাখ্যা যেমনই হোক, আনন্দবাজার ডট কম লক্ষ্মীপুজোর দিনই রাজ্য রাজনীতির পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে দিচ্ছে পাঠক-পাঠিকাদের পাতে।

ফিশফ্রাই

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের মাস কয়েক পরে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের কথা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিল বাম প্রতিনিধিদল। যার নেতৃত্বে ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান তথা প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসু। বিমানদের আপ্যায়ন করতে মমতা প্লেটে সাজিয়ে দিয়েছিলেন ফিশফ্রাই এবং ক্রিম রোল। সেই সাক্ষাতের পরে রাজ্য রাজনীতির আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল বিমানদের ফিশফ্রাই খাওয়া। কর্মীরা যখন মার খাচ্ছেন, তখন নেতারা কেন মমতার পরিবেশন করা ফিশফ্রাই খেলেন, সেই প্রশ্নে আলোড়িত হয়েছিল সিপিএমের অন্দরও। তার পর থেকে ফিশফ্রাই একটি ‘রাজনৈতিক খাদ্য’।

ঝালমুড়ি

ফিশফ্রাই কাণ্ডের ঠিক এক বছর পর আরও একটি খাদ্যবস্তু নিয়ে আলোড়িত হয়েছিল বাংলার রাজনীতি। সেটি হল আমজনতার পছন্দের ঝালমুড়ি। সৌজন্যে আবারও মমতা। তখন সদ্য এক বছর হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন নরেন্দ্র মোদী। বাবুল সুপ্রিয় প্রথম বার আসানসোল থেকে জিতেই জায়গা পেয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বে। নজরুল মঞ্চে ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্পের উদ্বোধনে এসেছিলেন মোদী। সেখানে ছিলেন বাবুল। মুখ্যমন্ত্রী মমতাও ছিলেন সেই কর্মসূচিতে। উদ্বোধন শেষ হওয়ার পরে মোদীর কনভয় রওনা দেয় রাজভবনের উদ্দেশে। তখনই মমতা দেখতে পান, বাবুল তাঁর গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। কালক্ষেপ না করে বাবুলকে নিজের গাড়িতে তুলে নেন মমতা। কারণ, মমতা-বাবুল উভয়েরই গন্তব্য ছিল রাজভবনের নৈশভোজ। ‘দিদি’কে না বলতে পারেননি বিজেপির বাবুল। নজরুল মঞ্চ থেকে রাজভবন যাওয়ার পথে ভিক্টোরিয়ার সামনে গাড়ি থামান মমতা। তার পর এক ঠোঙা ঝালমুড়ি কিনে দেন বাবুলকে। তাতেও ‘না’ বলেননি বাবুল। খেয়ে নিয়েছিলেন। ফিশফ্রাইয়ের পর দ্বিতীয় পদ হিসাবে রাজনীতির পাতে পড়েছিল ঝালমুড়ি। ঘটনাচক্রে, মোদীর সরকারের সেই মন্ত্রী বাবুল এখন মমতার সরকারে মন্ত্রী। তবে ‘দিদি’ তাঁকে প্রকাশ্যে আর ঝালমুড়ি খাওয়াননি।

লুচি-আলুর দম

২০১৯ সালে তৃণমূল পরিচালিত বিধাননগর পুরসভার মেয়র সব্যসাচী দত্ত। আচমকাই একদিন বিজেপির মুকুল রায় চলে যান সব্যসাচীর সল্টলেকের বাড়িতে। সেই সাক্ষাৎ নিয়ে নানা জল্পনায় আন্দোলিত হতে থাকে লবণহ্রদের রাজনীতি। সেই জল্পনায় জল ঢালতে সব্যসাচী জানিয়েছিলেন, মুকুল তাঁর দাদার মতো। তিনি সব্যসাচীর স্ত্রীর হাতে লুচি-আলুর দম খেতে ভালবাসেন। তাই ‘রায়সাহেব’ গিয়েছিলেন দত্তবাড়িতে। মুকুলও জানিয়েছিলেন, তিনি তৃপ্তি করে লুচি-আলুর দম খেয়েছেন। তার পরে সব্যসাচী বিজেপিতে গিয়েছিলেন। তিনি তৃণমূলে ফিরে এসেছেন। তৃণমূলে ফিরে এসেছিলেন মুকুলও। আপাতত তিনি অসুস্থ এবং গৃহবন্দি। কিন্তু লক্ষ্মীপুজোর ভোগের পাশাপাশি লুচি-আলুর জায়গা করে নিয়েছিল রাজ্য রাজনীতির মেনুতেও।

নারকেল নাড়ু

গত লোকসভা ভোটের আগে উত্তর কলকাতার তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছিল। হঠাৎ করেই ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাদিবসের দিন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে উত্তর কলকাতা লোকসভা আসনে মহিলা প্রার্থীর দাবিতে সরব হন কুণাল ঘোষ। কয়েক দিন ধরে লাগাতার কামান দাগতে থাকেন। তার পর হঠাৎ এক দিন সন্ধ্যায় কুণাল চলে যান সুদীপের বাড়ি। ছিলেন সুদীপের বিধায়ক স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেখান থেকে বেরিয়ে আমোদিত কুণাল জানিয়ে দেন, তাঁদের মধ্যে দারুণ আড্ডা হয়েছে। উপরি পাওনা নয়নার নিজের হাতের বানানো নারকেল নাড়ু। কুণাল বলেছিলেন, ‘‘আমি নারকেল নাড়ু খেতে ভালবাসি বলে বৌদি বানিয়ে রেখেছিলেন!’’

এবং ফুচকা

নোনতা, ঝাল, মিষ্টির পরে বঙ্গ-রাজনীতির পাতে এল ফুচকাও। যাতে টক-ঝাল দু’টিই রয়েছে। সৌজন্যে তৃণমূলের অভিষেক এবং বিজেপির শুভেন্দু। তবে শুভেন্দু ফুচকাবিক্রেতার কাছে ‘ড্রাই’ চেয়েছিলেন। অর্থাৎ, শুকনো। ফুচকার অভ্রান্ত সঙ্গী তেঁতুলজল ছাড়াই তিনি ফুচকা খেয়েছেন। ফুচকাবিলাসীরা পাতায় পড়ামাত্রই গোটা ফুচকা এক গ্রাসে খেয়ে ফেলেন। অভিষেকের ফুচকা খাওয়া দেখে মনে হয়েছে, তিনি একেবারে অনভ্যস্ত নন। সেখানে শুভেন্দুকে দেখে মনে হয়েছে, তিনি খানিক আনকোরা। যদিও তাঁর পাশে দাঁড়ানো কৌস্তুভ বাগচি গপাগপ ফুচকা খেয়েছেন।

পুনশ্চ: এতগুলি খাবারের পদ থাকবে আর জল থাকবে না? রসিকজনেরা বলছেন, বঙ্গ রাজনীতিতে জলও আছে। সেই জল রাখা ছিল একটি জগে। যে জগ অধ্যাপিকাকে ছুড়ে মেরেছিলেন একদা ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম।

Food West Bengal Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy