বিদ্রোহ বেড়ে চলেছে রাজ্য বিজেপি-তে। নেটমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ, হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ, কলকাতায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে বৈঠক, বনগাঁয় চড়ুইভাতি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ, লোকাল ট্রেন থেকে কলকাতার রাজপথে পোস্টার— নানা ভাবে রাজ্য বিজেপি-র ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরব দলেরই একাংশ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দাবি, নতুন রাজ্য কমিটিতে পুরনোদের ফিরিয়ে আনা অথবা সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর অপসারণ। কিন্তু উল্লেখযোগ্য ভাবে এখনও পর্যন্ত ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের কর্তারা কোনও জবাব দেননি। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শুধু একই কথা বার বার বলেছেন যে, ‘‘এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আলোচনার মধ্য দিয়েই সব মিটে যাবে।’’
কিন্তু শুধুই কি আলোচনা, না কি বিদ্রোহ দমনের অন্য পথের কথা ভাবছেন বিজেপি নেতৃত্ব? এমন প্রশ্ন উঠতেই গেরুয়া শিবিরের এক প্রবীণ নেতা মনে করালেন বিজেপি-র ইতিহাস। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দলে বিদ্রোহ নতুন কিছু নয়। অনেক বিখ্যাত এবং ক্ষমতাবান নেতা বিভিন্ন সময়ে বিদ্রোহে শামিল হয়েছেন। সেই তালিকায় উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহ থেকে শঙ্করসিন বাঘেলা রয়েছেন। সকলেরই পরিণতি জানা রয়েছে। বিজেপি গুরুত্ব না দিয়েই এই সব নেতাদের একটা সময় অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে।’’ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও কি একই পদক্ষেপ করা হতে পারে? ওই নেতা বলেন, ‘‘নেতৃত্ব কী করবেন সেটা তাঁরাই বলবেন। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলছে চিরকাল দল আগে ও ব্যক্তি পরে’ নীতি নিয়ে চলেছে বিজেপি। এ বারও সেটাই হবে বলে আমি মনে করি। কখনও কার বিরুদ্ধে দল কী অবস্থান নিয়ে নেবে সেটা হয়তো জানাই যাবে না। বিজেপি একই ভাবে উমা ভারতী থেকে কেশুভাই পটেলের মতো বিদ্ৰোহীদের সামলেছে। দল কখনওই সঙ্ঘাতের পথে হাঁটেনি। এটা বিজেপি-র সংস্কৃতিই নয়।’’
বিজেপি-র ওই নেতার কথা যে একেবারে বেঠিক, তা বলা যাবে না। এই রাজ্যেও এমন নজির রয়েছে। ২০০১ সাল নাগাদ রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রাজ্যের প্রাক্তন সভাপতি তপন শিকদার। সেই সময়ে রাজ্য সভাপতির পদে ছিলেন এখনকার বিদ্রোহী তথাগত রায়। তবে সেই সময় পুরনো ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা হওয়া সত্বেও রাজ্য সভাপতি তথাগতর পাশেই ছিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কোনও রকম সমর্থন বা আলোচনার সুযোগ না পেয়ে একটা সময় বিদ্রোহে ইতি টানতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রয়াত তপন। দলের আর হারানো জায়গা ফিরেও পাননি।