Advertisement
E-Paper

মুখ্যসচিবের নির্দেশ, তবু আলুর দাম কমা নিয়ে প্রশ্নই

কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাজারে আলু এবং সব্জির দাম চড়া। পরিস্থিতি সামলাতে বৃহস্পতিবার রাজ্যের আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য এবং টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, অবিলম্বে আলু এবং সব্জির দাম কমাতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০১:২৩

কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাজারে আলু এবং সব্জির দাম চড়া। পরিস্থিতি সামলাতে বৃহস্পতিবার রাজ্যের আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য এবং টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, অবিলম্বে আলু এবং সব্জির দাম কমাতে হবে। বাস্তব ছবিটা অবশ্য অন্য কথা বলছে। জেলা থেকে শহরের বাজারে আলু পৌঁছয় বেশ কয়েক হাত ঘুরে। অভিযোগ, দফায় দফায় দিতে হয় ‘নজরানা’ও। ফলে এই বাড়তি খরচ বন্ধ করা এবং ফসল সরাসরি শহরে পৌঁছনো নিশ্চিত করা না গেলে নির্দেশ সত্ত্বেও স্থায়ী ভাবে দাম কমবে কি না, তা

নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ব্যবসায়ী ও টাস্ক ফোর্সের অন্দরেই।

এ দিনের বৈঠকে মুখ্যসচিব আলু ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চান, আলুর দাম বাড়ছে কেন? ব্যবসায়ীরা জানান, ভোটের জন্য কোল্ড স্টোরেজের কর্মীরা বাড়ি চলে যাওয়ায় কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বার করা যাচ্ছিল না। তাই বাজারে চাহিদা তৈরি হচ্ছে। ভোটের পরে ফিরে এসেছেন ওই কর্মীরা। ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই আলুর দাম কমে যাবে।

টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরাই প্রশাসনের নজরে এনেছিলাম। তাই আজকের বৈঠকে বিষয়টি ওঠে।’’ বৈঠকে প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, রাজ্যের বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজে ৫৫ লক্ষ টন আলু মজুত রয়েছে। তা চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। তাই বাজারে যেন কোনও ভাবে আলুর কৃত্রিম চাহিদা তৈরি না হয়।

তাতেও কি দাম কমবে আলু এবং সব্জির?

জবাবে টাস্কফোর্সের সদস্য এবং মানিকতলা বাজারের ব্যবসায়ী কমিটির সম্পাদক প্রভাত দাস বলেন, ‘‘জেলার বাজার থেকে শহরের পাইকারি বাজারে এক লরি সব্জি বা আলু আনতে পথেই পুলিশ বা মস্তানদের নজরানা দিতে হয় ছ’শো থেকে আটশো টাকা। পাইকারি বাজারে পৌঁছনোর পরেও সেই সব্জি বা আলু তিন হাত হয়ে পৌঁছয় খুচরো বাজারে। এ সব বন্ধ করতে না পারলে সরকারি পদক্ষেপের জন্য হয়তো কয়েক দিনের জন্য দাম কমবে হয়তো। ফের দাম বেড়ে যাবে।’’

শহরের বিভিন্ন বাজারে কোথাও জ্যোতি আলু ২২ থেকে ২৫ টাকা কিলো দরে এবং চন্দ্রমুখী ২৪ থেকে ২৬ টাকা কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে। সল্টলেকে জ্যোতি আলু ২২টাকা কিলো এবং চন্দ্রমুখী ২৫ টাকা। পটল, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙের মতো গরমের অন্যান্য সব্জিও বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কিলো দরে।

গড়িয়াহাটের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অলোক সেনের বক্তব্য, ‘‘জিনিসের যা দাম, তাতে বাজারে গেলে পাঁচশো টাকা শেষ হতে পনেরো মিনিটও লাগে না।’’ মানিকতলার বাসিন্দা কিংশুক মৈত্রও বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে যা কিনব ভেবে বাজারে আসি, দামের জন্য তার অর্ধেকও কিনতে পারি না।’’

যদিও আলুর দাম এই সময়ে এত বাড়ার কোনও কারণ নেই বলে মনে করেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। তাঁদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়, তাতে ভিন্‌ রাজ্যে রফতানি করেও রাজ্যের চাহিদা পূরণের মতো আলু সব সময়েই মজুত থাকে। গবেষক হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভোট-সহ অন্যান্য পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বেশি মুনাফা লাভের জন্য মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজারে একটা কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করছে। তাই বাজারে এখন যা আলুর দাম থাকার কথা, তার থেকে প্রতি কিলো গড়ে আট থেকে দশ টাকা বেশি হচ্ছে।’’

তবে সব্জির দাম বাড়ার পিছনে আবহাওয়ার ভূমিকা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এ বছর বৃষ্টি ঠিক মতো না হওয়ায় রাজ্যে সব্জি চাষ ব্যাপক ভাবে ব্যাহত হয়েছে। তাই পাইকারি থেকে খুচরো বাজার, সর্বত্রই সব্জির দাম চড়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব্জিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খরার জন্য সারা দেশেই সব্জি উৎপাদন কম হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গও সেই বিপদ থেকে রেহাই পায়নি।’’

খরার জন্য সব্জির দাম যে চড়া, সে কথা স্বীকার করেন যাদবপুর বাজারের সব্জি বিক্রেতা শংকর কাঁসারি। তাঁর কথায়, ‘‘কোলে মার্কেটে সব্জির পাইকারি বিক্রেতারা যখন ঝুড়ি খোলেন, তখন দেখা যায় ৪-৫ কেজি সব্জি ঝলসে গিয়েছে।’’ গড়িয়াহাট বাজারের আলু বিক্রেতা মনা সাহা এ দিনও ২০ টাকা কিলো দরে জ্যোতি এবং ২৪ টাকা দরে চন্দ্রমুখী আলু বিক্রি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দাম কম বা বেশি হওয়ার বিষয়ে খুচরো বিক্রেতাদের কিছু করার থাকে না। পুরোটাই নির্ভর করে আড়তদার এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের উপরে।’’

এ দিনের বৈঠকের পরে টাস্কফোর্সের সদস্য প্রভাতবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যসচিবের সঙ্গে নবান্নে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং রং করা আলু, সব্জি বিক্রির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শুধু সব্জি নয়, বৈঠকে খাসির এবং মুরগির মাংসের দাম বাড়ার
বিষয়েও পুলিশকে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

নবান্ন সূত্রে খবর, মাটি মিশিয়ে আলু বিক্রি এবং রং করা সব্জি বিক্রির বিষয়ে এ দিন বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন এবং টাস্কফোর্সের সদস্যদের সতর্ক করেন মুখ্যসচিব। বৈঠকে উপস্থিত ব্যবসায়ী এবং সদস্যদের তিনি জানিয়ে দেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে খবর রয়েছে বিভিন্ন জেলার হাটে সব্জি রং করা হয় এবং আলুতে মাটি মাখানো হয়। এই কাজ বন্ধ করতে হবে। প্রশাসন এ সব বরদাস্ত করবে না।’’

potato hike vegetable
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy