সিবিআইয়ের অভিযোগ, চিটফান্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত এড়াতেই মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি কেনা হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত।
মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রতি মাসে ২৭ লাখ টাকা করে ২৩ মাস টাকা দেওয়া হয়েছিল সারদা কর্তার মালিকানাধীন তারা টিভিকে। সব মিলিয়ে প্রায় ৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। সেই টাকা নিয়ে এ বার শীর্ষ আদালতে প্রশ্ন তুলল সিবিআই।
সিবিআই আধিকারিকরা দাবি করেছেন, তাঁদের তদন্তে উঠে এসেছে— সারদা কর্তা গ্রেফতার হওয়ার পর, ২০১৩ সালের মে মাস থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ২৩ মাস ধরে সারদা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন তারা টিভির কর্মীদের বেতন বাবদ এই টাকা খরচ করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে।
সুপ্রিম কোর্টে ১৮ ফেব্রয়ারি দাখিল করা একটি অতিরিক্ত হলফনামায় সারদা-সহ অন্যান্য চিটফান্ডের তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিবিআইয়ের ইও-৪-এর শাখা প্রধান পি সি কল্যাণ অভিযোগ করেন, ওই লেনদেনের মধ্যেও লুকিয়ে আছে চিট ফান্ডের সঙ্গে রাজ্যের প্রভাবশালীদের যোগ সূত্র। তিনি তাঁর পেশ করা হলফনামায় জানিয়েছেন, ওই আর্থিক লেনদেনের তথ্য উঠে আসার পরই রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে ১৬ অক্টোবর ২০১৮ সালে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়, কার নির্দেশে এবং কী ভাবে ওই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সরকারি কোষাগার থেকে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত তার কোনও উত্তর তারা পায়নি।
আরও পড়ুন: কলকাতায় অবাধ নির্বাচন করাতে হবে, বার্তা দিলেন পুলিশ কমিশনার
তারা টেলিভিশনের পরেই ওই হলফনামার ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদে ফের একবার প্রশ্ন তোলা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র জাগো বাংলার অ্যাকাউন্ট এবং মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি নিয়েও। ওই সিবিআই আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রায় সাড়ে ছ’কোটি টাকার ছবি বিক্রি হয়েছিল যার বড় আংশই কিনেছেন বিভিন্ন চিট ফান্ড সংস্থার ডিরেক্টর, মালিকরা। সিবিআইয়ের অভিযোগ, চিটফান্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত এড়াতেই ওই ছবি কেনা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: যুবককে পুড়িয়ে খুন, অভিযুক্ত প্রেমিকাই!
১৮ ফেব্রুয়ারির ওই হলফনামায় পি সি কল্যাণ মূলত চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রথমেই তিনি অভিযোগ করেছেন, হলফনামার সঙ্গে তিনি প্রাসঙ্গিক সমস্ত নথি জমা দিয়েছেন যা প্রমাণ করে রাজ্য ইচ্ছাকৃত ভাবে চিট ফান্ড তদন্তে সিবিআইকে অসহযোগিতা করছে। তাঁর দ্বিতীয় অভিযোগ, তদন্তে অত্যন্ত প্রভাবশালী (হাইলি প্লেসড অথরিটি)-র সঙ্গে ওই চিটফান্ড কান্ডের যোগ পাওয়া গিয়েছে। তৃতীয়ত, সিবিআইকে হেনস্থা করতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বিভিন্ন মামলা করেছে রাজ্য পুলিশ। সিবিআই এস পি তাঁর হলফনামার চতুর্থ অংশে, ৩ ফেব্রুয়ারি তত্কালীন নগরপাল রাজীব কুমারের সরকারি বাসভবনে যাওয়ায় কী ভাবে কলকাতা পুলিশের হাতে তাঁদের ‘হেনস্থা’ হতে হয়েছিল, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, সে দিন কমিশনারের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর হাজির হওয়ার প্রসঙ্গও।
৮০ পাতার হলফনামায় সিবিআই ২২টি নথি জমা দিয়েছে এবং সেই নথির ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের দাবি, ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের তরফে চিট ফান্ড নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল রাজ্যকে। তার ভিত্তিতে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছিল সেই সম্পর্কে নবান্নের কাছে একাধিক বার জানতে চাওয়া হয়। সিবিআইয়ের অভিযোগ, সেই চিঠিরও কোনও উত্তর মেলেনি নবান্ন থেকে। হলফনামায় দুই প্রাক্তন সাংসদ তাপস পাল এবং আবু হাসেম খান চৌধুরীর দেওয়া চি়টফান্ড নিয়ে অভিযোগ পত্রেরও উল্লেখ করেছে সিবিআই। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য কী ব্যবস্থা নিয়েছিল জানতে নবান্নে চিঠি দেয় সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দাবি, প্রতি ক্ষেত্রেই হয় কোনও উত্তর আসেনি, নয়তো বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সিবিআইয়ের এসপির দাবি, ওই সমস্ত তথ্য প্রমাণ থেকেই বোঝা যাচ্ছে রাজ্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে অসহযোগিতা করছে। ওই দিন হলফনামা পেশের বিরোধিতা করেন রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। তাঁর বিরোধিতার কথাও আদালতের নথিতে রেকর্ড করা হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই হলফনামা এবং রাজ্যের পেশ করা পাল্টা হলফনামা নিয়ে হবে পরবর্তী শুনানি।
(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেবাংলায় খবরপেতে চোখ রাখুন আমাদেররাজ্যবিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy