Advertisement
০২ মে ২০২৪

অবশেষে সিবিআই কব্জায় সুদীপ্ত, কুণালরা

সুপ্রিম কোর্ট গত ৯ মে সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তভার দিয়েছিল সিবিআই-কে। তার ৩৯ দিনের মাথায়, সোমবার মূল অভিযুক্তদের হেফাজতে পেল ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। আলিপুর আদালতের নির্দেশ, মূল অভিযুক্ত সারদা-প্রধান সুদীপ্ত সেন-সহ ছ’জনকে সাত দিন হেফাজতে রাখতে পারবে সিবিআই। তাঁদের ফের আদালতে তুলতে হবে ২৩ জুন।

আলিপুর পুলিশ আদালতে কুণাল ঘোষ। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

আলিপুর পুলিশ আদালতে কুণাল ঘোষ। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্ট গত ৯ মে সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তভার দিয়েছিল সিবিআই-কে। তার ৩৯ দিনের মাথায়, সোমবার মূল অভিযুক্তদের হেফাজতে পেল ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। আলিপুর আদালতের নির্দেশ, মূল অভিযুক্ত সারদা-প্রধান সুদীপ্ত সেন-সহ ছ’জনকে সাত দিন হেফাজতে রাখতে পারবে সিবিআই। তাঁদের ফের আদালতে তুলতে হবে ২৩ জুন।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে ওই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩৯৩টি মামলা চলেছে। সেই সব মামলায় এত দিন রাজ্য পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করেছে তাঁদের। আলিপুর আদালত নির্দেশ দেওয়ায় এ বার অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করবে সিবিআই। ওই তদন্ত সংস্থা সূত্রের খবর, এ-পর্যন্ত তিনটি মামলা দায়ের করেছে তারা। হেফাজতে নিয়ে রাতেই সুদীপ্ত-সহ কয়েক জনকে জেরা করা হয়েছে।

সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত ছাড়া অন্য পাঁচ অভিযুক্ত হলেন সারদা গোষ্ঠীর অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ দত্ত, মনোজ নাগেল, অরবিন্দ চহ্বান এবং তৃণমূল সাংসদ তথা সারদার মিডিয়া গোষ্ঠীর কর্তা কুণাল ঘোষ। তাঁদের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনেছে সিবিআই। আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের কাছে ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ তুলে এফআইআর-ও দায়ের করেছে তারা। সুদীপ্ত ও কুণাল সিবিআইয়ের হেফাজতে যেতে অরাজি ছিলেন না। তাই এ দিন তাঁরা আইনজীবী মারফত জামিনের আবেদনও জানাননি।

বিচারক হারাধন মুখোপাধ্যায় এই মামলার অন্যতম তদন্তকারী অফিসার ফণিভূষণ করণের কাছে জানতে চান, তিনি ওই ছয় অভিযুক্তকে ১০ দিনের জন্য হেফাজতে নিতে চাইছেন কেন?

তদন্তকারী অফিসার বলেন, বৃহত্তর ষড়যন্ত্র হয়েছে। সারদা গোষ্ঠী বাজার থেকে যে-টাকা তুলেছে, তা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়েছে এবং আর্থিক কেলেঙ্কারিতে সারদা গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রকদের ভূমিকা কী ছিল, তা জানার জন্যই অভিযুক্তদের সিবিআই হেফাজতে নেওয়া দরকার। বিচারক জানিয়ে দেন, সাত দিন সিবিআই হেফাজতে থাকার সময় অভিযুক্তদের কৌঁসুলিরা প্রতি সন্ধ্যায় মক্কেলদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।

অন্যতম অভিযুক্ত কুণালকে এত দিন কখনও বিধাননগর আদালতে, কখনও বা জলপাইগুড়ি আদালতে বলতে শোনা গিয়েছে, তিনি কিছু বলতে চান। তাঁকে বলতে দেওয়া হোক। ওই সাংসদ বারে বারেই দাবি করেছেন, সিবিআই পুরো ঘটনার তদন্ত করলে তিনি অনেক কথা জানাবেন। আদালতের নির্দেশে তিনি খুশি বলে কুণাল এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন। বিচারকের এজলাস থেকে কোর্ট লক-আপে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, “আমি আজ খুব খুশি। এই প্রথম আমি জামিনের আবেদন করিনি। সিবিআইয়ের হেফাজতে থাকতে চাই। তদন্তে সিবিআই-কে সমস্ত রকম সাহায্য করতে চাই। তদন্তের স্বার্থে যা যা বলার, আমি সবই জানাব সিবিআই-কে।”

আদালত-চত্বরে কুণালকে প্রশ্ন করা হয়, সারদা কাণ্ডে জড়িত বিশেষ কারও নাম তিনি সিবিআই-কে জানাবেন কি না। ওই সাংসদ বলেন, “আমি সিবিআই-কে সব রকম সাহায্য করব।” গ্রেফতারের পর থেকে কুণাল বারে বারেই দাবি করছিলেন, সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত দরকার এবং তিনি সিবিআইয়ের সামনে হাজির হয়ে অনেক কিছু বলতে চান। এ দিন দেখা গেল, আদালতে হাজির সুদীপ্ত-দেবযানীও সিবিআইয়ের আইনজীবীর সওয়াল মনোযোগ দিয়ে শুনছেন।

আদালতে নথি পেশ করে সিবিআই জানায়, সারদা কাণ্ডে রাজ্য জুড়ে ৩৯৩টি মামলা রয়েছে। তারা এর মধ্যে ৭৫টি মামলার তদন্ত শুরু করেছে। রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ওই ৭৫টি মামলার মধ্যে থেকে ৫৫টি মামলাকে একত্র করে পৃথক একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই সংস্থা আদালতে জানায়, তদন্তের স্বার্থেই তারা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে হেফাজতে নিতে চাইছে।

সিবিআইয়ের আর্জির বিরোধিতা করে অভিযুক্তদের আইনজীবীরা জানান, রাজ্য জুড়ে যে-সব মামলা হয়েছে, সেগুলিতে অভিযুক্তেরা হয় জামিন পেয়েছেন অথবা তাঁদের জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শুরু হয়েছে বিচারও। অভিযুক্তেরা বিভিন্ন মামলায় একাধিক বার পুলিশি হাজতেও থেকেছেন।

অভিযুক্তদের আইনজীবীরা আরও জানান, সিবিআই নতুন কোনও মামলা দায়ের করেনি। তারা বেশ কিছু পুরনো মামলা একত্র করে নতুন মামলার কথা জানাচ্ছে। সিবিআই এ ভাবে মামলা ঠুকে অভিযুক্তদের ফের পুলিশি হাজতে নেওয়ার আবেদন জানাতে পারে না। এটা আইনবিরুদ্ধ। তা ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, সিবিআই তদন্ত করবে। বিভিন্ন পুরনো মামলাকে একত্র করে তাদের নতুন মামলা দায়ের করতে বলা হয়নি।

সিবিআইয়ের আইনজীবী পাল্টা জানান, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশেই সিবিআই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তদন্তে নেমেছে। সেই তদন্ত করতে হলে অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা দরকার।

এ দিন সাড়ে ১১টার মধ্যে অভিযুক্তদের জেল-হাজত থেকে আদালতের লক-আপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রিজন ভ্যান থেকে নামার সময় খোশমেজাজে ছিলেন কুণাল। সাংবাদিকদের কাছে তিনি জানতে চান, “আর্জেন্তিনার খেলার ফল কী?” উত্তর আসে “দুই-এক।” ফের প্রশ্ন কুণালের, “মেসি দিয়েছে তো?” উত্তর আসে, “হ্যাঁ, মেসিই দিয়েছে।”

বিকেল সওয়া ৫টা নাগাদ পৃথক ছ’টি প্রিজন ভ্যানের কনভয়ে অভিযুক্তদের সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কলকাতা পুলিশের ওয়্যারলেস গার্ডের একটি গাড়িকেও কনভয়ের সঙ্গে পাঠানো হয় নিরাপত্তার খাতিরে। সিবিআই সূত্রের খবর, ডাক্তারি পরীক্ষার পরে রাতেই অভিযুক্তদের কয়েক জনকে এক দফা জেরা করা হয়। পরে এলাকার তিনটি থানায় ভাগ করে রাখা হয় ছ’জনকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sarada scam cbi kunal ghosh sudipto sen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE