Advertisement
E-Paper

এক টাকাও নিয়ে থাকলে ফাঁসি দিন, দাবি মদনের

সারদার এক টাকাও তিনি নিয়ে থাকলে তাঁর যেন ফাঁসি হয়, বিচারকের কাছে এ রকমই আবেদন জানালেন মদন মিত্র। শুক্রবার পরিবহণমন্ত্রীকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। সেখানে সিবিআইয়ের আইনজীবীরা অভিযোগ আনেন, মন্ত্রী হিসেবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে মদন সারদা থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছেন এবং সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে সারদা কেলেঙ্কারির ষড়যন্ত্রেও সামিল ছিলেন তিনি। এর জবাবেই মন্ত্রী নাটকীয় ভাবে বলেন, “সারদার এক টাকাও যদি মদন মিত্র নিয়ে থাকে, তা হলে আমাকে ফাঁসি দেওয়া হোক। আমি মেনে নেব।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১২
নেত্রীর নামে স্লোগান। শুক্রবার আলিপুর কোর্টের বাইরে মদন মিত্র। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নেত্রীর নামে স্লোগান। শুক্রবার আলিপুর কোর্টের বাইরে মদন মিত্র। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

সারদার এক টাকাও তিনি নিয়ে থাকলে তাঁর যেন ফাঁসি হয়, বিচারকের কাছে এ রকমই আবেদন জানালেন মদন মিত্র।

শুক্রবার পরিবহণমন্ত্রীকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। সেখানে সিবিআইয়ের আইনজীবীরা অভিযোগ আনেন, মন্ত্রী হিসেবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে মদন সারদা থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছেন এবং সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে সারদা কেলেঙ্কারির ষড়যন্ত্রেও সামিল ছিলেন তিনি। এর জবাবেই মন্ত্রী নাটকীয় ভাবে বলেন, “সারদার এক টাকাও যদি মদন মিত্র নিয়ে থাকে, তা হলে আমাকে ফাঁসি দেওয়া হোক। আমি মেনে নেব।”

এ দিন বেলা সওয়া দু’টো নাগাদ জেল থেকে একটি বোলেরো গাড়িতে চাপিয়ে আদালতে আনা হয় মন্ত্রীকে। তাঁর পরনে ছিল মেরুন রঙের পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা। গায়ে ঘিয়ে রঙের শাল। ঢোকার মুখে অনুগামীদের ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ বার্তায় সাড়া দিয়ে মদনবাবু ঢুকে যান ভিতরে। আলিপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মণিকুন্তলা রায়ের এজলাসে সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত জানান, সারদা কেলেঙ্কারিতে মদনবাবুর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তিনি সারদায় টাকা রাখতে মানুষকে প্রলুব্ধ করতেন। সারদার বহু টাকাও তাঁর কাছে গিয়েছে।

এ সব শুনেই আদালতে চেঁচামেচি জুড়ে দেন শাসক দলের ঘনিষ্ঠ এক দল আইনজীবী। পরে তাঁদের থামিয়ে মদনবাবুর আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, এই অভিযোগের প্রমাণ দেখাতে হবে। বিচারককে কেস ডায়েরি পড়ার আর্জিও জানান তিনি। এজলাসে বসেই বিচারক কেস ডায়েরি উল্টেপাল্টে দেখতে থাকেন।

২০০৯ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের বিধায়ক থাকার সময় থেকেই সারদার সঙ্গে মদনবাবুর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই সময়ে সারদার একটি সভায় সুদীপ্ত সেনের প্রশংসা করে মদনবাবুকে বলতে শোনা গিয়েছিল, সারদার সাম্রাজ্য বিন্দু থেকেই সিন্ধুতে পরিণত হবে। সেই প্রসঙ্গে নিজের বক্তব্য আদালতকে জানান মদনবাবু। বলেন, “২০০৯ সালে আমি বিধায়ক হওয়ার পরে শুনতে পাই, সুদীপ্ত সেন নামে এক জন সারদা গার্ডেন্সের সব জমি কিনে নিচ্ছেন। কিন্তু পয়সা দিচ্ছেন না। তখন আমি সুদীপ্ত সেনকে বলি কেন টাকা দিচ্ছেন না। উনি বলেন, ওঁর ছোট সংস্থা। তাই টাকা দিতে পারছেন না। সেই প্রসঙ্গেই আমি বলেছিলাম, সংস্থা আজ ছোট আছে, কাল বড় হবে। বিন্দু বিন্দু থেকেই সিন্ধু হয়। ব্যবসা চালাতে যদি আইনগত সাহায্য লাগে, আমি সাহায্য করব।” মন্ত্রীর দাবি, “চিটফান্ড সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা ছিল না। সঞ্চয়িতা কেলেঙ্কারির সময় আমরা তো স্কুল-কলেজে পড়তাম।”

মন্ত্রীর এই ব্যাখ্যায় অবশ্য সন্তুষ্ট নয় সিবিআই। এ দিন আদালতের বাইরে এক সিবিআই কর্তা বলেন, ‘‘লোকে টাকা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করল আর মন্ত্রী উল্টে সারদাকেই আইনি সাহায্য দেবেন বলে ঘোষণা করলেন! মন্ত্রীর ওই আশ্বাসই তো সারদার উপরে বহু মানুষের আস্থা জাগিয়েছিল।” প্রথম কয়েক দফায় খানিকটা করে টাকা দিয়ে বিষ্ণুপুর এলাকার বহু চাষির কাছ থেকে সুদীপ্ত সেন জমি কেনেন বলে অভিযোগ। পরে বকেয়া কিস্তি মেটানো হয়নি বলে কৃষকেরা অভিযোগ করেন। সেই জমিতেই তৈরি হয় সারদা গার্ডেন্স।

এ দিন সিবিআইয়ের আবেদনের ভিত্তিতে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মন্ত্রীকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়েছে, জেরা করতেই তাঁকে সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার দরকার হতে পারে। সিবিআই সূত্রের খবর, মন্ত্রীকে জেরা করে কিছু তথ্য মিলেছে। যার ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশিতে কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে। ওই সব তথ্য ও নথির ভিত্তিতে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

এ দিন শুনানি শুরু হতেই মদনবাবুর আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায় মন্ত্রীর জামিনের আর্জি জানান। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের প্রসঙ্গ টেনে আনেন অশোকবাবু। সোহরাবুদ্দিন মামলায় শাহকে অভিযুক্ত খাড়া করেছিল সিবিআই। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর মুম্বইয়ের বিশেষ আদালত জানিয়েছে, শাহের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ নেই। অশোকবাবু বলেন, এত দিন ধরে মামলা চলার পর খালাস পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভাবমূর্তি নষ্টের ক্ষতিপূরণ তদন্তকারীরা দেবেন কী করে? তাঁর সওয়াল, মদনবাবু রাজ্যের মন্ত্রী ও সমাজের মাননীয় ব্যক্তি। তাঁকে জেরা শেষ হয়ে গেলে জেলে আটকে রাখার অর্থ নেই। অশোকবাবুর আবেদন, আদালত মন্ত্রীকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিক। “প্রয়োজন হলে মন্ত্রী পাসপোর্ট জমা রাখবেন। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হোক। মন্ত্রীর হয়ে গ্যারান্টার হবেন আদালতের বহু আইনজীবীও।”

এর বিরোধিতায় সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, মন্ত্রী প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি জেল থেকে ছাড়া পেলে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে পারেন। পার্থবাবু বলেন, “মদনবাবুর প্রভাব আমরা তাঁকে গ্রেফতারের দিন থেকেই দেখে আসছি।” অশোকবাবুর অভিযোগ, তদন্তকারীরা ‘সারদা-আতঙ্কে’ ভুগছেন। তথ্য-প্রমাণ নষ্ট হবে, এই আতঙ্কেই অভিযুক্তদের জেলে রাখা হচ্ছে।

অকারণে জেলে রাখা নিয়ে নগর দায়রা আদালতের সিবিআই এজলাসে অভিযোগ জানান সারদা কাণ্ডে ধৃত মনোজ নাগেলের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতাও। এফআইআরে নাম থাকলেও চার্জশিটে নাগেলের নাম নেই। সিবিআই জানায়, তদন্ত চলছে। তাই নাগেলকে হেফাজতে না চাইলেও অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। আদালত জানায়, তদন্তকারী আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। দশ দিনে ফের রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সিবিআইয়ের এসপিকে তা তদারকি করতে বলা হয়েছে।

এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হয় সুদীপ্ত সেনের আইনজীবী নরেশ ভালোড়িয়াকে। তাঁর আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত জানান, নরেশ সুদীপ্তর আইনজীবী ছিলেন। তাঁকে কেন ধরা হল, বোঝা যাচ্ছে না। সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, নরেশ সারদার বেআইনি ব্যবসার জাল নথি বানাতেন। তাঁকেও ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত।

madan mitra saradah scam CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy