Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কী ভাবে রিন্টুর নাম মন্ত্রীর মুখে, গ্রামে উঠছে প্রশ্ন

সরাসরি মন্ত্রীর ছত্রচ্ছায়ায় সে এখনও পৌঁছতে পারেনি। কিন্তু যাঁর কথায় সে উঠত-বসত, সেই নেতাটি ইংরেজবাজারের তৃণমূল বিধায়ক তথা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর অনুগামী বলেই পরিচিত। কাজেই রিন্টু শেখের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টা ও মারধরের অভিযোগ ওঠার পরে কৃষ্ণেন্দুবাবু ‘স্বেচ্ছা-সহবাসে’র তত্ত্ব খাড়া করায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা অনেকেই অবাক হননি।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০১
Share: Save:

সরাসরি মন্ত্রীর ছত্রচ্ছায়ায় সে এখনও পৌঁছতে পারেনি। কিন্তু যাঁর কথায় সে উঠত-বসত, সেই নেতাটি ইংরেজবাজারের তৃণমূল বিধায়ক তথা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর অনুগামী বলেই পরিচিত।

কাজেই রিন্টু শেখের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টা ও মারধরের অভিযোগ ওঠার পরে কৃষ্ণেন্দুবাবু ‘স্বেচ্ছা-সহবাসে’র তত্ত্ব খাড়া করায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা অনেকেই অবাক হননি। কৃষ্ণ চৌধুরী নামে কৃষ্ণেন্দু-অনুগামী যে নেতা রিন্টুর মূল মদতদাতা, তিনি এখনও বলছেন, “অভিযোগকারিণীর স্বভাব ভাল নয়। গ্রামের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করে।”

অতএব যোগাযোগটা পরিষ্কার। গোড়ায় যিনি অভিযোগকারিণীকে ‘ভাল মেয়ে’ বলে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন, সেই রিন্টুর স্ত্রী মিনা বিবি শুক্রবার বলেন, “টিভিতে দেখেছি, মন্ত্রী ওই মহিলার বিরুদ্ধে বলেছেন। আমরা মন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।”

কী ভাবে নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠল রিন্টু? স্থানীয় সূত্রে খবর, এক সময়ে মুরগির খামারের ব্যবসা ছিল রিন্টুর। ক্রমশ তৃণমূল নেতাদের নেকনজরে পড়ে রতুয়া ২ ব্লকের পুকুরিয়া পঞ্চায়েতের চৌদুয়াল গ্রামে সে দাদাগিরি শুরু করে বলে দলেরই একাংশের অভিযোগ। তবে রিন্টুর বেশি সময় কাটত ইংরেজবাজারে নরহাট্টা গ্রামের লক্ষ্মীঘাটে। কারণ, সেখানকার গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা অনিতা শীল চৌধুরীর স্বামী কৃষ্ণবাবুর প্রায় ছায়াসঙ্গী হয়ে উঠেছিল সে। গত পঞ্চায়েত ভোটে ওই এলাকায় তৃণমূলের হয়ে প্রচারেও সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল রিন্টুকে। পরে খামার বন্ধ করে ভুটভুটি কিনে সে নতুন ব্যবসায় নামে।

সেই কৃষ্ণবাবু এখন কী বলছেন? অভিযোগকারিণী সম্পর্কে কটূক্তি করেও আপাতত তিনি নিজের পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত। এ দিন তিনি বলেন, “রিন্টু আমাদের এলাকায় দোকান চালাত। ওই সুবাদেই ওকে চিনি। এখন আমরা ওর পাশে নেই।” পাশে যে নেই, তা রিন্টুর স্ত্রী মিনা বিবিও বুঝছেন। তাঁর আক্ষেপ, “আমার স্বামীকে নানা কাজে ব্যবহার করেছিল তৃণমূল। কিন্তু ওকে যখন পুলিশ ধরল, কেউ তো ছড়িয়ে আনছে না!”

অভিযোগকারিণীর বাড়ি থেকে বড়জোর তিন কিলোমিটার দূরে রিন্টুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার মোড়ে-মোড়ে দিনভর শোনা গিয়েছে এই নিয়ে জল্পনা। চায়ের দোকান, সেলুন, মুদির দোকানের আড্ডাতেও কথা উঠেছে, রিন্টুর হয়ে মন্ত্রী সংবাদমাধ্যমের কাছে এমন বললেন কেন? গ্রামের ঘটনা মন্ত্রীর কাছে পৌঁছলই বা কী ভাবে?

স্থানীয় এক মুরগি বিক্রেতা দাবি করেন, রিন্টুর সঙ্গে গ্রামের কারও বনিবনা নেই। তাই গ্রামে সে রাজনীতি করতে যায়নি। বরং অন্য এলাকায় মিটিং-মিছিলে তাকে দেখা যেত। এ দিন কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীকে ফোন করা হলে তাঁর এক অনুগামী সেটি ধরেন। বলেন, “দাদা এখন ফিজিওথেরাপি করাচ্ছেন। ফোন দেওয়া যাবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE