Advertisement
২৭ মে ২০২৪

ছুটি পেতাম জামিন হলে, হতাশ ধর্নামঞ্চ

জামিনের জন্যে হাপিত্যেশ করে ছিলেন ওঁরাও। মন্ত্রী মদন মিত্রর অনুগামী বলে শুধু নয়, দলের মুখ চেয়ে শুধু নয়। একেবারে নিজেদের তাগিদে। কী রকম? মদনের জামিন হলে ওঁদের ছুটি হতো যে! ওঁরা যাঁরা ‘দিদি’র নির্দেশে রোজ নিয়ম করে ধর্নামঞ্চে ভিড় জমান! শুক্রবার সকাল থেকেই মঞ্চের উপরে কী হয় কী হয় উত্তেজনা। জামিন না জেল! এই জল্পনাতেই কাটছিল একটার পর একটা ঘণ্টা।

শ্রোতার আসন সুনসান। ময়দানে তৃণমূলের ধর্না কর্মসূচি। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।

শ্রোতার আসন সুনসান। ময়দানে তৃণমূলের ধর্না কর্মসূচি। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

জামিনের জন্যে হাপিত্যেশ করে ছিলেন ওঁরাও। মন্ত্রী মদন মিত্রর অনুগামী বলে শুধু নয়, দলের মুখ চেয়ে শুধু নয়। একেবারে নিজেদের তাগিদে।

কী রকম? মদনের জামিন হলে ওঁদের ছুটি হতো যে! ওঁরা যাঁরা ‘দিদি’র নির্দেশে রোজ নিয়ম করে ধর্নামঞ্চে ভিড় জমান!

শুক্রবার সকাল থেকেই মঞ্চের উপরে কী হয় কী হয় উত্তেজনা। জামিন না জেল! এই জল্পনাতেই কাটছিল একটার পর একটা ঘণ্টা। শেষ পর্যন্ত খবর এল, জামিন পাননি ক্রীড়ামন্ত্রী। ফলে ধর্না চালানোর দায় থেকে জামিন হল না তৃণমূলেরও!

মদন মিত্র গ্রেফতার হওয়া ইস্তক তার প্রতিবাদে ময়দানে গোষ্ঠ পালের মূর্তির তলায় ধর্নায় বসার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্না দেওয়ার কথা ছিল তৃণমূলপন্থী ক্রীড়াবিদদেরই। কিন্তু কার্যত দ্বিতীয় দিন থেকেই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মঞ্চে লোক ভরানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে উদ্যোক্তাদের পক্ষে। এই সেদিনও শিল্পী-সাহিত্যিকদের মিছিলে লোক আনার ব্যাপারে মদনই ছিলেন বড় ভরসা। কিন্তু মন্ত্রী নিজেই গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার পরে লাগাতার ধর্নায় বসার মতো ক্রীড়াবিদ কম পড়িয়াছে! দলীয় কর্মীদের জুটিয়ে মঞ্চ ভরানোও উত্তরোত্তর কঠিন হচ্ছে। তৃণমূল এবং দলের শাখা সংগঠনের নেতারা মাঠে নেমেও সাত ঘণ্টা মঞ্চের উপরে-নীচে লোক জড়ো করে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ দিন মদনের জামিন হলে তাঁরা এই দায় থেকে মুক্ত হতেন। কিন্তু জেল হওয়ায় ধর্না চালিয়ে যেতে হবে। আরও কত দিন টানতে হবে, তার কোনও ঠিক নেই! সাত দিনের মাথায় মদনের জামিন না-পাওয়ার খবরে ময়দানে উপস্থিত তৃণমূল নেতাদের অনেকেই তাই বিড়বিড় করেছেন“উঃ! আরও কত দিন চালাতে হবে!”

নেত্রীর নির্দেশে ধর্না চালিয়ে যেতে এবং মঞ্চে ভিড় জমিয়ে রাখতে নানা কৌশল নেওয়া হচ্ছে। কখনও জাগলার দিয়ে খেলা দেখাতে হচ্ছে। কখনও কর্মীদের কেউ গান গাইছেন। এ সব দেখে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ ফুটবলার গৌতম সরকারের মন্তব্য, “এ এক অভিনব প্রতিবাদ। গায়করা গানের মাধ্যমে, তাইকোন্ড খেলোয়াড়রা খেলা দেখিয়ে মন্ত্রীর গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।” এ দিন ধর্না মঞ্চ শুরু থেকেই চলছিল দেশাত্মবোধক গান। পাশাপাশি আমজনতার মন ভরাতে আয়োজন করা হয়েছিল ক্রীড়া প্রদর্শনীরও। এ দিন ভিড় জমানোর ভার ছিল মূলত বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুর উপর। তাঁকে সহযোগিতার জন্য শুক্রবার ময়দানে হাজির ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক নির্মল ঘোষ-সহ দলের নেতা-কর্মীরা। সুজিতবাবুর নেতৃত্বেই বিধাননগর, দমদম এবং দক্ষিণ দমদম তো বটেই, পাশাপাশি বরাহনগর এবং কাঁকুড়গাছির বিভিন্ন ক্লাব থেকে লোক আনা হয়েছিল। আজ, শনিবার তৃণমূলের সেবাদলের উপর ভিড় জমানোর ভার পড়েছে বলে দলের এক নেতা জানিয়েছেন। কতটা কী করা যাবে, চিন্তায় রয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় থেকে অলক দাসের মতো ভিড় জমানোর কারিগররা।

মঞ্চের আশপাশে থাকা মদন-ঘনিষ্ঠ নেতাদের এখন একটাই সান্ত্বনা দাদা জেল হেফাজতে গিয়েছেন। এতে স্বস্তির কী আছে জানতে চাইলে এক নেতা বলেন, “মদনদা অনেক স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবেন। ওখানে তো সিবিআইয়ের অফিসাররা দাদার ঘাড়ে সব সময় নিঃশ্বাস ফেলবেন না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madan mitra saradha scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE