Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পরিস্থিতি জটিল, লড়াইয়ের বোধন মমতার

সারদা কেলেঙ্কারি থেকে বর্ধমানে বিস্ফোরণ, ভাঙড় থেকে মাখড়া পরের পর ঘটনায় ব্যতিব্যস্ত তাঁর সরকার। তার উপরে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। সব রকম বিপদ আঁচ করেই কলকাতার পুরভোটের জন্য আগাম প্রস্তুতিতে দলকে নামিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরভোটের দিকে নজর দিতেই সোমবার কলকাতার নেতা, সাংসদ, বিধায়ক এবং মেয়র পারিষদদের নিয়ে কালীঘাটে জরুরি বৈঠক ডাকেন মমতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৮
Share: Save:

সারদা কেলেঙ্কারি থেকে বর্ধমানে বিস্ফোরণ, ভাঙড় থেকে মাখড়া পরের পর ঘটনায় ব্যতিব্যস্ত তাঁর সরকার। তার উপরে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। সব রকম বিপদ আঁচ করেই কলকাতার পুরভোটের জন্য আগাম প্রস্তুতিতে দলকে নামিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পুরভোটের দিকে নজর দিতেই সোমবার কলকাতার নেতা, সাংসদ, বিধায়ক এবং মেয়র পারিষদদের নিয়ে কালীঘাটে জরুরি বৈঠক ডাকেন মমতা। বৈঠকে তিনি দলের নেতা ও পুর-প্রতিনিধিদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বকেয়া কাজ দ্রুত সেরে ফেলার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, বিরোধীদের ‘কুৎসা’ ও সংবাদমাধ্যমের ‘অপপ্রচারে’র জবাব কী ভাবে দিতে হবে, তা নিয়েও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। দলের ভিতরে-বাইরে জল্পনা উড়িয়ে কিছুটা ভারসাম্য রাখতে চেয়েই কলকাতা পুরভোটের সাংগঠনিক দায়িত্বে রাখা হয়েছে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে। তাঁর সঙ্গেই অবশ্য থাকছেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। যে বৈঠকে এই রূপরেখা ঠিক হয়েছে, সেখানে ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন।

স্বাভাবিক নিয়মে কলকাতায় পুরভোট হওয়ার কথা আগামী বছর মে-জুন মাসে। কিন্তু নভেম্বরের গোড়ায় তৃণমূল নেত্রী তড়িঘড়ি প্রস্তুতি বৈঠক ডাকায় পুরভোট এগোনোর সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা গতি পেয়েছে। বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় দলনেত্রীর কাছে জানতেও চান, শহরে পুরভোট কি এগোচ্ছে? মমতা জবাব দেন, সংবাদপত্রের খবরে কান না দিতে! দলের একাংশের মতে, আগামী বছর জানুুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই পুরভোট সারতে চান মমতা। কারণ, সময় যত গড়াবে, ভাঙড় বা মাখড়ার মতো আরও ঘটনা ঘটলে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে বিজেপি-সহ বিরোধীরা। তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভোট সারতে চেয়ে আগাম বৈঠকে বসেছেন তৃণমূল নেত্রী।

এই প্রশ্নে শাসক দলেই ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, আগামী বছরের গোড়াতেই কলকাতায় পুরভোট করা কার্যত অসম্ভব। কলকাতার কোন ওয়ার্ড কাদের জন্য সংরক্ষিত হবে, তার তালিকা সম্বলিত সীমানা পুনর্বিন্যাসের ঘোষণা হওয়ার কথাজানুয়ারির শেষে দিকে। তার আগে প্রার্থী তালিকা ঠিক করা সম্ভব নয়। সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হওয়ার কথা ৫ জানুয়ারি। জানুয়ারিতে ভোট করতে গেলে ভোটার তালিকা তৈরির জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে। এত কম সময়ে তা করা যাবে কি না, সংশয় আছে তৃণমূলের মধ্যেই।

তৃণমূল নেত্রী অবশ্য চাইছেন, ভোট যখনই হোক, প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক না রাখতে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, বিজেপি-র অশনি সঙ্কেতই দলনেত্রীকে বাধ্য করেছে আগাম প্রস্তুতি নিতে। বৈঠকে এ দিন দলনেত্রীর বক্তব্যেও সেই বিপদের গন্ধ পেয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকেই। লোকসভা ভোটের নিরিখে কলকাতার ১৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৬টি ওয়ার্ডে এগিয়ে বিজেপি। আরও ৪০টিরও বেশি ওয়ার্ডে তারা দ্বিতীয় স্থানে। পুরসভার মেয়র পারিষদ, বরো কমিটির চেয়ারম্যানদের কাছে এ দিন মমতা জানতে চান, শহরে বিজেপির ভোট বাড়ল কেন? ধমকের সুরে তিনি পুর-নেতাদের বলেন, এলাকার কাউন্সিলর, বরো চেয়ারম্যানরা কি ঘুমোচ্ছিলেন? বৈঠকে অন্য নেতারা কেউ অবশ্য মুখ খোলেননি। তবে দলের মধ্যেই একাংশের প্রশ্ন, বিজেপি-র বিপদ যে বাড়ছে, সেটা বুঝতে তৃণমূল নেত্রীরই বা এত সময় লাগল কেন?

বিজেপি-কে এখন তৃণমূলের গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে এ দিনই তমলুকে এক দলীয় সভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “শুধু বিরোধীদের উপরে আক্রমণই নয়, নিজেদের মধ্যেই মারামারিতে তৃণমূলের গণভিত্তি ক্ষয় হচ্ছে। এখন বিজেপি’র সঙ্গে লড়াই লড়াই খেলা করছেন উনি (মুখ্যমন্ত্রী)!” তাঁর আরও মন্তব্য, “একটি দল (বিজেপি) অন্য এক পক্ষকে ধরতে চাইছে। দুই দলের প্রধান বিরোধী পক্ষ হচ্ছে বামফ্রন্ট।” এ দিনের বৈঠকে মমতার পাল্টা অভিযোগ, বিজেপি-কে মদত দিচ্ছে সিপিএম। শহরের যে সব ওয়ার্ড তৃণমূলের দখলে নেই, সেখানে দলের স্থানীয় ব্লক সভাপতিদের সক্রিয় হতে বলেছেন তিনি। পাশের ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরদেরও এই ব্যাপারে বাড়তি দায়িত্ব নিতে বলেছেন মমতা।

দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জবাব ও তাঁর সরকারের সাফল্যের কথা প্রচারেও গুরুত্ব দেন মমতা। তৃণমূল সরকারের সাফল্য এবং সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় সরকার ও দলের বক্তব্য জানাতে মমতা একটি পুস্তিকা তৈরির দায়িত্ব দেন দলের মহাসচিব পার্থবাবু ও প্রবীণ সাংসদ সৌগতবাবুকে। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, “বিরোধী দলগুলি বা সংবাদমাধ্যম যতই অপপ্রচার করুক, জনসংযোগ থাকলে মানুষই কুৎসার জবাব দেবে!” বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে দলের প্রতিনিধিত্ব করতে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, পরিষদীয় সচিব তাপস রায় ও বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেছেছেন মমতা। এঁরা টিভি চ্যানেলে গিয়ে কোন বিষয়ে কী বলবেন, তা স্থির করার দায়িত্ব মমতা দেন দলের চার শীর্ষ নেতা পার্থবাবু, মুকুলবাবু, রাজ্য সভাপতি সুব্রতবাবু ও প্রবীণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE