উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে তাদের ‘নেচার রিসর্ট’ আছে ১৬টি। সেগুলি পর্যটকদের ভাড়া দিয়ে বছরে লাভ হয় ১০ লক্ষ টাকা। এ বার লাভের অঙ্ক এক লাফে অনেকটা বাড়াতে নিজস্ব রিসর্ট ভাড়া দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি বাছাই করা বেসরকারি লজ-রিসর্টের ‘বুকিং এজেন্ট’ হিসেবেও কাজ করবে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম। এতে লাভ বাড়বে বাড়তিলগ্নি না-করেই। পুজোয় এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে বলে নিগম সূত্রের খবর।
নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, বেসরকারি রিসর্টের বুকিংয়ে নিগম পাবে ভাড়ার অঙ্কের ৩০%। বাকি ৭০% পাবেন লজ বা রিসর্টের মালিক। এই ব্যবস্থা চালু হলে বন উন্নয়ন নিগমের অফিস ও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা নিগমের বুকিং কেন্দ্রগুলিতে গিয়ে কিংবা নিগমের ওয়েবসাইটে ঢুকে অনলাইনে কয়েকটি বেসরকারি রিসর্টেও বুকিংয়ের সুবিধে পাবেন পর্যটকেরা।
১৯৭৪ সালে কাজ শুরু করলেও নিগম মূলত নব্বইয়ের দশক থেকেই পরিবেশ-বান্ধব পর্যটন প্রসারে নামে। তখন থেকে নিগমের অধীন বাংলোগুলিকে নেচার রিসর্টের চেহারা দিয়ে খুলে দেওয়া হয় পর্যটকদের জন্য। এখন নিগমের ১৬টি রিসর্টের মধ্যে দার্জিলিং ও ডুয়ার্সে রয়েছে ১২টি আর বাকি চারটি দক্ষিণবঙ্গে।
পর্যটকেরা সরাসরি বেসরকারি রিসর্টের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বা ভ্রমণ সংস্থার মাধ্যমে বুকিং করলে অনেক ক্ষেত্রেই অন্তত ১০% ছাড় পান। কয়েকটি রিসর্টের ক্ষেত্রে ভরা মরসুমেও তার ব্যতিক্রম হয় না। অথচ নিগমের মাধ্যমে বুকিং হলে ওই ছাড় পাওয়ার কোনও সুযোগই নেই। তা হলে নিগমের মাধ্যমে বেসরকারি রিসর্ট বুকিংয়ে পর্যটকের লাভ কী?
নিগমের বক্তব্য, প্রথমত, তাদের মাধ্যমে বুকিং হলে পর্যটকেরা এক ছাদের তলায় হাজির হয়ে বা একটি মাত্র সংস্থার মাধ্যমে ভ্রমণ-পরিকল্পনা করার সুযোগ পাবেন। বুকিংয়ের জন্য পর্যটকদের নানা জায়গায় ঘুরতে বা যোগাযোগ করতে হবে না। দ্বিতীয়ত, নিগমের রিসর্টগুলির ব্যবস্থাপনা ও পরিষেবার মান নিয়ে পর্যটকেরা মোটামুটি সন্তুষ্ট। বুকিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করার আগে নিগম বেসরকারি রিসর্টেরও মান খতিয়ে দেখবে এবং নজরদারি চালাবে। অর্থাৎ বেসরকারি রিসর্টগুলির মানের ব্যাপারে পর্যটকেরা নতুন ব্যবস্থায় নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন বলে নিগমের দাবি।
অনেক সময়েই দেখা যায়, ব্যক্তিগত ভাবে পরিচিত ও নামী ভ্রমণ সংস্থা বেসরকারি রিসর্ট বুকিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন এবং ওয়েবসাইটও জানিয়েছে, রিসর্টের চেহারা মনোরম। অথচ পর্যটকেরা গিয়ে দেখেন, শৌচাগারের গিজারে জল গরম হয় না। আয়না নেই। পরিষেবা পেতে হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হচ্ছে। নিগমের আশ্বাস, ‘বুকিং এজেন্ট’ হিসেবে তাদের নাম যে-সব বেসরকারি রিসর্টের সঙ্গে জড়াবে, সেখানে এমন সমস্যা হবে না।
এক নিগম-কর্তা জানান, অনেক সময় পর্যটকেরা লাভায় নিগমের রিসর্ট ‘বুক’ করেন। একই সঙ্গে লাভার অদূরে রিশপে গিয়ে থাকতে হলে তাঁদের বেসরকারি রিসর্টের মালিক বা তাঁদের কোনও এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। এমন সমস্যা হয় অনেক পর্যটন ক্ষেত্রেই। নতুন ব্যবস্থায় সেটা আর হবে না। নিগমের আশা, বুকিংয়ের ঝক্কি কমে গেলে এবং পরিষেবার ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা পেলে পর্যটকদের একটা বড় অংশই ছাড় না-পাওয়ার বিষয়টি আর মোটেই মাথায় রাখবেন না।
উত্তরবঙ্গের ভ্রমণ ব্যবস্থাপক সম্রাট সান্যাল বলেন, “নিগমের এই সিদ্ধান্ত খুবই ভাল। তবে যে-সব বেসরকারি রিসর্ট নিগমের তালিকায় ঠাঁই পাবে, তাদের পরিষেবার মান ভাল ভাবে যাচাই করে নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।” ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সম্পাদক এবং সুন্দরবন হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মসমিতির সদস্য প্রবীর সিংহরায়ও বলেন, “দেরিতে হলেও খুব ভাল সিদ্ধান্ত। এতে পর্যটন ব্যবসায়ী ও পর্যটক উভয়েরই সুবিধে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy