Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রাজ্যে এ বার কৃষি সরঞ্জাম ব্যাঙ্ক, ভাড়ায় যন্ত্র পাবেন ক্ষুদ্র চাষিরা

চাষের কাজে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের ট্র্যাক্টর, পাওয়ার টিলারের মতো কৃষি সরঞ্জাম ব্যবহারে উত্‌সাহিত করতে ওই সব সরঞ্জামের ‘ব্যাঙ্ক’ চালু করছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের কৃষকদের সিংহভাগই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক। তাঁদের চাষের জমি যেমন ছোট, তেমনই আধুনিক সরঞ্জাম কিনে চাষের কাজে ব্যবহারের আর্থিক ক্ষমতাও নেই বললেই চলে। কায়িক শ্রমই কৃষিকাজের মূল উপাদান হওয়ার ফলে এ রাজ্যে কৃষি-উত্‌পাদন প্রত্যাশা ছুঁতে পারছে না।

সুপ্রকাশ চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৪
Share: Save:

চাষের কাজে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের ট্র্যাক্টর, পাওয়ার টিলারের মতো কৃষি সরঞ্জাম ব্যবহারে উত্‌সাহিত করতে ওই সব সরঞ্জামের ‘ব্যাঙ্ক’ চালু করছে রাজ্য সরকার।

রাজ্যের কৃষকদের সিংহভাগই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক। তাঁদের চাষের জমি যেমন ছোট, তেমনই আধুনিক সরঞ্জাম কিনে চাষের কাজে ব্যবহারের আর্থিক ক্ষমতাও নেই বললেই চলে। কায়িক শ্রমই কৃষিকাজের মূল উপাদান হওয়ার ফলে এ রাজ্যে কৃষি-উত্‌পাদন প্রত্যাশা ছুঁতে পারছে না।

কী বিশেষত্ব রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পের? কৃষি দফতরের বক্তব্য, নতুন প্রকল্পে এই প্রথম জেলায় জেলায় মূলত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের ব্যবহারের জন্য বৃহত্‌ এবং ব্যয়সাপেক্ষ বিভিন্ন কৃষি সরঞ্জামের একটি করে ব্যাঙ্ক খোলা হবে। ওই ব্যাঙ্ক খুলতে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কয়েক দিনের ইচ্ছাপত্র চাওয়া হবে। রাজ্য মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যে এই প্রকল্প অনুমোদন করেছে।

ওই সব ব্যাঙ্কে ট্র্যাক্টর, পাওয়ার টিলার, রোটাভেটর, কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর, ড্রাম সিডারের মতো কৃষি সরঞ্জাম মজুত থাকবে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা নিজেদের জেলার ব্যাঙ্ক থেকে প্রয়োজন মতো সরঞ্জাম দৈনিক হারে ভাড়ায় অথবা লিজে নিতে পারবেন। কোনও একটি চাষের মরসুমের জন্য যে কোনও ধরনের কৃষি সরঞ্জাম এক বা একাধিক কৃষক যৌথ ভাবে ভাড়ায় নিতে পারবেন।

কোন ধরনের কৃষি সরঞ্জাম নিতে কত ভাড়া দিতে হবে তা ব্যাঙ্কের কর্ণধারেরাই ঠিক করবেন। তবে জেলায় জেলায় কৃষি সরঞ্জাম ব্যাঙ্ক খোলায় উত্‌সাহ দিতে সরকার প্রতিটি ব্যাঙ্কের জন্য ১০ লক্ষ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ, অর্থাত্‌ সর্বাধিক ২৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেবে। তার বাইরে বাণিজ্যিক, আঞ্চলিক বা সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ মিলবে। কৃষি সরঞ্জাম ব্যাঙ্ক খোলার জন্য জেলাওয়ারি যে আবেদন জমা পড়বে, সেগুলি পরীক্ষা করে দেখবে জেলাশাসকের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি।

কৃষি দফতরের মতে, পশ্চিমবঙ্গে কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে বছর দুয়েক আগে একটি প্রকল্প চালু হয়েছিল। ছোট ছোট কৃষি সরঞ্জাম কেনার জন্য ওই প্রকল্পে কৃষকদের মাথাপিছু ১০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভর্তুকির সংস্থান করা হয়। কিন্তু তাতেও রাজ্যে চাষের কাজে হেক্টর পিছু যন্ত্রের ব্যবহারের হার আশানুরূপ বাড়েনি। সে জন্যই এ বার আরও দামী ও বাড়তি ক্ষমতাসম্পন্ন সরঞ্জাম ব্যবহারে উত্‌সাহ দিতে ব্যাঙ্ক চালু করার কথা ভাবা হয়েছে। এই প্রকল্প সফল হলে রাজ্যে খাদ্য উত্‌পাদন অন্তত ৩০ শতাংশ বাড়বে বলে কৃষি দফতরের বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

কৃষি দফতরের মতে, কৃষক পরিবারগুলির নয়া প্রজন্ম ক্রমশ চাষের কাজে উত্‌সাহ হারাচ্ছে। মাঠে কাজ করার লোকের অভাব তো রয়েইছে, এমনকী লাঙল টানার জন্য মহিষ বা বলদেরও অভাব। ওই অবস্থায় ফসল ফলানোর জন্য ভাড়ায় বা লিজে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম মিললে বাংলার কৃষকের চাষ বাঁচবে, বাড়বে খাদ্যের জোগান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE