শেখ ইব্রাহিম (বাঁ দিকে), তাপস সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।
জেলায় চমকপ্রদ ফলের আশা কোনও মহলেই নেই। তবু লোকসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুরে ঝুঁকি নিল না সিপিএম। লক্ষ্মণ-কাণ্ডের জেরে জেলার দুই আসনে অনেক ভেবেচিন্তে প্রার্থী দিতে হল তাদের।
কাঁথি ও তমলুক আসনে পিতা-পুত্র শিশির ও শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এ বার নতুন প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। কাঁথিতে তাপস সিংহের এ বারই প্রথম নির্বাচনী রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ। তমলুকের শেখ ইব্রাহিম আলি এখন পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। কিন্তু বড় নির্বাচনে লড়াই এই প্রথম। জেলায় গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের আঁচ থেকে দুই আসনকে দূরে রাখতে চেয়েই নবাগত এমন দু’জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএম এখন আড়াআড়ি দুই শিবিরে বিভক্ত। এক দিকে তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ তথা এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা লক্ষ্মণ শেঠের অনুগামীরা। অন্য দিকে তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী। মামলায় কোণঠাসা হয়ে লক্ষ্মণবাবু জেলা ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পরে জেলা সিপিএম নেতৃত্বের তরফে ওই দুই আসনের জন্য প্রাথমিক ভাবে যাঁদের নাম বাছা হয়েছিল, তাঁরা কেউই লক্ষ্মণ-অনুগামী বলে পরিচিত নন। কিন্তু এরই মধ্যে তমলুকে লক্ষ্মণ-অনুগামীদের হাতে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তিন সদস্যের হেনস্থার ঘটনা এবং তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় তদন্ত প্রক্রিয়ার জেরে আলিমুদ্দিনের উদ্দেশে প্রাক্তন সাংসদের বিষোদগার অন্য রকম ভাবতে বাধ্য করেছে সিপিএম নেতৃত্বকে। প্রথম পছন্দ বদলে বেছে নিতে হয়েছে এমন প্রার্থীদের, যাঁরা জেলায় বিবদমান দুই শিবিরেরই সহযোগিতা পেতে পারেন।
তমলুক কোর্ট চত্বরে লক্ষ্মণ শেঠ। —ফাইল চিত্র।
সিপিএম সূত্রের খবর, তমলুক কেন্দ্রের জন্য প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাক্তন এক সভাধিপতির নাম। কাঁথি কেন্দ্রে নাম ছিল রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রীর। কিন্তু লক্ষ্মণ-কাণ্ডের পরে জেলায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে তমলুকের জন্য জেলারই এক প্রাক্তন বিধায়কের নাম বেছে নেওয়া হয়। তাতেও বিপত্তি! প্রার্থী তালিকা ঘোষণার দু’দিন আগে ওই নেতা দলের রাজ্য নেতৃত্বকে জানান, তিনি এখন ভোটে দাঁড়াতে আগ্রহী নন। জেলার দলীয় সমীকরণ বিবেচনা করেই তাঁর এমন আর্জি বলে সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত। এর পরেই ঠিক করা হয়, এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি ইব্রাহিমকে লক্ষ্মণবাবুর পুরনো আসনে দাঁড় করানো হবে। আর কাঁথি থেকে লড়বেন প্রাক্তন সর্বভারতীয় যুব নেতা তাপসবাবু। বামফ্রন্টের এ বারের প্রার্থী তালিকায় ইব্রাহিমই কনিষ্ঠতম।
দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “তমলুকে যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে, তাঁকে নিয়ে দলের কোনও অংশেরই কোনও সমস্যা হবে না। পঞ্চায়েত ভোটের আগে ওই ছাত্র-নেতা তৃণমূলের হাতে আক্রান্তও হয়েছিলেন। তাঁর হয়ে গোটা দল ঐক্যবদ্ধ ভাবেই ভোটের ময়দানে ঝাঁপাতে পারবে।” তাপসবাবুও দিল্লির রাজনীতিতে চলে যাওয়ার আগে অবিভক্ত জেলায় যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের সম্পাদক ছিলেন। তাঁর পুরনো পরিচিতিও কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। সিপিএমের এক রাজ্য নেতার কথায়, “জেলায় সব সমস্যা মিটে গিয়েছে, এমন নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু মেদিনীপুরে এর আগেও নিজেদের মধ্যে যা-ই সমস্যা থাক, ভোটের বাক্সে সবাই এককাট্টা হয়ে সমর্থন দিয়েছেন। এ বারও তা-ই হবে আশা করি।”
দু’টি আসনেই সিপিএমের লড়াই অবশ্য একেবারে শূন্য থেকে শুরু! নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের পরে গত বার দু’টি লো কসভা আসনেই বিপুল পরাজয় হয়েছিল তাদের। বিধানসভা ভোটেও জেলায় একেবারে সাফ হয়ে যেতে হয়েছে! কয়েক মাস আগে পঞ্চায়েত ভোটে অবশ্য কিছু এলাকায় তুলনামূলক ভাল ফল হয়েছে বামেদের। তেমনই আবার জিতেও তৃণমূলের কাছে হাতছাড়া হয়েছে হলদিয়া পুরবোর্ড। এমতাবস্থায় দুই নতুন প্রার্থীই মনের জোরে লড়তে নামছেন। দলেরই একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, কাঁথি থেকে লোকসভায় শিশিরবাবু জিতেছিলেন প্রায় ১ লক্ষ ২৯ হাজার ভোটে। দু’বছর পরে বিধানসভা ভোটে প্রবল পরিবর্তনের হাওয়া এবং কংগ্রেস-তৃণমূল জোট থাকা সত্ত্বেও কাঁথি লোকসভা এলাকার সাতটি বিধানসভা আসন ধরে ওই ব্যবধান কমে হয় প্রায় ৮০ হাজার। তা হলে এখন চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাজারে লড়াই দেওয়া যাবে না কেন, এই ভেবেই ময়দানে নামছেন তাপসবাবুরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy