গাজ়ায় মানবিক সাহায্য বহনকারী রাষ্ট্রপুঞ্জের ট্রাক ঢুকতে শুরু করেছে একে একে। তবে ট্রাকচালকেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আদৌ ওষুধ, ময়দা গাজ়ার শিশুদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে কি না, বৃহস্পতিবার তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবিক সংগঠনের মুখপাত্র জেন্স লের্কে। তিনি জানিয়েছেন, গাজ়ায় উপস্থিত সাহায্যকারী সংগঠনগুলি রাষ্ট্রপুঞ্জের সাহায্য গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত ৯০টি ট্রাক গাজ়ায় ঢুকেছে। কিন্তু ট্রাকের জিনিসপত্র নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দিতে সমস্যার মুখে পড়ছেন সাহায্যকারী সংগঠনের সদস্যেরা। ত্রাণ লুটের আশঙ্কা রয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ট্রাকগুলির নিরাপত্তার কোনও বন্দোবস্ত নেই বলে অভিযোগ।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়ায় প্রায় তিন মাস ধরে বাইরে থেকে কোনও ত্রাণ ঢুকতে পারছিল না। ত্রাণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছিল ইজ়রায়েল। প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অবশেষে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পিছু হটেছেন। গাজ়ায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রায় ২০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজ়ায় প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছিল। সেগুলি একে একে ঢুকতে শুরু করেছে। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের মুখপাত্র জানান, মূলত ওষুধপত্র, আটা-ময়দা এবং পুষ্টিকর খাদ্য গাজ়ায় ত্রাণ হিসাবে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ত্রাণবাহী ট্রাকগুলির নিরাপত্তার কোনও বন্দোবস্ত করা হয়নি। যে পথ দিয়ে গাজ়ায় প্রবেশ করছে ওই ট্রাক, সেই পথ একেবারেই নিরাপদ নয়। সেখানে ডাকাতির ভয় আছে। ফলে ওষুধ, খাবারদাবার যে কোনও মুহূর্তে লুট হতে পারে। ইজ়রায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও রাষ্ট্রপুঞ্জের ট্রাকচালক এবং সাহায্যকারী সংগঠনগুলির বোঝাপড়ার সমস্যা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করছেন না বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার প্যালেস্টাইনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে না খেতে পেয়ে গাজ়ায় ২৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ইজ়রায়েলের সঙ্গে প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের যুদ্ধ চলছে বিগত দেড় বছর ধরে। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই যুদ্ধে। নেতানিয়াহু জানিয়ে দিয়েছেন, ইজ়রায়েলের সকল পণবন্দিকে হামাস যদি মুক্ত না করে, যুদ্ধ থামবে না। সেই সঙ্গে গাজ়া থেকে প্যালেস্টাইনিদের অন্য ভূখণ্ডে সরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তিনি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিশর, লিবিয়ার মতো আফ্রিকান দেশগুলিতে এই প্যালেস্টাইনিদের সরানোর পরিকল্পনাও করেছেন বলে নেতানিয়াহুর দাবি। তবে প্যালেস্টাইনিরা এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে যুদ্ধ থামছে না। দিন দিন গাজ়া ও সংলগ্ন এলাকার প্যালেস্টাইনিদের পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে দিন দুয়েক আগে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছিল, গাজ়ায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে শুধু ত্রাণের অভাবে। এর পরেই ইজ়রায়েলের উপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়তে থাকে। অবশেষে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেন নেতানিয়াহু। সেই ত্রাণ কতটা কাজে লাগানো যায়, গাজ়ায় যুদ্ধবিধ্বস্তদের সাহায্য করা যায় কি না, তা ভবিষ্যৎই বলবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের দাবি, তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।