E-Paper

ত্রাণশিবিরে চলল গুলি, গাজ়ায় হত অন্তত ৯ জন

হঠাৎ করে ধৈর্যচ্যুতি ঘটায় ব্যারিকেড ভেঙে ত্রাণের ট্রাকের দিকে ছুটে যান অভুক্ত মানুষ। তার পরেই চলে মুহুর্মুহু গুলি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৫ ০৬:৫৪
প্যালেস্টাইনিদের উপর গুলি চালিয়েছে ইজ়রায়েলি সেনা, অভিযোগ এমনই।

প্যালেস্টাইনিদের উপর গুলি চালিয়েছে ইজ়রায়েলি সেনা, অভিযোগ এমনই। —ফাইল চিত্র।

খাবার ও ত্রাণ নিতে এসে মিলল নির্মম মৃত্যু! অভুক্ত মানুষের উপর চলল গুলি!

ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যখন গাজ়ায় অল্প পরিমাণ খাবার প্রবেশের কথা বলেছিলেন, তখন কে জানত দক্ষিণ রাফার তাল-আস-সুলতান ত্রাণবিতরণ কেন্দ্র পরিণত হবে বধ্যভূমিতে। ইজ়রায়েল সমর্থিত আমেরিকার একটি সংগঠন, ‘গাজ়া হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’-এর তত্ত্বাবধানে ত্রাণ বিলির কথা ছিল মঙ্গলবার। তীব্র গরম উপেক্ষা করে হাজার হাজার ক্ষুধার্ত গাজ়াবাসী ভিড় জমিয়েছিলেন সেখানে। লোহার ব্যারিকেডে ঘেরা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে সেই অপেক্ষা। এক সময় হঠাৎ করে ধৈর্যচ্যুতি ঘটায় ব্যারিকেড ভেঙে ত্রাণের ট্রাকের দিকে ছুটে যান অভুক্ত মানুষ। তার পরেই চলে মুহুর্মুহু গুলি। তীব্র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় নির্বিচারে প্যালেস্টাইনিদের উপর গুলি চালিয়েছে ইজ়রায়েলি সেনা, অভিযোগ এমনই। এমনকি, গুলি চালানো হয়েছে হেলিকপ্টার থেকেও।

গুলি থেকে বাঁচতে প্রাণভয়ে আরও এলোমেলো ছুটতে থাকেন মানুষ। পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার পরে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, “কিছু সময়ের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেও পরে তা সামলানো গিয়েছে।” পাশাপাশি ইজ়রায়েলি সেনার দাবি, স্রেফ সতর্ক করার জন্য শূন্যে গুলি ছোড়া হয়েছিল। পদপিষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়েছে মানুষের।

বুধবার সরকারি গণমাধ্যম জানিয়েছে, মঙ্গলবার অন্তত তিন জনের প্রাণ গিয়েছে গুলিবিদ্ধ হয়ে। গুরুতর জখম ৪৮ জনেরও বেশি। শুধু তাই নয়, আজ ইজ়রায়েলি সেনার গুলিতে প্রাণ গিয়েছে আরও ছ’জনের। নিহতদের নাম সালেম আতা সালেম আবু মুসা, কিফা ওদেহ সুলেইমান আল-সাওয়ারকা, মহম্মদ ইমাদ রমাদান আবদেল হাদি, খলিল আশরফ খলিল মুসা, আশরফ আনওয়ার খলিল মুসা এবং খলিল আনওয়ার আবু মুসা। তাঁরা ত্রাণবিতরণ কেন্দ্রের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছিলেন।

গাজ়ায় কিন্তু সামরিক অভিযান অব্যাহত। বুধবার ভোর থেকে লাগাতার হামলায় প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৪৩ জনের। নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, নিহত হামাস সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মুহাম্মদ সিনাওয়ার। হামাস এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।

মঙ্গলবারের যে সংগঠনের ত্রাণশিবিরে এই ঘটনা তা নিয়ে বিতর্ক ছিল আগে থেকেই। রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এই সংগঠনের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়নি। মানবাধিকার কর্মীদের একাংশের দাবি, ‘গাজ়া হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এমন এক পদ্ধতির যাতে হামাসের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না, রাষ্ট্রপুঞ্জের দীর্ঘসূত্রিতা থাকবে না, দ্রুত সুষ্ঠু ভাবে ত্রাণ পৌঁছে যাবে মানুষের কাছে। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হল না। বরং নির্বিচারে মরতে হল অসহায় মানুষকে। সংবাদমাধ্যম অবশ্য জানিয়েছে, চারটি ত্রাণকেন্দ্র খুলেছে এই সংগঠন। দুটি চালু করা হয়েছে সবে। আরও দুটি দ্রুত চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

এ দিকে বুধবারই যুদ্ধবিরতির সমর্থনে সমাজমাধ্যমে বার্তা দিলেন পোপ চতুর্দশ লিও। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সম্প্রতি ইজ়রায়েলের খোলাখুলি সমালোচনা করেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্ৎজ়। তারপরেই ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন জার্মানির বিদেশমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল। তিনি জানিয়েছেন, বার্লিন ইজ়রায়েলকে অস্ত্র রপ্তানি করবে না। তার কারণ, ওই অস্ত্র মানবিক আইনভঙ্গ করে সাধারণ মানুষের ব্যবহার করা হচ্ছে। আমেরিকার পাশাপাশি জার্মানিও ২০২৩ সালে গাজ়ায় সংঘাতের শুরু থেকেই ইজ়রায়েলকে সমর্থন করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক উল্টো সুরে কূটনীতিকদের দাবি, নাৎসি আমলের অন্যায়ের হেতু ইজ়রায়েলের প্রতি ‘বিশেষ দায়বদ্ধতা’ মেনে চলা জার্মানির এই অবস্থান নজিরবিহীন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

gaza hamas

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy