Advertisement
E-Paper

জুন্টা জমানার চিহ্ন মুছতে নাছোড় সু চি

মন ভাল নেই আউং সান সু চি-র। তবু হাল ছাড়তে নারাজ ১৫ বছর গৃহবন্দি থাকা নেত্রী। আগামী বছর মায়ানমারে নির্বাচন। তাতে তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা যতই ফিকে হয়ে আসুক, শেষ না দেখে ছাড়বেন না বলেই স্থির করেছেন তিনি। তিন দিনের সফরে মায়ানমারে পা রাখা ইস্তক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম এই হাই প্রোফাইল ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকারের জন্য লাগাতার দরবার করে যাচ্ছে ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রতিনিধি দলটি। নিদেনপক্ষে মুখোমুখি বসার সুযোগটুকুও যদি পাওয়া যায়!

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৪

মন ভাল নেই আউং সান সু চি-র। তবু হাল ছাড়তে নারাজ ১৫ বছর গৃহবন্দি থাকা নেত্রী।

আগামী বছর মায়ানমারে নির্বাচন। তাতে তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা যতই ফিকে হয়ে আসুক, শেষ না দেখে ছাড়বেন না বলেই স্থির করেছেন তিনি।

তিন দিনের সফরে মায়ানমারে পা রাখা ইস্তক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম এই হাই প্রোফাইল ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকারের জন্য লাগাতার দরবার করে যাচ্ছে ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রতিনিধি দলটি। নিদেনপক্ষে মুখোমুখি বসার সুযোগটুকুও যদি পাওয়া যায়! ভারতীয় মিশনের ব্যতিব্যস্ত কূটনীতিকদের গড়পড়তা জবাব একটাই। তা হল, আগামী ১৫ দিনে সু চি-র কোনও ‘ডেট’ নেই। মার্কিন এবং ইউরোপের তাবড় কর্তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট-এ ভরে রয়েছে তাঁর আগামী দিনের ডায়েরি। নির্বাচনের সময় যতই এগিয়ে আসছে, বিদেশযাত্রা ও বিদেশি অভ্যাগতদের সঙ্গে বৈঠকের সংখ্যাও বাড়ছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতনীর। চড়ছে তাঁর আন্দোলনও।

ঘটনা হল, মায়ানমারের সংবিধানের দু’টি ধারা সংশোধন না হলে সু চি-র পক্ষে প্রেসিডেন্টের আসনে বসা সম্ভব নয়। তবে এই দেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি এখনও পর্যন্ত এমন যে, ওই সংশোধনের সম্ভাবনাও আদৌ দেখা যাচ্ছে না। এমন একটি প্রাণীও এখানে দেখছি না, যিনি সু চি-র প্রেসিডেন্ট হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তবুও অসম্ভবকে সম্ভব করতে ঘরে এবং বাইরে সমান ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন বিরোধী দলনেত্রী এবং তাঁর দল এনএলডি।

‘বাইরের চেষ্টা’ অর্থাৎ, আমেরিকা-সহ পশ্চিম বিশ্বের কিছু দেশের কোমর বেঁধে নামা, আর মায়ানমারের রাজনৈতিক হেঁসেলে ঢুকে পরা। আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির বৈঠকের কারণে সম্প্রতি এ দেশ ঘুরে গেলেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। গত সপ্তাহে তিনি দীর্ঘ বৈঠক করেছেন সু চি-র সঙ্গে। কেরি জানিয়েছেন, মায়ানমারে উপজাতি এবং ধর্মের ভিত্তিতে সংঘর্ষ বন্ধ করতে, ‘প্রকৃত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে সু চি-র পাশে রয়েছে ওবামা প্রশাসন। বেজিং-এর চোখে চোখ রাখতে মায়ানমার আমেরিকার কাছে লোভনীয় রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। ২০১২ সালে দীর্ঘ সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে সরকার তৈরি হওয়ার পর এই অঞ্চলে কৌশলগত লাভের অঙ্ক কষতে শুরু করেছে আমেরিকা। আর এই কাজে সু চি-কে হরতনের রানির মতো করেই দেখতে চাইছে ওয়াশিংটন।

কিন্তু আপাত ভাবে সামরিক শাসনের অবসান ঘটলেও, এ দেশে এখনও সব কিছুই চলছে সেনার নির্দেশ মেনে। জনবহুল ইয়াঙ্গন থেকে মায়ানমারের কেন্দ্রে এই নেপিদও শহরটি—সবই যেন এখনও সামরিক শাসনের চিহ্ন ধরে রেখেছে। চিনের বিপুল অর্থব্যয়ে ২০০৫ সালে তৈরি হয়েছিল এই শহর। নয়াদিল্লির রাজপথের থেকেও অনেক বেশি চওড়া সব রাস্তাঘাট একেবারে ফাঁকা। দুপুর বেলাও মাঝরাতের মতো নির্জন। শুধু সরকারি অফিস, সামরিক ডেরা, আর ঝাঁ চকচকে কিছু হোটেল ও মল (যে গুলির বেশির ভাগেরই মালিক উচ্চপদস্থ সেনাকর্তারা), প্যাগোডা, পার্লামেন্ট। জনবসতি প্রায় কিছুই নেই। এনএলডি-র এক শীর্ষ পদাধিকারী সান্দার লিউয়েনের মতে, “বাইরের খোলটা বদলেছে কেবল। ভিতরে ভিতরে শাসন কিন্তু প্রায় একই রয়ে গিয়েছে।” আর সে কারণেই সমস্যা গভীর সু চি-র। সংবিধানের যে ধারা দু’টি না বদলানোর জন্য আন্দোলন করছেন তাঁরা, সে গুলি হল - ১) কোনও চার্টার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সামরিক কর্তার ভেটো দেওয়ার অধিকার। ২) কোনও বিদেশির সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক থাকলে দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া যাবে না। সু চি-র প্রয়াত স্বামী ব্রিটিশ। তাঁর দুই পুত্রই ব্রিটিশ নাগরিক।

তবে সু চি আন্দোলন করলেও সম্প্রতি মায়ানমারের পার্লামেন্টের প্রতিনিধিত্বমূলক কমিটি সংবিধান সংশোধন নিয়ে ভোটাভুটি করে স্থিতাবস্থাই বজায় রেখেছে। ৩১ জনের ভিতরে ২৬ জনই সংশোধনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। বলা বাহুল্য ওই ২৬ জনের মধ্যে রয়েছেন পার্লামেন্টে নির্বাচিত সামরিক নেতারাও।

ঘটনা হল, বর্তমানে ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি)-র নেতৃত্বে যে সরকারটি চলছে তাতে সু চি-র দলের কোনও মতামত না থাকলেও, সেনাবাহিনীর রয়েছে। কারণ, এখনও পর্যন্ত মায়ানমার পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ জুড়ে রয়েছেন সেনা ব্রিগেডিয়াররা। মন্ত্রিসভার প্রধান তিনটি আসন—স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা— সামরিক বাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। ২০১২ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এ ভাবেই সুকৌশলে সংবিধান তৈরি করে জুন্টা সরকার।

দু’দিন আগে দেশের শিল্পী, সাহিত্যিকদের সঙ্গে বৈঠকে সু চি বলেছেন, “গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আপনাদের সবার সাহায্য চাইছি। মানুষের সামনে দেশের আসল চেহারাটা তুলে ধরুন।” সংবিধান সংশোধনের পক্ষে দেশের পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের সই সংগ্রহ করেছে তাঁর দল।

তবে আবেগ আর পশ্চিমের সাহায্যে অঙ্কটা বদলানো সম্ভব কি না, এখন সেটাই দেখার।

agni roy suu kyi aung san suu kyi junta regime myanmar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy