জিয়াউর রহমান। ছবি সংগৃহীত।
তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেক্টর কমান্ডারের ভূমিকায় ছিলেন। স্বাধীনতার পরে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ‘বীর উত্তম’ খেতাবে অভিনন্দিত করেছিল তাঁকে, ইতিহাসের পালাবদলে একটা সময়ে যিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন। সেই জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনে ‘বীর উত্তম’ খেতাব কেড়ে নিচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আখ্যা দিয়ে ‘ঘৃণা, নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ’ জানিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি, জিয়াউর রহমানই যে দলের প্রতিষ্ঠাতা।
এর আগে জিয়ার ‘স্বাধীনতা’ পদক ফিরিয়ে নিয়েছে সরকার। কিন্তু বুধবার তাঁর সরকারি খেতাব প্রত্যাহারের ঘোষণা কিছুটা আকস্মিক। শেখ মুজিবের হত্যাকারী শরিফুল হক ডালিম, রাশেদ চৌধুরী, নুর চৌধুরী এবং মোসলেউদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া সরকারি খেতাব প্রত্যাহারের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার রাতে বৈঠকে বসেছিল জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। সেখানে ওই সিদ্ধান্ত পাশ হওয়ার পরে অন্যতম সদস্য প্রাক্তন মন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, “বহাত্তরের সংবিধান যিনি লঙ্ঘন করেছিলেন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার না-করে গুরুত্বপূর্ণ সব সরকারি পদে বসিয়েছিলেন যে জিয়াউর রহমান, তাঁর খেতাব কেন কেড়ে নেওয়া হবে না?” খান দাবি করেন, এই সব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়া মুজিব হত্যাকারীদের সঙ্গে তাঁর যোগসাজশের প্রমাণই দিয়েছিলেন। কাউন্সিলের এক সদস্য বলেন, আইন বিভাগে প্রস্তাবটি পাঠানো হোক। কিন্তু বাকিরা সরাসরি খেতাব কেড়ে নেওয়ার পক্ষেই মত দেন। বুধবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, “এই প্রস্তাবে আইনগত সমস্যা হবে না।” জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বুধবার জিয়ার ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের প্রস্তাব মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে শেখ মুজিবের চার হত্যাকারীর খেতাব বাতিলের প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রক শীঘ্রই তা ঘোষণা করবে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।
শেখ মুজিব ১৯৭৫-এর ১৫ অগস্ট বিদ্রোহী সেনাদের হাতে নিহত হওয়ার পরে সেনা প্রধান হন জেনারেল জিয়া। নানা পালাবদলের পরে ১৯৭৭-এর ২১ এপ্রিল সেনা শাসকের পাশাপাশি দেশের রাষ্ট্রপতিও হন জিয়াউর রহমান। সংবিধান সংশোধন করে নিজের ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেওয়ার পরে ১৯৭৮-এর ৩ জুন একটি সাজানো নির্বাচনে নিজেকে ‘নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি’ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এর তিন মাস পরে রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করে পুরোদস্তুর রাজনীতিতে আসেন জিয়া। তবে ১৯৮১-র ৩০ মে চট্টগ্রামে আর এক সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন তিনি। কিন্তু জনপ্রিয়তার বিচারে বিএনপি শেখ মুজিবের আওয়ামি লিগের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। জিয়ার পত্নী খালেদা জিয়া দু’দফায় প্রধানমন্ত্রী হন নির্বাচনে জিতে। দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড পাওয়া খালেদা এখন জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy