বাংলাদেশে এ বছরও বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ আয়োজিত হচ্ছে না। বুধবার তা জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরে গত বছরও বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের আয়োজন করেনি মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এ বারও তা-ই হতে চলেছে।
প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বিজয় দিবস হিসাবে পালিত হয়। ১৯৭১ সালে এই দিনেই ভারতীয় সেনা এবং বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি ফৌজ। তার পর থেকে প্রতি বছর এই দিনটিকে বিজয় দিবস হিসাবে পালন করে আসছে বাংলাদেশ। শুধুমাত্র করোনাকালে এই অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। তবে গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ঢাকার প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ হয়নি। ইউনূস সরকার জানিয়েছিল, বাংলাদেশ সেনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যস্ত রয়েছে। সেই কারণেই এই কর্মসূচি আয়োজন করা যাচ্ছে না।
এ বার কেন আয়োজন করা যাচ্ছে না, তা নির্দিষ্ট ভাবে জানায়নি অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার ঢাকায় সচিবালয়ে বিজয় দিবসের নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। ওই বৈঠক শেষেই জাহাঙ্গীর জানান, এ বারও ঢাকায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ হচ্ছে না। জেলা বা উপজেলা স্তরেও কুচকাওয়াজ হবে না বলে জানান তিনি। যদিও বিজয় দিবসে অন্য কর্মসূচি আয়োজিত হবে বলে জানিয়েছেন ইউনূসের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
গত বছর বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের পরিবর্তে গোটা বাংলাদেশে ‘বিজয় মেলা’ আয়োজন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এ বছর গত বারের তুলনায় আরও ব্যাপক পরিসরে বিজয় দিবস আয়োজিত হবে বলে দাবি জাহাঙ্গীরের। তিনি বলেন, “আগে যেমন ছিল, এ বারও কর্মসূচি থাকবে। বরং আগের চেয়ে কর্মসূচি বেশি হবে। তবে এ বারও প্যারেড কর্মসূচি হবে না।”
আরও পড়ুন:
বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে গত বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি কর্মসূচিতে বিচ্ছিন্ন অশান্তিরও খবর মিলেছিল। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো সেই সময় জানিয়েছিল, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় বিজয় দিবস অনুষ্ঠানে একটি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছিল। এক আধিকারিককে শারীরিক ভাবে হেনস্থাও করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ঢাকার শহিদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েও জামায়াতের হামলার শিকার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা।
এ বছর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আরও কোণঠাসা। তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম বর্তমানে নিষিদ্ধ রয়েছে বাংলাদেশে। গত বছরের ছাত্রজনতার আন্দোলনের সময়ে গণহত্যার অভিযোগে হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে সে দেশের ট্রাইবুনাল। ফাঁসির সাজাঘোষণা করা হয়েছে তাঁর। রায়ের পরে বাংলাদেশে বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তির অভিযোগ উঠে এসেছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্য, রায় ঘোষণার পরে কোনও অস্থিরতা তৈরি হয়নি।
ইউনূস সরকার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ এ বছরও বন্ধ রাখায় ইতিমধ্যে মুখ খুলছে আওয়ামী লীগ। হাসিনার দল তাদের সমাজমাধ্যম পাতায় লিখেছে, ‘‘পাকিস্তানের পরাজয়ের দিনে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ মেনে নিতে পারছে না ইউনূসের সার্কাসের সঙ্গীরা। বাংলাদেশের জনগণ প্রস্তুত থাকুন, দেশকে আরেকবার শত্রু মুক্ত করতে হবে।’’