জাতীয় সংসদের নির্বাচন আর মাস চারেক পরেই হওয়ার কথা। তার আগে জাতি এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাছে নিঃশর্তে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত)-র আমির শফিকুর রহমান। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কেউ জামায়াতের দ্বারা কোনও কষ্ট পেয়ে থাকলে মাফ চাইছি।’’
তবে বাংলাদেশে মাটিতে নয়, শফিকুর ওই মন্তব্য করেছেন আমেরিকার নিউ ইয়র্কে একটি আলোচনাসভায় বক্তৃতার সময়। তিনি বলেন, ‘‘১৯৪৭ থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের আজ ২২ অক্টোবর রাত ৮টা ১১ মিনিট পর্যন্ত আমাদের দ্বারা যে, যেখানে, যত কষ্ট পেয়েছেন, আমরা বিনা শর্তে তাঁদের কাছে মাফ চাই। এটি গোটা জাতি হলেও চাই, ব্যক্তি হলেও চাই। কোনও অসুবিধা নেই।’’ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে জামাত-প্রধানের এই মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন অনেকেই।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামাত নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে পাকিস্তান সেনার পক্ষে কাজ করেছিলেন। রাজাকার ঘাতকবাহিনীর নেতা হিসাবে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে দলের একাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। হাসিনা জমানায় কয়েক জনের সাজাও হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট জামাতের নির্বাচনী প্রতীক বাতিল করেছিল। গত ৩০ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সরকার ‘মৌলবাদ ও স্বাধীনতা বিরোধী’ জামাত এবং তাদের শাখা সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
কিন্তু ৫ অগস্ট পালাবদলের পরে বদলে যায় পরিস্থিতি। এখন তারা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ‘অন্যতম চালিকাশক্তি’ হিসাবে পরিচিত। সম্প্রতি ঢাকা, জাহাঙ্গিরনগর, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবির। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল বিএনপির ছাত্র সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল’ পর্যুদস্ত হয়েছে জামাতের ছাত্র সংগঠনের কাছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্রমশ শক্তিবৃদ্ধি হলেও এখনও পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতার জন্য দলগত ভাবে দুঃখপ্রকাশ করেনি জামাত।